তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিমউদ্দিনও দাবি করেছেন, ঋণ শ্রেণিকরণের সুবিধার মেয়াদ না বাড়ালে অন্তত ৫০ শতাংশ ব্যবসায়ী খেলাপি হবেন।
মহামারীকালীন মন্দা কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি সহায়তা এখন আরও বেশি দরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, তা না হলে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি পুনরুদ্ধার কঠিন হয়ে পড়বে।
শনিবার এফবিসিসিআই আয়োজিত কাউন্সিল অব চেম্বার প্রেসিডেন্টস-২০২২ এর মতবিনিময় সভায় এসব দাবি উঠে এসেছে বলে সভা শেষে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় সংগঠনটি।
এর আগে দেশে কোভিড সংক্রমণের পর দুই বছর ধরে চলে আসা ঋণ শ্রেণিকরণ সুবিধা ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বাড়াতে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেয় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনটি।
তবে ডিসেম্বরের শেষের দিকে ব্যাংকার্স সভায় এ সুবিধা আর বাড়ানো হবে না বলে জানিয়ে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দুই বছর পর এ সুবিধা উঠিয়ে নেওয়ায় এখন ঋণ গ্রহীতাদের নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করতে হবে।
মহামারীকালে এতদিন ঋণ শ্রেণিকরণ সুবিধার আওতায় ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে যেসব কিস্তি পরিশোধের কথা সেগুলোর মোট বকেয়া বা কিস্তির ২৫ শতাংশ পরিশোধ করলে গ্রাহককে আর ঋণ খেলাপি করা হয়নি। নিয়মিত হিসাবে রাখা হয়েছে। বাকি অর্থ পরে পরিশোধের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
শনিবার এফবিসিসিআই ভবনে আয়োজিত এ সভায় যোগ দেওয়া দেশের জেলা, নগরী ও নারী উদ্যোক্তাদের চেম্বারগুলোর সভাপতি ও সহ সভাপতিসহ ব্যবসায়ী নেতারা ঋণ শ্রেণিকরণের সুবিধার সময় বাড়ানোর বিষয়েই জোর দেন বেশি।
এছাড়া তারা ব্যবসা-বাণিজ্যের বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে ভ্যাট এবং করহার যৌক্তিক করার দাবি জানান।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সভায় ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, মহমারীতে বিপর্যস্ত ব্যবসা-বাণিজ্যের মধ্যেও রাজস্ব আদায় করতে নানাভাবে তাদেরকে নানাভাবে হয়রানি ও ভীতির পরিবেশ তৈরি করছেন রাজস্ব কর্মকর্তারা।
“স্থানীয় পর্যায়ে চাঁদাবাজিরও শিকার হচ্ছেন। করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরও জেলা পর্যায়ের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা সরকার ঘোষিত প্রণোদনা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন। এ কারণে প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের পক্ষের মহামারি পরবর্তী উত্তরণ কঠিন হয়ে পড়ছে।“
এ ছাড়াও অডিটে সিঙ্গেল অ্যাকাউন্ট বাস্তবায়ন হলে তা পুরো অর্থনীতিতে বিপর্যয় আনবে বলে মত দেন ব্যবসায়ীরা।
তারা বলেন, কারখানা স্থাপনে ৩৩টি লাইসেন্সের দরকার হয়। এসব সনদ নিতে বিপুল ভোগান্তির শিকার হতে হয় উদ্যোক্তাদের। এ সমস্যা সমাধানে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালুর দাবি জানান ব্যবসায়ীরা।
একই সঙ্গে লাভ ক্ষতি নির্বিশেষে টার্নওভার কর বিধান বাতিল করে শুধু আয়ের ওপর কর আরোপের দাবি জানান তারা।
চেম্বারের ক্ষমতায়ন
কয়েকটি চেম্বারের নেতারা চেম্বার বা ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলোর ক্ষমতায়নের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বক্তব্য দেন।
এসময় চিটাগাং উইম্যান চেম্বারে সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী বলেন, চেম্বারের সভাপতিদের সিআইপির মর্যাদা দিতে হবে।
জামালপুর চেম্বারের রেজাউল করিম রঞ্জু এফবিসিসিআই সভাপতিকে সচিবের মর্যাদা দেওয়ার দাবি তোলেন। এসময় ব্যবসায়ী নেতারা বলে ওঠেন, (এফবিসিসিআই) সভাপতিকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দিতে হবে।
বৈঠক শেষে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এফবিসিসিআই জানায়, ব্যবসায়ীরা সভায় বলেছেন, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ধাক্কার পর এখন ওমিক্রনের বিস্তারে আবারও ব্যবসা-বাণিজ্যে নাজুক পরিস্থিত তৈরি হয়েছে। এমন অবস্থায় অনেক ব্যবসায়ীর ঋণের কিস্তি দেয়ার সক্ষমতা নেই।
“বাংলাদেশ ব্যাংক সময় না বাড়ালে ঋণগ্রহীতাদের অনেকেই খেলাপি হবেন, যা দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হবে।“
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, মহামারী নিয়ন্ত্রণে সরকারের নির্দেশে যেসব খাতের ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছিল সেখাতগুলো এখনও প্রণোদনার ঋণ পায়নি। মহামারীতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা। কিন্তু অন্যান্য প্রণোদনা তহবিলের অর্থ প্রায় শতভাগ ছাড় হলেও এসএমই প্রণোদনার বড় অংশ বিতরণ হয়নি।
দেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে সরকারের নীতি নির্ধারণী বৈঠকে বেসরকারি খাতকে রাখার আহ্বান জানিয়ে জসিমউদ্দিন বলেন, অর্থনীতিতে ৮২ শতাংশ অবদান রাখছে বেসরকারি খাত। তাই বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে যে কোনো নীতি প্রণয়নে এফবিসিসিআইয়ের মতামত থাকা জরুরি।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিল অব চেম্বার প্রেসিডেন্টসের সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু।
সভায় বিভিন্ন জেলা চেম্বারের নেতা এবং এফবিসিসিআইয়ের পরিচালকরা বক্তব্য দেন।