নতুন বাজেটে আমদানি কমানো, ব্যাংক ঋণ বাড়ানোর ছক

কোভিড মহামারীর ধাক্কা সামলে ওঠার সময়ে বিশ্ববাজারকে উসকে দিয়েছে যুদ্ধ, তার প্রভাবে পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মূল্যস্ফীতির চোখ রাঙানোর মধ্যে আসছে দেশের নতুন বাজেট; যেখানে হিসাব মেলানোর অনেক পদক্ষেপের মধ্যে আমদানি কমানোর লক্ষ্য নেওয়ার বিষয়টি পরিকল্পনায় রাখছে সরকার।

জাফর আহমেদজ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 May 2022, 07:15 PM
Updated : 8 June 2022, 03:11 PM

দেশের লেনদেনের প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা ডলারের চলমান সঙ্কট সামলানোর এ সময়ে বাড়তে থাকা আমদানি ব্যয়ের রাশ টেনে ধরতে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে আমদানি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য কমানোর প্রস্তাব করেছে অর্থ বিভাগ।

বাজেট প্রণয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের এই বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, আগামী বছরের আয় ব্যয়ের ফর্দ মেলানোর যে ছক কষা হচ্ছে সেটির প্রস্তাবিত আকার দাঁড়িয়েছে পৌনে ৭ লাখ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরে মোট আমদানি ৮০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে জানিয়ে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এর নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান আমদানি নিয়ন্ত্রণে সরকারের প্রস্তাবিত কৌশলকে সমর্থন করছেন।

তিনিও মনে করেন, আগামী বছর আমদানি বিল পরিশোধ করতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যেন চাপে না পড়ে, সেজন্য একান্তই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য না হলে আমদানি নিরুৎসাহিত করতে পারে সরকার।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মূল্যস্ফীতির চাপ সামলানো আর বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য ঠিক রাখার কৌশল বেছে নেওয়ার এসময়কালে নতুন বাজেটের আকার চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে ১২ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত এ বাজেটের ঘাটতিও ধরা হচ্ছে বিশাল। প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি মেটাতে এবার আলোচনায় থাকা বিদেশি ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যের হার কমানোর কথাও ভাবা হচ্ছে।

অন্যদিকে দেশের ব্যাংকগুলো থেকে ঋণের পরিমাণ ৩৩ শতাংশের মতো বাড়িয়ে ১ লাখ কোটি টাকায় নেওয়ার প্রস্তাব থাকছে।

চলতি অর্থবছরে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেটে সরকারের ব্যাংক ঋণের লক্ষ্য ছিল ৭৬ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা।

আগামী ৯ জুন জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২২-২৩ অর্থবছরের যে প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন, তাতে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে কৃষি খাতে ভর্তুকি বাড়ানো এবং রেমিটেন্স আনা ও রপ্তানিতে উৎসাহ দিতে প্রণোদনার পরিমাণ আরও বাড়ানোর ঘোষণা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

পাশাপাশি মূল্যস্ফীতিকে বিবেচনায় নিয়ে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বাড়তি নজর দেওয়ার আলোচনার মধ্যে কিছুটা বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে এ খাতে।

সামাজিক সুরক্ষায় চলতি অর্থবছরের বরাদ্দ ১ লাখ ৭৬১৪ কোটি থেকে ৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হলেও তা এবারের মোট বরাদ্দের হারের চেয়ে কম। এবার বাজেটের মোট বরাদ্দের ১৭ দশমিক ৮২ শতাংশ রাখা হয়েছিল এ খাতে, যা আগামী বাজেটে ১ শতাংশের চেয়ে একটু বেশি কমানোর প্রস্তাব থাকছে।

অর্থনীতিবিদরা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আর মূল্যস্ফীতির এ সময়ে সাধারণের সুরক্ষায় সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আকারের সঙ্গে ভাতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

আর আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতির বর্তমান ধারা বিশ্লেষণ করে তারা বলছেন, আগামী অর্থবছরে আমদানি এমনিতে কমে আসবে। তারা মনে করেন, বর্তমান প্রবৃদ্ধির চেয়ে কম হারে সরকারের লক্ষ্য নির্ধারণের চেষ্টা ‘ঠিকই আছে’। তবে নিত্যপণ্য এবং বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট আমদানি যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় সেদিকে জোরালো নজর রাখতে হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মনে রাখতে হবে খুবই প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য এবং মুলধনি যন্ত্রপাতি ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানি যেন কোনোভাবেই ব্যাহত না হয়।”

আমদানি নিয়ন্ত্রণ করায় ইতোমধ্যে বেড়েছে ফলের দাম।

নিয়ন্ত্রণ হবে আমদানি?  

অর্থ বিভাগ বাজেটের যে খসড়া প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছে, তাতে বছর শেষে আমদানিতে ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে বলে প্রাক্কলন করেছে। আগামী বাজেটে বিদেশ থেকে পণ্য আনার পরিমাণ বাড়ার হার ১‌২ শতাংশে রাখার কথা প্রস্তাবে থাকছে।

প্রস্তাবে আমদানিতে চলতি বাজেটের ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির চেয়ে আগামী অর্থবছরে ১ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হলেও তা বর্তমান প্রবৃদ্ধির চেয়ে অনেক কম।

আমদানি ব্যয় বাড়তে থাকায় চাপ তৈরি হয়েছে দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যে। কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলে আগের অর্থবছরের চেয়ে ব্যাপক হারে বেড়েছে আমদানি। বিপুল আমদানি ব্যয় পরিশোধ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে, চাপ পড়ছে রিজার্ভের ওপর। আর ডলারের দামে রেকর্ড হয়েছে কয়েকদিন আগেই।

এমন প্রেক্ষাপটে বিশ্ব বাজারে পণ্যের দাম বাড়তে থাকায় আমদানি ব্যয় পরিশোধে বিপুল ডলার ব্যয় হওয়ায় প্রধান এ বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এজন্য আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক এলসি মার্জিন বাড়ানোসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।

সরকার বিলাসবহুল ও অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে শুল্ক ও কর বাড়িয়ে তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। এ ধারাবাহিকতায় আমদানি প্রবৃদ্ধি কমানোর লক্ষ্য নির্ধারণের প্রস্তাব সময়োপযোগী বলেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

ফরাসউদ্দিন বলেন, “আগামী অর্থবছরে আমদানি এমনিতেই কমে আসবে। কারণ এ বছর বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলসহ অন্যান্য আমদানি পণ্যের দাম বেশ কিছুটা কমে আসবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে।”

সরকারের এমন সিদ্ধান্ত নিলে তা ইতিবাচক মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমরা বিদেশ থেকে এমন অনেক পণ্য আমদানি করি, যেটার তেমন প্রয়োজন নেই। আবার দেশে উৎপাদন হয় এমন পণ্যও আমদানি করি। তাই সরকার এই সিদ্ধান্ত নিলে তা দেশি শিল্পেও ইতিবাচক প্রভাব রাখবে।”

তবে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) এর সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি মনে করি, চলতি বছর আমদানিতে যেভাবে চাপ পড়েছে, এটা আগামী বছর নাও থাকতে পারে। তবে বিশেষ করে বিদেশ থেকে বিলাসি পণ্য আমদানির উপর কর বাড়িয়ে দিতে পারে। এতে সরকারের কর থেকে আয় কিছুটা বাড়বে। আবার আমদানিতেও অনীহা সৃষ্টি করতে পারে।”

অর্থনীতিবিদ সেলিম রায়হানও বিনিয়োগ যাতে কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন।

আমদানি পণ্যের অতিরিক্ত মূল্য ঘোষণা দিয়ে যেন কেউ অর্থপাচার করতে না পারে সেদিকে বিশেষ নজর রাখার পরামর্শ দেন তিনি।

আমদানি লক্ষ্য কমানোর প্রস্তাবের পেছনে আরেকটি কারণ হিসেবে আগামী অর্থবছরে রপ্তানির লক্ষ্যের হার কমানোর ভাবনাও কাজ করছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৫ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি। মোট আয় এসেছে ৪ হাজার ৩৩৪ কোটি ৪৩ লাখ ডলার।

অর্থ বিভাগ মনে করছে, বছর শেষে প্রবৃদ্ধি অন্তত ৩০ শতাংশ হবে; যা নতুন বাজেটে ১০ শতাংশ কমিয়ে আনার কথা প্রস্তাব করা হতে পারে। যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় রপ্তানি চাহিদা কমার বিষয়টি প্রাক্কলন করছে অর্থ বিভাগ। তবে রেমিটেন্সের বর্তমান ধীর গতি ও ঋণাত্মক (এপ্রিল ১৬.২৫) কাটিয়ে তা ১৫ শতাংশের উপরে রাখার লক্ষ্য রাখা হয়েছে।

সবশেষ পরিসংখ্যান বলছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৭২ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৭ দশমিক ৯ শতাংশ। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট পণ্য আমদানি হয়েছিল ৫৭ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার, প্রবৃদ্ধি ছিল ১৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ।

চলতি বাজেটে সরকার আগের অর্থবছরের চেয়ে ১১ শতাংশ আমদানি বাড়ানোর লক্ষ্য ধরলেও তা এখন চারগুণ ছুঁইছু্ঁই। ইতোমধ্যে আগের পুরো অর্থবছরের মোট আমদানি ছাড়িয়েছে।

অর্থ বিভাগের প্রাক্কলনে বছর শেষে মোট আমদানি ৩০ শতাংশ ছাড়িয়ে হতে পারে ৭৫ বিলিয়ন ডলার। আর আগামী অর্থবছরে সরকার মোট আমদানি ৮৩ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে রাখতে চায়।

চলতি অর্থবছরে আমদানি-রপ্তানির বিশাল এ ব্যবধানের কারণে রেকর্ড বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে। বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যও অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি।

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুন-মার্চ) চলতি হিসাবের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪০৭ কোটি ডলার। ঘাটতির এই পরিমাণ গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫ গুন বেশি।

আসছে বাজেটে অর্থ বিভাগের প্রাক্কলন অনুযায়ী, চলতি হিসাবের ভারসাম্যের ঘাটতি জিডিপির আড়াই শতাংশ হতে পারে, যা আমদানি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যের ওপর ভর করে আগামী অর্থবছরে ১ শতাংশ কমানোর পরিকল্পনার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

ব্যাংক ঋণ লক্ষ কোটি টাকা 

নতুন অর্থবছরে যে পৌনে ৭ লাখ টাকার কিছু বেশি বাজেট প্রণয়নের প্রস্তাব করেছে অর্থ বিভাগ, তা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৫ শতাংশের একটু বেশি। বিশাল এ বাজেট বাস্তবায়ন করতে গিয়ে অর্থ বিভাগ হিসাব করে দেখেছে, বাজেট ঘাটতি ২ লাখ ৪০ হাজার কিছু বেশি থাকতে পারে; যা জিডিপির প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশ।

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে দ্বিতীয় বাজেটে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ঘাটতি ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ২ শতাংশ, টাকার অঙ্কে ২ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা।

বাজেটের মূল ব্যয় বরাবরের মতো মেটানো হবে রাজস্ব আয় থেকে। চলতি অর্থবছরের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে যা ১১ শতাংশ বেশি বাড়ানোর লক্ষ্য ধরার প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট আয় ধরা হয় ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। নতুন বাজেটের প্রস্তাবে রাজস্ব আহরণের এই লক্ষ্যমাত্রা জিডিপির মাত্র ৯ দশমিক ৮ শতাংশ।

এরমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতায় রাজস্ব আয় চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৪০ হাজার কোটি টাকার মত বাড়ানোর খসড়া প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি চলতি অর্থবছরের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২ শতাংশ বেশি।

প্রস্তাবিত নতুন বাজেটের এই বিশাল ঘাটতি পূরণে বিদেশি উৎস থেকে বর্তমানের ১ লাখ ১২ হাজার ১৮৮ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার (জিডিপির ৩ দশমিক ২ শতাংশ) চেয়ে ৪ হাজার কোটি টাকার একটু বেশি অর্থায়ন পাওয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছে। জিডিপির তুলনায় তা ২ দশমিক ৬ শতাংশ। শতকরা হারে তা ৫ শতাংশ বাড়লেও জিডিপির তুলনায় তা কমছে।

বিদেশি ঋণ নেওয়া বা না নেওয়ার বর্তমান আলোচনার মধ্যে সরকার এ খাত থেকে বেশি ঋণ নিতে না চাওয়ার কথা ভাবছে।

তবে সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বর্তমান বিদেশি ঋণের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বিদেশ থেকে আরও বেশি ঋণ নেওয়ার পরামর্শই দিয়েছেন।

অন্যদিকে দেশি উৎস থেকে চলতি অর্থবছরের ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার পরিমাণ আরও প্রায় ৩০ কোটি টাকার মত বাড়ানোর প্রস্তাব থাকছে।

এরমধ্যে চলতি অর্থবছরে ব্যাংক থেকে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যের বিপরীতে আগামী অর্থবছরে যা ৩৩ শতাংশের মত বাড়িয়ে লাখ টাকা ধরার প্রস্তাব করে খসড়া তৈরি করা হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেটের হিসাব নিকাশ করে ভর্তুকি, প্রণোদনা ও নগদ ঋণ প্রদানের জন্য এবার প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা প্রস্তাব করেছে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধের লকডাউনের মধ্যে কাজ হারিয়ে দুর্দশায় পড়া মানুষকে সহায়তায় ত্রাণ দিয়েছিল সরকার।

সামাজিক সুরক্ষায় বাড়ছে কত?

আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে দেশের প্রান্তিক মানুষকে সুরক্ষা দিতে সামাজিক সুরক্ষার কয়েকটি খাতে চলমান বাজেটের চেয়ে সোয়া ৫ হাজার কোটি টাকার একটু বেশি (৫ শতাংশ) বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এ খাতের বরাদ্দ রয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা।

বর্তমান আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে প্রাক বাজেট আলোচনায় অর্থনীতিবিদসহ অনেকেই এ খাতের আওতা ও ভাতা আরও বাড়ানোর পরামর্শ দেন।

প্রস্তাব অনুযায়ী সামাজিক কল্যাণ খাতে বর্তমানের বরাদ্দ ৩২ হাজার ৭৬০ কোটি টাকার চেয়ে ছয় হাজার কোটি টাকার মত বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছে।

এ খাত থেকে প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র, বেদে হিজরা এবং অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে ভাতা দেওয়া হয়।

খাদ্য নিরাপত্তা, কাবিখা ও উন্নয়ন প্রকল্প কর্মসূচির মত কর্মসৃজন কর্মসূচি, মানব সম্পদ উন্নয়ন, ক্ষুদ্র ঋণ পরিচালনায় বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হলেও তা খুব বেশি নয়।

তবে অনেক সমালোচনার পরও সরকার এবারও সামাজিক সুরক্ষা খাতের আওতায় সরকারি কর্মচারিদের অবসর ও পাবিারিক ভাতার সংশ্লেষ ঘটিয়েছে। এখাতেও বর্তমানের বরাদ্দ ২৬ হাজার ৬৯০ কোটি টাকার চেয়ে এক হাজার কোটি টাকার মত বাড়ানোর প্রস্তাব থাকছে।  

সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিনও এই ব্যয় অন্য খাতে দেখানোর পরামর্শ দেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আসলে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দের হারের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এই খাতের মধ্যে সরকারি কর্মচারীদের পেনশন ও সঞ্চয়পত্রের সুদ দেখানো হচ্ছে।”

২০০৯ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বড় ধরনের বরাদ্দ দেওয়া শুরু করেন জানিয়ে তিনি বলেন, “কিন্তু প্রান্তিক মানুষের জন্য সরকার কী করবে এবং কীভাবে করবে এটা নিয়ে পরিষ্কার হওয়া উচিৎ। এই খাতে অন্য খাতের অর্থ দেখানো উচিৎ নয়।”

অর্থনীতিবিদ সেলিম রায়হান বলেন, “বর্তমানে যে উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলছে বিশেষ করে প্রান্তিক মানুষের তাতে প্রকৃত আয় কমে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে ভাতার পরিমাণ বাড়ানো উচিত।”

আর আগামী বাজেটে ঘাটতি বাজেটের আকার বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “কারণ এখনও আমরা কোভিড-১৯ এর অভিঘাত পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারিনি। মাত্র ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। আগামী অর্থবছরে শিল্প ও প্রান্তিক মানুষের সুরক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানো উচিত।”