কর দিলে ‘বিনাপ্রশ্নে’ রিটার্নে দেখানো যাবে বিদেশের অর্থ-সম্পদ

দেশের বাইরে থেকে অর্থ প্রবাহ বাড়াতে কর দিয়ে বিদেশ থাকা সম্পদের ‘দায়মুক্তির’ বিষয়ে আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল; তিন ধরনের করহার ঘোষণার মাধ্যমে বাজেটে তা সুস্পষ্ট করেছেন তিনি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 June 2022, 10:04 AM
Updated : 9 June 2022, 01:43 PM

করদাতাদের ‘স্বস্তি’ দিতে বিদেশে থাকা তাদের অর্থ ও সম্পদ আয়কর রিটার্নে ‘বিনা প্রশ্নে’ প্রদর্শনের সুযোগ দিতে এমন ছাড় দেওয়ার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী।

এজন্য বিদেশের স্থাবর সম্পত্তি দেশে আনা না হলে ১৫ শতাংশ ও অস্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ এবং বাংলাদেশে পাঠানো নগদ অর্থের উপর ৭ শতাংশ হারে কর দেওয়া হলে এনবিআরসহ আর কেউ এসব সম্পদ বা অর্থের বিষয়ে প্রশ্ন তুলবে না বলে বাজেটে প্রস্তাব করেছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে তিনি এজন্য আয়কর অধ্যাদেশে নতুন বিধান সংযোজনের প্রস্তাব করেন।

অর্থমন্ত্রী বলেছেন, “প্রস্তাবিত বিধান অনুযায়ী বিদেশে অবস্থিত যে কোনো সম্পদের উপর কর পরিশোধ করা হলে আয়কর কর্তৃপক্ষসহ যে কোনো কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করবে না।“

কোভিড মহামারী ও চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার পূর্বাভাসের মধ্যে রাজস্ব বাড়াতে নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের অংশ হিসেবে এমন পদক্ষেপ নেওয়ার কথা যুক্তি হিসেবে তিনি বাজেট প্রস্তাবে উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, “এ অবস্থায় বিদেশে অর্জিত অর্থ ও সম্পদকে অর্থনীতির মূল স্রোতে আনয়নের মাধ্যমে বিনিয়োগ ও আর্থিক প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমি আয়কর অধ্যাদেশে নতুন বিধান সংযোজনের প্রস্তাব করছি।“

এ সুবিধা শুধু আগামী অর্থবছরের জন্য বহাল রাখার ঘোষণা দেন তিনি।

তার যুক্তি, প্রস্তাবিত বিধান কার্যকর হলে অর্থনীতির মূল স্রোতে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়বে। আয়কর রাজস্ব আহরণ বাড়বে এবং করদাতারাও বিদেশে অর্জিত তাদের অর্থ-সম্পদ আয়কর রিটার্নে প্রদর্শনের সুযোগ পেয়ে স্বস্তিবোধ করবেন।

বর্তমান আইনে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাঠিয়ে বিদেশে সম্পত্তি করার সুযোগ নেই। বিনিয়োগ আর ব্যবসার জন্য লিয়াঁজো অফিস খোলার জন্য পৃথক সুনির্দিষ্ট আবেদনের প্রেক্ষিতে অনুমোদন দিয়ে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বিদেশে বাংলাদেশিদের সম্পদ কেনা বা সেখান থাকা নগদ অর্থ বাংলাদেশ থেকে পাচার করা কি না তা বাজেট উপস্থাপনকালে উল্লেখ করেননি।  

তবে এর আগে গত ২৬ মে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত ও সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “বিভিন্ন সময়ে যেসব টাকা বাংলাদেশ থেকে বিদেশে চলে গেছে, আমরা বিভিন্নভাবে এসব টাকা ফেরতের সুযোগ দিতে অ্যামনেস্টি দিচ্ছি, যাতে টাকাগুলো আমাদের দেশে ফিরে আসে, এটাই আমাদের উদ্দেশ্য।”

অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার বিভিন্ন ধরনের সুযোগ বহু আগে থেকেই দিয়ে আসছে সরকার। তবে বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফেরানোর ক্ষেত্রে এ ধরনের সুযোগ আগে কখনও দেওয়া হয়নি।

এই সুযোগ দেওয়া হলে বাংলাদেশি নাগরিকরা বিদেশে তাদের সম্পদের তথ্য আয়ের বিবরণীতে যুক্ত করার সুযোগ পাবেন, ওই অর্থের উৎস নিয়ে কোনো প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে না।

ঊর্ধ্বমুখী আন্তর্জাতিক বাজার থেকে পণ্য আমদানি করতে গিয়ে আগের চেয়ে ব্যয় বেড়েছে অনেক। মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি ডলারের দরও চড়ছে; প্রতিনিয়ত দর হারাচ্ছে টাকা।

এমন পরিস্থিতিতে প্রধান এ বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বাড়াতে এর আগে রেমিটেন্সের নীতিমালায় ছাড় দিয়ে যে কোনো পরিমাণ ডলার দেশে পাঠাতে প্রবাসীদের নথি জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থেকে ছাড় দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কাগজ ছাড়াই যে পরিমাণ রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়ে প্রণোদনার অর্থও পাওয়া যাবে।

ওই দিন এই সুযোগ কাজে লাগিয়েও পাচার হওয়া টাকা দেশে ফেরানো যাবে কি না, সেই প্রশ্ন অর্থমন্ত্রীকে করেন একজন সাংবাদিক।

উত্তরে তিনি বলেন, “এটা তো… সেটা একই জিনিস। কোনো প্রশ্ন করা হবে না। এর মানে হচ্ছে বিভিন্ন চ্যানেলে চলে গেছে আমাদের টাকা। এগুলো ফেরত আনার জন্যই এ সমস্ত উদ্যোগ।

এ ধরনের ‘অ্যামনেস্টি’ অনেক দেশেই দেওয়া হয় বলে মন্তব্য করলেও দেশ থেকে কত টাকা পাচার হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি অর্থমন্ত্রী।

আরও পড়ুন: