সার্বজনীন পেনশন আগামী অর্থবছর থেকেই: অর্থমন্ত্রী

ষাটোর্ধ্ব সব নাগরিকদের পেনশন দেওয়ার যে পরিকল্পনা সরকার নিয়েছে, তা আগামী অর্থবছরেই চালুর ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 June 2022, 12:09 PM
Updated : 9 June 2022, 12:09 PM

বৃহস্পতিবার ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেন, “২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় আমি সার্বজনীন পেনশন পদ্ধতি প্রবর্তনের ঘোষণা দিয়েছিলাম। আমি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা দিচ্ছি যে সরকার আগামী অর্থবছরে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

বর্তমানে দেশে শুধু সরকারি কর্মচারীরা পেনশন পেলেও বেসরকারি চাকরিজীবীসহ সবাইকে পেনশনের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি ছিল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে।

তার ধারাবাহিকতায় ষাটোর্ধ্ব সব নাগরিককে পেনশন সুবিধার আওতায় আনতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে নতুন আইন হচ্ছে। গত ৩০ মার্চ জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ আইনের খসড়াও প্রকাশ করে সরকার।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে বয়স্ক জনগোষ্ঠীর তুলনায় কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা অনেক বেশি থাকায় সার্বজনীন পেনশন পদ্ধতি চালু করাটা এখন ‘সময়ের দাবি’।

তিনি জানান, ২০২০ সালে দেশে ষাটোর্ধ্ব জনসংখ্যা ছিল ১ কোটি ২০ লাখ, যা ২০৪১ সালে ৩ কোটি ১০ লাখ এবং ২০৬১ সালে ৫ কোটি ৫৭ লাখে দাঁড়াবে। প্রত্যাশিত গড় আয়ু বর্তমানে ৭৩ বছর, যা ২০৫০ সালে ৭৯ দশমিক ৯ বছর এবং ২০৭৫ সালে ৮৪ দশমিক ৩ বছর হবে।

প্রত্যাশিত গড় আয়ু বাড়ার কারণে ধীরে ধীরে বয়স্ক জনসংখ্যা বাড়তে থাকার বিষয়টি তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমাদের দেশে একান্নবর্তী পরিবারের মাধ্যমে বয়স্ক ব্যক্তিবর্গের জন্য গ্রামে যে সামাজিক সুরক্ষাসহ নিরাপত্তাবলয় ছিল তা, ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে। একক পরিবারে বসবাস বৃদ্ধি পাবার কারণে বয়োবৃদ্ধদের নিরাপত্তা ক্রমান্বয়ে হুমকির দিকে ধাবিত হচ্ছে।

“বাংলাদেশের শ্রম বাজারের ৮৫ শতাংশ জনবলই অনানুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত। অনানুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত এবং প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য কোনো প্রাতিষ্ঠানিক সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামো না থাকায় বৃদ্ধকালে তাদের জীবনযাপনে অনিশ্চয়তা দেখা দেবার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।”

মুস্তফা কামাল বলেন, “সরকার বয়স্ক ও দুঃস্থ জনগোষ্ঠীর জন্য বিভিন্ন কার্যক্রমের আওতায় সামাজিক সুরক্ষাকল্পে প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ সুবিধাভোগীকে সহায়তা দিচ্ছে। সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকারকে বিবেচনায় নিয়ে বয়স্ক ও দুঃস্থ জনসাধারণের জন্য একটি টেকসই সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী নিশ্চিত করার জন্য সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে ‘সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২২’ প্রণয়নের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।”

পেনশন কর্তৃপক্ষ আইনের খসড়া অনুযায়ী, জাতীয় পরিচয়পত্রকে ভিত্তি ধরে ১৮ বছরের বেশি ও ৫০ বছরের কম বয়সী সব বাংলাদেশি নাগরিক এই পেনশন ব্যবস্থাপনায় অংশ নিতে পারবে। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীরা অংশ নিতে পারবেন। সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মরতরা এই পেনশন ব্যবস্থাপনার বাইরে থাকবেন।

বাজেট বক্তৃতায় পেনশন ব্যবস্থাপনা আইনের যে কথা অর্থমন্ত্রী বলেছেন, তা ২০২২ সালের মধ্যেই জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।

সার্বজনীন পেনশন চালু হলে ভবিষ্যতে বর্তমানে চলমান সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম ধীরে ধীরে সঙ্কুচিত করে আনার সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে মনে করেন মুস্তফা কামাল।

পেনশন অটোমেশন

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী সরকারি কর্মচারীদের বর্তমান পেনশন পদ্ধতি অটোমেশনের কথাও বলেন।  

তিনি বলেন, দেশীয় বিশেষজ্ঞদের তৈরি আইবাস++ (সমন্বিত বাজেট ও হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি) সফটওয়্যারের মাধ্যমে সিভিল প্রশাসন, প্রতিরক্ষা ও রেলওয়েতে বাজেট প্রণয়ন, বাজেট বাস্তবায়ন ও হিসাব প্রক্রিয়াকরণের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

“আইবাস++ এর মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীদের অনলাইনে বেতন বিল জমা ও বেতন দেয়া ইএফটি’র মাধ্যমে সম্পন্ন করা হচ্ছে। এজন্য পেনশনারদের ডাটাবেইজ স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। এর পাশাপাশি শতভাগ পেনশনারদের মাসিক পেনশন ইএফটির আওতায় আনা হয়েছে।”

এ উদ্যোগের ফলে সরকারি অর্থের অপচয় রোধ ও পেনশনারদের পেনশন প্রাপ্তি বিড়ম্বনামুক্ত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।