যুদ্ধ-বন্যা: ব্যাংক ঋণ পরিশোধে ছাড়

মহামারীর পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং সাম্প্রতিক বন্যার কারণে ঋণ পরিশোধে আবারও ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 June 2022, 07:36 AM
Updated : 23 June 2022, 08:11 AM

চলতি বছরের এপ্রিলের পর থেকে পরের ৮ মাসের ঋণের কিস্তির ৫০ থেকে ৭৫ শতাংশ পরিশোধ করলেই কোনো ‘বৃহৎ শিল্প’ প্রতিষ্ঠানকে আর খেলাপি ঘোষণা করা হবে না।

আর খেলাপির খাতায় নাম তুলতে না চাইলে এসএমই প্রতিষ্ঠানগুলোকে অন্তত ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ কিস্তি পরিশোধ করতে হবে।

তবে এই ছাড় সুবিধা শুধু নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করে আসা উদ্যোক্তারা পাবেন। গত এপ্রিল পর্যন্ত যারা খেলাপি না হয়ে কিস্তি দিয়ে আসছেন, কেবল তাদের ক্ষেত্রে এ সুবিধা প্রযোজ্য হবে।

বুধবার এ বিষয়ে একটি সার্কুলার ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কোভিড-১৯ এ বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারে বেশ কিছু প্রণোদনা ও নীতি সুবিধা দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। খেলাপি ঋণ পুনর্গঠন, পুনঃতফসিল, আংশিক এককালীন পরিশোধের মত ছাড় ছিল সেখানে। গত বছরের জন্য নির্ধারিত কিস্তির ন্যূনতম ১৫ শতাংশ জমা দিয়েও খেলাপি হওয়া এড়াতে পেরেছেন ব্যবসায়ীরা।

এরপরও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের নেতারা সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক করেন। তাদের দাবি ছিল, প্রণোদনা হিসেবে পাওয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময় বাড়িয়ে দিতে হবে। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত কোনো ঋণকে খেলাপি শ্রেণিভুক্ত করা যাবে না।

ব্যবসায়ীদের দাবির পর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়েছিল, ব্যাংকারদের মতামত নিয়ে ‘যৌক্তিক’ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এই প্রেক্ষাপটে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তরফ থেকে ছাড়ের ঘোষণা এল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, “কোভিড-১৯ এর দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব ও সাম্প্রতিক সময়ে পুনরায় সংক্রমণ বৃদ্ধি, দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সৃষ্ট বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

“বহিঃবিশ্বে সাম্প্রতিক যুদ্ধাবস্থার কারণে আর্ন্তজাতিক বাজারে কাঁচামালসহ বিভিন্ন উপকরণের মূল্য ও পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ঋণগ্রহীতাগণ তাদের গৃহীত ঋণের বিপরীতে প্রদেয় কিস্তির সম্পূর্ণ অংশ পরিশোধে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন মর্মে বাংলাদেশ ব্যাংকের গোচরীভূত হয়েছে।”

সে কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ‘গতিশীলতা বজায় রাখা এবং বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের গতিধারা স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে’ উদ্যোক্তাদের ঋণ পরিশোধে নতুন এই নিয়ম করে দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সার্কুলারে বলা হয়, বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানের নেওয়া যেসব মেয়াদী ঋণ ১ এপ্রিল পর্যন্ত ‘অশ্রেণিকৃত’ অবস্থায় রয়েছে, তার বিপরীতে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত সময়ের কিস্তির ৫০ শতাংশ পরিশোধ করা হলেই সেই শিল্প প্রতিষ্ঠানকে আর খেলাপি দেখানো যাবে না।

আর জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে যে কিস্তি দেওয়ার কথা, তার ৬০ শতাংশ এবং অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ে নির্ধারিত কিস্তির ৭৫ শতাংশ পরিশোধ করলেই খেলাপির তালিকায় নাম উঠবে না।

এছাড়া যে কোনো প্রান্তিকের ঋণের কিস্তি ওই প্রান্তিকের শেষ কার্যদিবস পর্যন্ত পরিশোধ করা যাবে।

‘বৃহৎ শিল্প’ হিসেবে এই সুবিধা কারা পাওয়ার যোগ্য হবে, তা ২০১৬ জাতীয় শিল্প নীতির সংজ্ঞা অনুযায়ী নির্ধারণ করার কথা বলা হয়েছে সার্কুলারে।

আর এসএমএই প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে ঋণের কিস্তি পরিশোধে ‘বৃহৎ শিল্প’ প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বেশি ছাড় দেওয়া হয়েছে।

সিএমএসএমই ও কৃষি খাতের যে উদ্যোক্তারা ১ এপ্রিল পর্যন্ত খেলাপি না হয়ে নিয়মিত কিস্তি শোধ করে এসেছেন, তারা এপ্রিল-জুন সময়ের কিস্তির ২৫ শতাংশ পরিশোধ করলেই খেলাপি হওয়া এড়াতে পারবেন।

খেলাপির তালিকায় নাম তুলতে না চাইলে তাদের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ের কিস্তির ৩০ শতাংশ এবং অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ের কিস্তির ৪০ শতাংশ জমা দিলেই চলবে। প্রান্তিকের শেষ কার্যদিবস পর্যন্ত পরিশোধ করা যাবে।

তলবি ঋণের ক্ষেত্রে জুন-ডিসেম্বর সময়ের মধ্যে তিনটি সমান ত্রৈমাসিক কিস্তিতে কিস্তি শোধ দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে, সেই সুযোগ নিলেই আর খেলাপি হবে না।

দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্যা কবলিত জেলাগুলোতে (সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ, শেরপুর, জামালপুর, রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের চিহ্নিত বন্যাকবলিত জেলা) কিছু বাড়তি সুবিধা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এসব এলাকার সিএমএসএমই প্রতিষ্ঠানগুলো গত এপ্রিল থেকে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রদেয় কিস্তির ২৫ শতাংশ পরিশোধ করলে ঋণটিকে খেলাপি দেখাবে না ব্যাংক।

আর কৃষি ঋণের ক্ষেত্রে এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের নির্ধারিত কিস্তি পরিশোধিত না করলেও ওই ঋণকে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা হবে না। গত ১ এপ্রিল পর্যন্ত যারা খেলাপীর তালিকায় যায়নি, শুধু তারাই এ সুবিধা পাবে।

কিস্তির অবশিষ্ট অংশ ঋণের পূর্ব নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার পরের এক বছরের মধ্যে সমান কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে। আবার ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে এক বছরের মধ্যেই কিস্তির পরিমাণ নির্ধারণ করা যাবে।