২০২০-২১: চূড়ান্ত হিসাবে ৬.৯৪% প্রবৃদ্ধির খবর দিল বিবিএস

চূড়ান্ত হিসাবে গত অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ, সেই সঙ্গে মাথাপিছু আয় বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৫৯১ ডলার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Feb 2022, 09:38 AM
Updated : 8 Feb 2022, 02:18 PM

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান মঙ্গলবার একনেক বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরের এই চূড়ান্ত হিসাব তুলে ধরেন।

এর আগে গত বছর অগাস্ট মাসে প্রকাশিত সাময়িক হিসাবে পরিসংখ্যান ব্যুরো বলেছিলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ এবং মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫৪৪ ডলার হতে পারে। চূড়ান্ত হিসেবে দুটোই আরও বেড়েছে।

চূড়ান্ত হিসাবে গত অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট জিডিপি বেড়ে ৪১৬ বিলিয়ন ডলার হয়েছে, যা প্রাথমিক হিসাবে ৪১১ বিলিয়ন ডলার ধরা হয়েছিল।

মহামারীর শুরুর ধাক্কায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি নেমে গিয়েছিল ৩ দশমিক ৫১ শতাংশে, যা তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম।

এরপর ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে সরকার ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরলেও মহামারী পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করায় তা সংশোধন করে ৬ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রাক্বলন করা হয়। এখন চূড়ান্ত হিসাবে ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পাওয়ার কথা বলছে পরিসংখ্যান ব্যুরো।

২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় যেখানে ২২২৭ ডলার ছিল, নতুন ভিত্তিবছর ধরে হিসাব করায় ২০২০-২১ অর্থবছরে তা এক লাফে ১৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ৫৫৪ ডলারে উন্নীত হতে পারে বলে গত নভেম্বরে ধারণা দিয়েছিল পরিসংখ্যান ব্যুরো। চূড়ান্ত হিসাবে তা আরও বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৫৯১ ডলার।

একনেকপরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা মন্ত্রী এই প্রবৃদ্ধিকে ‘মিরাকল ও সুন্দর’ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, “এই প্রবৃদ্ধি সারাবিশ্বে টপমোস্ট না হলেও সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধির একটি হবে।”

চূড়ান্ত হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রাথমিক হিসাব থেকে এতটা বাড়ল কীভাবে সেই ব্যাখ্যায় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, অর্থনীতির প্রধান তিন সূচক কৃষি, শিল্প এবং সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি প্রাথমিক হিসাবের তুলনায় চুড়ান্ত হিসাবে বেশি হয়েছে। সে কারণে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাবে অর্থনীতির প্রধান তিন খাতের মধ্যে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ১৭ শতাংশ, যা সাময়িক হিসাবে ২ দশমিক ৩৭ শতাংশ ধরা হয়েছিল।

চূড়ান্ত হিসাবে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ২৯ শতাংশ, যা সাময়িক হিসাবে ছিল ৫ দশমিক ৯৯ শতাংশ।

তবে সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি সাময়িক প্রাক্কলনের ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ থেকে কমে ৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ হয়েছে।

এই প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপনের প্রসঙ্গ তুলে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুব খুশি হয়েছেন।… সরকারের সকলকে এবং বিশেষ করে এই উৎপাদন বৃদ্ধিতে যাদের পরিশ্রম আছে কৃষক, শ্রমিক, দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরে কাজ করেন তাদের সবাইকে তিনি ধন্যবাদ দিয়েছেন।”

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম অবশ্য এই প্রবৃদ্ধিতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু দেখছেন না। 

“এখনে মিরাকলের ব্যাপার নেই। সংখ্যাটা বেড়েছে এই কারণে যে, আমাদের এক্সপোর্ট কিন্তু অনেক বেড়েছে আগের বছরের তুলনায়। এটার প্রভাব পড়েছে। আমাদের রেমিটেন্স অনেক বেড়েছে, প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এই দুইটা কন্ট্রিবিউটিং ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছে।”

পাশাপাশি করোনাভাইরাস মহামারীর সময়ে সরকারের ‘সুষ্ঠু অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা’ এবং প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর বাস্তবায়ন হওয়ায় ‘সুফল’ পাওয়া গেছে বলে মনে করেন প্রতিমন্ত্রী।

এক প্রশ্নের উত্তরে শামসুল আলম বলেন, “জাতিসংঘের মেথড অনুযায়ী আমরা জিডিপির হিসাব করি। বস্তুনিষ্ঠভাবে এই হিসাব করা হয়েছে।”

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সরকার ৭ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরেছে। তবে বিশ্ব ব্যাংকের হিসাবে এবার বাংলাদেশ ৬ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেতে পারে। আর এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি ৬ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে।