পুষ্টিকর খাদ্য বাড়িয়ে চালে নির্ভরতা কমাতে চান কৃষিমন্ত্রী

পুষ্টিকর খাবারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে চালের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনতে চায় সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 June 2022, 04:51 PM
Updated : 10 June 2022, 04:56 PM

শুক্রবার বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক সরকারের এমন পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।

দেশে চাল ও গমসহ কিছু খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায় খাদ্যে কিছুটা সংকট দেখা গেলেও কিংবা শহরের সীমিত আয়ের মানুষ বেশ কষ্টে থাকলেও এ মুহূর্তে কোনো হাহাকার নেই বলে দাবি মন্ত্রীর।

আর সরু চাল খাওয়ার অভ্যাস বাড়তে থাকায় এ চালের দাম বেশি বেড়েছে বলে মনে করেন তিনি। করপোরেট কোম্পানিগুলোর চালের ব্যবসায় নাম লেখানোকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন তিনি।

রাজ্জাক বলেন, “মানুষ যেন এখন বেশি পুষ্টিকর খাদ্য যেমন- ডিম, দুধ, মাছ-মাংস খেতে পারে, তার ওপর আমরা গুরুত্ব দিতে চাই। আস্তে আস্তে আমরা চালের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনতে চাই।”

আগে বাংলাদেশের মানুষ মাথাপিছু দৈনিক ৪১৭ গ্রাম চাল খেলেও এখন তা ৩৭০ গ্রামে নেমে এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “জাপানসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে মাথাপিছু ২০০ গ্রামের বেশি চালের কনজামশন নাই। আমাদের দেশে এটা ৪০০ গ্রামের কাছাকাছি। আমরা চাই, মানুষ পুষ্টিকর খাবার খাক।”

দেশে চাল-গমসহ কিছু খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায় খাদ্যে কিছুটা সংকট দেখা গেলেও দেশে এ মুহূর্তে কোনো হাহাকার নেই বলে দাবি মন্ত্রীর।

“ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে গমের দাম বেড়েছে। যখনই গমের দাম বেড়ে যায়, তখনই চালের ওপর নির্ভরতা বেড়ে যায়। আটার দাম চালের চেয়ে বেশি। স্বাভাবিকভাবে মানুষ আটা না খেয়ে চালটা খাবে। এ কারণে চালের ওপর চাপ বাড়ায় দাম একটু বেড়েছে।”

দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ জানিয়ে তিনি বলেন, “এখন আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এখন আমাদের উৎপাদন হয়, এতে হাহাকার বা দুর্ভিক্ষ, ইনশাল্লাহ দেশে হবে না। আমরা যদি আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিরতার কারণে বিদেশ থেকে খাদ্য কিনতে নাও পারি, তাতেও আমাদের কোনো সমস্যা হবে না। আমরা দেশকে সেই অবস্থায় নিয়েছি।

“আবারও বলছি, শহরের সীমিত আয়ের মানুষের বেশ কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু দেশে খাদ্য নিয়ে এ মুহূর্তে কোনো হাহাকার নাই।”

ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে শুক্রবার বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলন। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

দেশের মানুষের সরু চাল খাওয়ার প্রবণতা বেশি থাকায় এ চালের দাম বেড়েছে বলে মনে করেন আব্দুর রাজ্জাক।

“সরু যে চালটার দাম ৬৫-৬৬ টাকা ছিল, এ মুহূর্তে কিছু কিছু ক্ষেত্রে হয়ত ৭০। আর মোটা চাল এই মুহূর্তে ৪৩-৪৬ টাকার মধ্যে রয়েছে। গত দুই মাসের মধ্যে মোটা চালের দাম বাড়েনি।

“বড় বড় করপোরেট কোম্পানি যেমন- এসিআই, ফ্রেস এমনকি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি এখন প্যাকেটজাত করে ৬৫ টাকার চাল ৮২ টাকায় বিক্রি করছে, এই দিকটাও আপনারা বিবেচনায় নিবেন।”

সারে সরকার অনেক বেশি ভর্তুকি দিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “পটাশিয়াম সারের প্রতি টনের দাম ৩০০-৩৫০ টাকা ছিল। গত পারচেজ কমিটিতে ১২০০ টাকা পারচেজ করেছি প্রতি টন। অর্থাৎ চারগুণ দাম বেড়েছে।

“সারগুলোতে আমাদের অনেক বেশি ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। যাই দেখানো হোক, ভর্তুকিতেই আমরা ২৪ হাজার কোটি টাকা দিয়েছি।

“এই যে বিপুল পরিমাণ অর্থ সহযোগিতাটা গ্রামের মানুষই পাচ্ছে। কৃষকরা পাচ্ছে। এটা ডিলারদের মাধ্যমে পাচ্ছে, নয়-ছয় হওয়ার সুযোগ নেই। আমরা যদি এটা না দিতাম, কৃষির অবস্থা কই গিয়ে দাঁড়াত? তাহলে বিপুল সংখ্যক কৃষকের আয় কমে যেত এবং তারা অর্থনৈতিক সংকটে পড়ত। তারা জিনিসপত্র কিনতে পারত না।”

মানুষের আয় বেড়েছে এবং আয় বাড়ায় তাদের কনজামশন বেড়েছে বলে মতামত তার।

আরও পড়ুন