‘পুরস্কার’ না দিয়ে এত অর্থপাচার কীভাবে, খোঁজার তাগিদ সানেমের

অর্থপাচারকারীদের ‘অন্যায়ভাবে’ সুবিধা দিয়ে টাকা ফিরিয়ে আনার ‘পুরস্কার’ দেওয়ার বদলে বিপুল অর্থ কীভাবে বিদেশে পাচার হল তা খুঁজে বের করার তাগিদ দিয়েছে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 June 2022, 01:07 PM
Updated : 13 June 2022, 01:07 PM

সোমবার বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় সরকারের প্রতি এ আহ্বান জানান।

রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টারের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে একই সঙ্গে বাজেটে ‘ন্যূনতম’ কর সুবিধা দিয়ে বিদেশে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব বাতিলের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে বিদেশে থাকা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ এবং নগদ টাকা যথাক্রমে ১৫, ১০ ও ৭ শতাংশ কর দিয়ে রিটার্নে দেখানোর প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল।

এরপর এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা আসছে অর্থনীতিবিদসহ বিভিন্ন মহল থেকে। সানেম নির্বাহী পরিচালকও এ বিধান না করার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, “যারা দেশ থেকে অর্থপাচার করেছেন, তারা দেশের আইন অমান্য করে অন্যায় করেছেন। এখন সেই আইন অমান্যকারীদের আবার পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার সুযোগ দিয়ে আরেকটি অন্যায় কাজ সংগঠিত হবে।“

এ অন্যায় ‘প্রশ্রয় দেওয়ার’ ফলে পাচারকারীরা আরও উৎসাহিত হবেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ”এত বিপুল অর্থ কীভাবে বিদেশে পাচার হল সেটা খুঁজে বের করার চেষ্টা না করে উল্টো ন্যূনতম কর সুবিধা দিয়ে আইন ভাঙার পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিচ্ছে।

“আমরা এ অন্যায় প্রস্তাব বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। পাচার হওয়া অর্থ নামমাত্র কর দিয়ে ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব কোনোভাবেই অনুমোদন দেওয়া উচিত নয়।“

বিদেশে অর্থপাচারের সঙ্গে অনেক ব্যবসায়ীও জড়িত মন্তব্য করে সেলিম রায়হান বলেন, পাচার হল কীভাবে তা খুঁজে বের করুন। এরপর পাচারকারীদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসেন।

এভাবে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়ার মত অবস্থা আমাদের অর্থনীতিতে আসেনি, মনে করেন তিনি।

সানেমের বাজেট পর্যালোচনায় বলা হয়, সরকার পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করলেও তা বাজেটে ‘অনুস্মরণ’ করে না।

অর্থনীতির অধ্যাপক সেলিম বলেন, “অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অর্থনৈতিক নীতি এবং কৌশলের কথা বলা হলেও বিশেষ করে তিনটি বড় খাত শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বাজেট অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার ধারে কাছেও যাচ্ছে না।”

সামগ্রিকভাবে দেশের চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন বাজেটে এই তিন খাতের বরাদ্দ বেশিহারে বাড়ানোর প্রয়োজন থাকলেও মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় কমে গেছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

প্রস্তাবিত বাজেটে কোভিড ১৯ মহামারী ও ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে দেশে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তা মানুষের জীবনযাত্রায় কী ধরণের ঝুঁকি বা অসহায়ত্ব সৃষ্টি করেছে সে বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, সরকার এখনও ২০১৫ সালের খানা আয় ব্যয় জরিপের ওপর ভিত্তি করে ২০ দশমিক ৫ শতাংশ দারিদ্র্য হারের তথ্য দিয়ে যাচ্ছে। অথচ কোভিড পরবর্তীতে নতুন করে বিশাল একটি জনগোষ্ঠী যে দরিদ্র হয়েছে তা নিরুপণের কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

তিনি বলেন, “আমরা যদি আগে সমস্যা চিহ্নিত করতে না পারি তাহলে আমরা সমাধানের জন্য সঠিক পথে হাঁটতে পারব না।”

ড. সেলিম বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার বিভিন্ন আমদানি শুল্ক ছাড় দিয়ে সম্প্রতি কিছু সিদ্ধান্ত নিলেও বাজেটে দেশীয় পণ্যের দাম কমানোর কোনও উদ্যোগ দেখিনি।

বাজেটে করপোরেট করহার কমানোর সুফল কোনও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা পাবে না জানিয়ে সানেমের নির্বাহী পরিচালক বলেন, “কোভিড-১৯ মহামারীর সময় অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তাদের জন্য কোনও উদ্যোগ নেই বাজেটে।“

এসময় তিনি করমুক্ত আয়সীমা ৫০ হাজার টাকা বাড়িয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকায় উন্নীত করার পরামর্শ দেন।

মূল প্রবন্ধে সানেমের গবেষণা পরিচালক সায়মা হক বিদিশা বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬০ শতাংশে ধরে রাখার যে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে তা কীভাবে করা হবে তা বলা হয়নি।

তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতিতে কিছুটা প্রভাব রাখতে পারে মুদ্রানীতি। অথচ সম্প্রতি রেপোর সুদহার শুন্য দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে, যা মূল্যস্ফীতি আরও বাড়াতে ভূমিকা রাখবে।

করপোরেট করহার কমিয়ে সাধারণভাবে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও জিডিপির ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সেটা কিসের ভিত্তিতে সুনির্দিষ্ট করা উচিত।

যেমন, কোন খাতে কত বিনিয়োগ হলে কত কর্মসংস্থান বা প্রবৃদ্ধি কী পরিমাণ হবে তা উল্লেখ করা হয়নি।

ড. সায়মা বৈষম্য কমাতে প্রত্যক্ষ করহার বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ কর আদায় হয় মাত্র ৩৪ শতাংশ।

আরও পড়ুন: