ছয় মাসে এডিপি বাস্তবায়ন ২৪%

ছয় মাস শেষ হলেও চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) মোট বরাদ্দের মাত্র ২৪ শতাংশ ব্যয় হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Jan 2022, 04:27 PM
Updated : 24 Jan 2022, 04:34 PM

জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সরকারের উন্নয়ন কাজের বাস্তবায়নের এ চিত্র গত ছয় অর্থবছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বনিম্ম।

ছয় বছরের মধ্যে করোনাভাইরাস মহামারীকালে এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এর চেয়ে কম এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল। ওই সময়কালে ২৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ অর্থ ব্যয় করতে পেরেছিল প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা, বিভাগ ও মন্ত্রণালয়গুলো।

অর্থনীতিবদরা অর্থবছরের প্রথমার্ধে এডিপি বাস্তবায়নের হার অনেক কম হওয়ার বিষয়ে সেই পুরনো কথাই বলছেন।

তারা বলেন, সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের পরও বছরের শুরুর দিকে কাজের গতি থাকছে না। বরাবরের মতো এবারও তাই হয়েছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরীবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগর (আইএমইডি) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অনুমোদিত মোট বরাদ্দের মাত্র ২৪ দশমিক ০৬ শতাংশ বা ৫৬ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।

গত অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রথমার্ধে ৫১ হাজার ২৬৬ কোটি টাকার এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছিল।

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য সরকার ২ লাখ ২৩ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব ১২ হাজার ৯০১ কোটি টাকাসহ মোট ২ লাখ ৩৬ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন দেয়।

আইএমইডির প্রতিদেন অনুযায়ী এর আগের ছয় অর্থবছরের মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ বাস্তবায়ন হলেও আর কোনও অর্থবছরেই ২৬ শতাংশের কম বাস্তবায়ন হয়নি।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এডিপির প্রথম দিকের বাস্তবায়ন চিত্র প্রতিবছরই একই ধরনের হচ্ছে। এটা পুরনো গল্প। মূলত মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প বাস্তবায়নে জড়িত কর্মকর্তাদের দক্ষতা না বাড়ানোর কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে।

মান সম্পন্ন উন্নয়ন কাজ নিশ্চিত করতে দক্ষ জনবল গড়ে তোলার পাশাপাশি পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা জোরদার করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

“চলমান পরিস্থিতিতে সরকারি বিনিয়োগ বাড়িয়ে দেশের অর্থনীতির গতি সঞ্চার করার দায়িত্ব সরকারকেই পালন করতে হবে,” যোগ করেন তিনি।

এদিকে আইএমইডির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, অর্থবছরের ছয় মাস চলে গেলেও এডিপি বাস্তবায়নে জড়িত ৫৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে ৭টি ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের বরাদ্দের ১০ শতাংশও বাস্তবায়ন করতে পারেনি।

সেগুলো হচ্ছে- পরিসংখ্য্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ ১ দশমিক ৬১ শতাংশ, সুরক্ষা বিভাগ ৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন বিভাগ ৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ৯ শতাংশ এবং স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ বরাদ্দ বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছে।

এদিকে এডিপি বরাদ্দের দিক দিয়ে বড় ১৫ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫২ দশমিক ৮৪ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করেছে ৩৬ শতাংশ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ২৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ, স্থানীয় সরকার বিভাগ প্রায় ২৭ শতাংশ, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ২৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ, রেলপথ মন্ত্রণালয় প্রায় ২৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রনালয় প্রায় ২৫ শতাংশ বরাদ্দ ব্যয় করতে পেরেছে।

বাকি আট মন্ত্রনালয়ের কোনটিই ২৪ শতাংশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি বলে প্রতিবেদনের তথ্যে দেখা গেছে।