বুধবার জাতীয় সংসদে সরকারি দলের সংসদ সদস্য শফিউল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকে মন্ত্রীদের জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপন করা হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “গত নয় বছরের মধ্যে ব্যারেল প্রতি তেলের দাম এখন সর্বোচ্চ। বাংলাদেশ বর্তমানে প্রতি বছর ৫০ লাখ টন ডিজেল, ১৩ লাখ অপরিশোধিত তেল, দুই লাখ টন ফার্নেস অয়েল এবং ১ লাখ ২০ হাজার টন অকটেন আমদনি করে। এখন যে দামে জ্বালানি তেল কিনে বাংলাদেশ নিজেদের বাজারে বিক্রি করছে, তাতে প্রতিদিন ১৫ কোটি ডলারের ওপর লোকসান গুনতে হচ্ছে।“
জ্বালানির আন্তর্জাতিক বাজার আগে থেকেই ঊর্ধ্বমুখী ছিল, রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ তা আরো অস্থির করে তুলেছে। চড়া বাজারের উত্তাপ টের পাচ্ছে বাংলাদেশের মত আমদানিনির্ভর দেশগুলো।
দাম বাড়তে থাকায় ভর্তুকির কারণে লোকসান বাড়ছে দেশে তেল আমদানির দায়িত্বে থাকা সরকারি কোম্পানি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি)। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, দাম বেড়ে যাওয়ায় তখন তাদের শুধু ডিজেলেই দৈনিক ১৩ কোটি টাকার মতো লোকসান হচ্ছে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গত ১৪ মার্চ বলেছিলেন, ভর্তুকি বাড়িয়ে হলেও সরকার আপাতত দেশের বাজারে তেলের দাম বাড়ানো এড়াতে চায়। তবে পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে সরকার হয়ত তা পারবে না।
সংসদে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ রাশিয়া ও ইউক্রেইন থেকে খুব বেশি গম আমদনি না করলেও বৈশ্বিক বাজার পরিস্থিতির কারণে সরবরাহ প্রভাবিত হবে। যুদ্ধ অব্যাহত থাকলে পণ্যবাহী জাহাজের ভাড়া ও বীমা মাশুল বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।”
‘বিকল্প খোঁজা হচ্ছে’
রাশিয়া ইউক্রেইনে যুদ্ধ বাধিয়ে দেওয়ায় পশ্চিমা দেশগুলো যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন, তাতেও সমস্যা পোহাতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। রাশিয়ার সহযোগিতায় নির্মাণাধীন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “ইতোমধ্যে বেশ কিছু ব্যাংককে বৈশ্বিক আন্তঃব্যাংক লেনদেন সংক্রান্ত সুইফট সিস্টেমে নিষিদ্ধ করার ফলে বাংলাদেশের বিভিন্ন সংস্থা, যাদের রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি রয়েছে, তাদের মূল্য পরিশোধের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। কেননা নিষেধাজ্ঞার আওতাধীন কোনো ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করলে তা হয়ত মাঝপথে আটকে যেতে পারে। এ অর্থ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নাও হতে পারে।“
রূপপুর প্রকল্পেও যে ‘বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে’, সে কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, “এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ রাশিয়ার সঙ্গে এক হাজার ১৩৮ কোটি ডলারের ঋণচুক্তিতে আবদ্ধ হয়। এই ঋণের টাকা আসছে প্রধানত যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক হয়ে। কেননা, বাংলাদেশ রুবলের বদলে ডলারে ঋণের অর্থ নিতে চেয়েছে।
“রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা এই লেনদেনে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। চলমান প্রকল্পসমূহে অর্থায়ন এবং ঋণ পরিশোধের ব্যাপারে বিকল্প পদ্ধতি কী হতে পারে তা নিয়ে রাশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে আলোচনা চলছে।”