গেল বছরে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় হতাহতের বাইরে নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৪৭ জন শ্রমিক এবং আহত হন ১২৫ জন।
বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের ওপর ভিত্তি করে কর্মক্ষেত্রে শ্রম পরিস্থিতির এ চিত্র রোববার তুলে ধরে বিলস। প্রতিবেদনে দুর্ঘটনা, নির্যাতন, শ্রম অসন্তোষ ও সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।
এতে দেখা যায়, আগের বছরের তুলনায় কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ৩২৪ জন শ্রমিক বেশি মারা গেছেন, শতকরা হারে ৪৪ শতাংশ।
বিলসের প্রতিবেদনে বলা হয়, গেল বছরে বিভিন্ন খাতে ৪৩১টি শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটে; এর মধ্যে ১৭২টি শ্রমিক অসন্তোষ ঘটে তৈরি পোশাক খাতে।
সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যেরভিত্তিতে দেখা যায়, ২০২১ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় এক হাজার ৫৩ জনের মৃত্যু হয়; এর মধ্যে এক হাজার তিন জন পুরুষ এবং ৫০ জন নারী শ্রমিক। এ সময়ে আহত হন ৫৯৪ জন।
আগের বছর ২০২০ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় বিভিন্ন খাতে ৭২৯ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছিল; এর মধ্যে ৭২৩ জন পুরুষ এবং ছয় জন নারী ছিলেন।
সেই হিসাবে ২০২১ সালে আগের বছরের তুলনায় কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় শ্রমিক নিহতের পরিমাণ ৪৪ শতাংশ বেড়েছে।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৫৪ জনের মৃত্যু হয় নির্মাণ খাতে এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ ৮৭ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয় কৃষি খাতে।
এছাড়া খাদ্য উৎপাদনকারী শিল্পে ৫৫ জন, দিনমজুর ৪৬ জন, মৎস্য ও মৎস্য শ্রমিক ২৭ জন, নৌ-পরিবহন খাতে ২৪ জন, অভিবাসী শ্রমিক ১৮ জন, জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পে ১২ জন, বিদ্যুৎ খাতে ১১ জন, তৈরি পোশাক শিল্পে চার জন এবং অন্যান্য খাতগুলোতে যেমন স্টিল মিল, মেকানিক, ইট ভাটা, হকার, চাতালসহ ইত্যাদি খাতে ১০২ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়।
গত বছর কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ৫৯৪ জন শ্রমিক আহত হন। এর মধ্যে ৫৭১ জন পুরুষ এবং ২৩ জন নারী শ্রমিক। সবচেয়ে বেশি আহত হয়েছেন মৎস্য খাতে ১৭৬ জন। পরিবহন খাতে এ সংখ্যা ৮০ জন, নির্মাণে ৪৫ জন এবং জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পে ৪৪ জন।
২০২০ সালে বিভিন্ন খাতে আহত হয়েছিলেন ৪৩৩ জন শ্রমিক। সেই হিসাবে আহত হওয়ার ঘটনা ৩৭ শতাংশ বেড়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে কর্মস্থলে আসা-যাওয়ার পথে ৯১ জন শ্রমিক নিহত এবং ১১৪ জন শ্রমিক আহত হন। এর মধ্যে ১২ জন নারী শ্রমিকসহ ৬২ জন শ্রমিক নিহত এবং কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে চার জন নারী শ্রমিকসহ ২৯ জন শ্রমিক নিহত হন।
প্রতিবেদনে ২০২১ সালে ২৮৬ জন শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন বলে উঠে এসেছে। এর মধ্যে ২৩২ জন পুরুষ ও ৫৪ জন নারী।
নির্যাতিতদের মধ্যে ১৪৭ জনের প্রাণহানি ঘটে। এছাড়া ১২৫ জন আহত, ৬ জন নিখোঁজ, ২ জনের ক্ষেত্রে আত্মহত্যা, ৫ জন অপহৃত হওয়ার পর উদ্ধার হয়েছেন।
২০২০ সালে ২৩২ জন শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন।
গেল বছর পরিবহন খাতে নির্যাতনের শিকার হওয়া শ্রমিকের সংখ্যা বেশি ৯৯ জন; এর মধ্যে ৭৬ জন নিহত, ১৯ জন আহত ও ২ জন নিখোঁজ হয়েছেন। অপহৃত হওয়ার পর ২ জন শ্রমিককে হাত পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ।
এছাড়া গৃহে, মৎস্য খাতে, নিরাপত্তায় এবং কৃষিতে শ্রমিকরা বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
অপহৃত অবস্থা থেকে ৮ জনকে উদ্ধার করা হয়েছিল। এদের মধ্যে ২১৫ জন পুরুষ এবং ৮৫ জন নারী শ্রমিক।
তৈরি পোশাক খাতে কর্মক্ষেত্রের বাইরে ৮৭ জন শ্রমিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলে, যার মধ্যে ৩০ জন নিহত, ৩৭ জন আহত ও ২ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ১৩ জনের ক্ষেত্রে আত্মহত্যার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অপহৃত হওয়ার পর উদ্ধার করা হয়েছে ৩ জনকে।
২০২১ সালে বিভিন্ন খাতে সবমিলিয়ে ৪৩১টি শ্রমিক আন্দোলনের ঘটনা ঘটেছিল। সবচেয়ে বেশি ১৭২টি আন্দোলন ঘটে তৈরি পোশাক খাতে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫০টি পরিবহনে এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩৬টি শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটে পাট শিল্পে।
এছাড়া গণমাধ্যমে ২৩টি, কৃষি খাতে ২১টি, চিনি শিল্পে ১৮টি, টেক্সটাইল শিল্পে ১২টি, বিড়ি শিল্পে ৯টি, রেলওয়েতে ৮টি, খাদ্য উৎপাদনকারী খাতে ৬টি, হকার ৫টি, অভিবাসী শ্রমিক ৫টি এবং অন্যান্য খাতে ৬৬টি শ্রমিক অসন্তোষ হয়।
প্রতিবেদনে সর্বোচ্চ ১২৬টি শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা বকেয়া বেতনের দাবিতে ঘটেছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
এছাড়া দাবি আদায়ে ১১৫টি, অধিকার আদায়ে ৭৪টি, বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে ২৭টি, লে অফের কারণে ২৬টি, ভাতার দাবিতে ২২টি, বোনাসের দাবিতে ১৬টি এবং অন্যান্য দাবিতে ২৯টি শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটে।
২০২০ সালে সবমিলিয়ে শ্রমিক আন্দোলনের ঘটনা ছিল ৫৯৩টি।