যুদ্ধের বাজারে সার সরবরাহ অব্যাহত রাখতে কানাডাকে অনুরোধ

বেলারুশ ও রাশিয়া থেকে আমদানির সুযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কানাডাকে পটাশিয়াম সার সরবরাহ অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 May 2022, 11:10 AM
Updated : 5 May 2022, 11:21 AM

কানাডার রাষ্ট্রদূত লিলি নিকোলস বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তাকে এই অনুরোধ জানানো হয়।  

কৃষিমন্ত্রী পরে সাংবাদিকদের বলেন, দুদেশের বর্তমান সম্পর্ক নিয়ে এবং আগামীতে বাংলাদেশ-কানাডা কীভাবে এগিয়ে যাবে, সেসব বিষয়ে তারা কথা বলেছেন।

বিশ্বে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিলে কানাডার তরফ থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খাদ্যশস্য সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি পাওয়ার কথাও বলেন মন্ত্রী।

বাংলাদেশ যে সব পণ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, তেমন কিছু কৃষিপণ্য কানাডা থেকে আমদানি করা হয় জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, "বিশেষ করে ভোজ্যতেল, সয়াবিন এবং অন্যান্য তেল, ক্যানোলা, মাস্টার্ড এগুলো আমরা কানাডা থেকে আনি। গম এবং মসুর ডালও আমরা কানাডা থেকে আনি।"

কোভিড মহামারী এবং রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের প্রভাবে খাদ্যপণ্যের বাজারে বড় সংকট তৈরি হওয়ার শঙ্কা জানিয়ে রাজ্জাক বলেন, “ইতোমধ্যে বিশ্ব ব্যাংক এবং বিশ্ব খাদ্য সংস্থা তারা বলছে যে একটা ভয়াবহ খাদ্য সংকট হতে পারে। ইউরোপীয় দেশগুলোতে আমরা খাদ্য নিয়ে নানা জটিলতার কথা শুনছি।"

কৃষিক্ষেত্রে কানাডাকে বাংলাদেশের ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার' হিসেবে বর্ণনা করেন কৃষিমন্ত্রী। তিনি বলেন, “তারা আমাদের এখানে খাদ্যশস্য সরবরাহ করে থাকে। যদি কোনো সঙ্কট হয়, তবে সেই সংকটের ক্ষেত্রে কানাডা যাতে আমাদের বিশেষ বিবেচনায় বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়ে খাদ্যশস্য সরবরাহ করে, সেই ব্যাপারে আমরা আলোচনা করেছি।

“উনারা বলেছেন, অবশ্যই বাংলাদেশ সেক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনায় খাদ্যশস্য পাবে।"

বেলারুশ, রাশিয়া এবং কানাডা- এই তিন দেশ থেকেই সবচেয়ে বেশি পটাশিয়াম সার (মিউরেট অব পটাশ) রপ্তানি হয় জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এই সারটি বাংলাদেশ পায় কানাডা থেকে।

"আমরা কানাডা থেকেও আনি, তাদের সঙ্গে সরকার টু সরকার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতি বছরই তারা একটা ভালো অ্যামাউন্ট আমাদের সরবরাহ করে। ইতোমধ্যে বেলারুশের উপর নিষেধাজ্ঞা আছে, তাদের কাছ থেকে আমরা পটাশিয়াম আনতে পারছি না।

“রাশিয়া থেকে আনতাম, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সেটাও বন্ধ রয়েছে। এই মুহূর্তে সবাই কানাডার উপরে নির্ভর করছে। এর উপর চায়নাসহ বিভিন্ন দেশ প্যানিক বাইং (আতঙ্কিত হয়ে কেনা) শুরু করেছে। চীন তাদের ব্যবস্থায় তারা হয়ত নিতে পারবে, কিন্তু এটা আমাদের জন্য একটা বড় সমস্যা।"

এই বাস্তবতায় কানাডার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনাকে 'খুবই গুরত্বপূর্ণ' হিসেবে দেখছেন কৃষিমন্ত্রী।

"উনারা কথা দিয়েছেন। রাষ্ট্রদূত এটা ব্যক্তিগতভাবে দেখবেন, যাতে আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণ পটাশিয়াম কানাডা থেকে পেতে পারি।"

আলু উৎপাদনে পটাশিয়াম সার গুরুত্বপূর্ণ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আগামী মৌসুম, অর্থাৎ অক্টোবর-নভেম্বরের দিকে এই সার দরকার হবে, তাই সরকার এখনই দরপত্র দিয়ে কেনার চেষ্টা করছে।

তবে বিষয়টিতে কিছুটা অনিশ্চয়তাও দেখছেন আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, “যারা টেন্ডার দিয়েছে তারা সরবরাহ করতে পারবে কিনা? কীভাবে করবে? কানাডা ছাড়া তো অন্য কোনো দেশ থেকে সরাসরি আনা সম্ভব নয়।

"তারা যদি পরোক্ষভাবে অন্য কোনো দেশ থেকে এনে আমাদের সরবরাহ করে, তাহলে হয়ত আমরা পাব, না হলে হয়ত একটা সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।"

কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণে কানাডার কারিগরি সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে জানিয়ে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “অ্যাগ্রো-প্রসেসিংয়ে তাদের বিনিয়োগ চাচ্ছি। তারা বলেছেন, আগামী নভেম্বরে তাদের একটাই এক্সিবিশন ফেয়ার ও সেমিনার হবে, তারা সেখানে আমাদের আমন্ত্রণ জানাবেন। আমরা একটা বাণিজ্য প্রতিনিধি দল কানাডায় পাঠাব। কারণ তারা বাংলাদেশ সম্পর্কে ভালো জানে না।"

একসঙ্গে কাজের উদ্যোগ হিসেবে কানাডার কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে দেশটির কৃষি প্রক্রিয়াকরণ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কথা বলছেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “লাদেশের বাণিজ্য প্রতিনিধিদল যদি কানাডায় যায়, সেখানে একটা সেমিনার ওয়ার্কশপও আয়োজন করা হবে।”