পদ্মা ব্যাংকের ‘লোকসান গোপনের আয়োজনে’ উদ্বেগ টিআইবির

বিদেশি বিনিয়োগ পেতে পদ্মা ব্যাংকের আর্থিক বিবরণী থেকে লোকসানের তথ্য গোপনে বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মতি দেওয়ার যে খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তা নিয়ে উদ্বেগ দেখিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Jan 2022, 02:26 PM
Updated : 8 Jan 2022, 02:26 PM

এমন সুবিধাকে ‘অনৈতিক ও প্রতারণামূলক’ আখ্যা দিয়ে শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি বলছে, “এটি সামনের দিনে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশ্বাসযোগ্যতার সমস্যাকে প্রকটতর করার পাশাপাশি বিদেশে সুনাম ক্ষুণ্ন করার ঝুঁকি তৈরি করবে।”

লোকসানে ডুবে থাকা পদ্মা ব্যাংকের নাম ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারির আগে ছিল

ফারমার্স ব্যাংক। ২০১৩ সালে ব্যাংকটি চালুর পর থেকে চেয়ারম্যান ছিলেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য, সাবেক আমলা মহীউদ্দীন খান আলমগীর।

তিন বছরের মধ্যে ঋণ কেলেঙ্কারিসহ নানা অনিয়মে ধুঁকতে থাকা ব্যাংকটিতে ২০১৬ সালে পর্যবেক্ষক বসিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। চাপের মুখে পরের বছর ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদ ছাড়েন মহীউদ্দীন খান আলমগীর।

নতুন চেয়ারম্যান হন রেইস অ্যাসেট ম্যানেজেমেন্ট ও কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত। এরপর ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি ফারমার্স ব্যাংক নাম পাল্টে পদ্মা ব্যাংক হয়।

ওই সময় পদ্মা ব্যাংককে উদ্ধার করতে ৭১৫ কোটি টাকার মূলধন জোগায় রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচটি ব্যাংক, যা ব্যাংকটির মোট মূলধনের ৬৬ শতাংশ।

তাতেও রেহাই হয়নি, টিকে থাকার জন্য ব্যাংকটি সরকারি ব্যাংকের আমানতের বিপরীতে শেয়ার ইস্যু করার অথবা সরকারি কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার প্রস্তাব দেয় পদ্মা ব্যাংক।

অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল বিষয়টি নিয়ে পরে বলেছিলেন, ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন হলে সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

টিআইবি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, “সমস্যাকবলিত পদ্মা ব্যাংকের জন্য ৭০ কোটি ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ আনতে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডেলমর্গানের শর্তানুযায়ী ব্যাংকটির আর্থিক লোকসানের তথ্য হিসেব বিবরণী থেকে গোপন রেখে পৃথক হিসাব তৈরির ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্মতি দিয়েছে, পরবর্তী দশ বছরে যা ব্যাংকটির মুনাফা থেকে সমন্বয় করার কথা। দেশের ব্যাংকিং খাতে এমন অনৈতিক উদ্যোগ নজিরবিহীন।”

বিনিয়োগ আনতে ব্যাংকটির বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন ‘স্বচ্ছ’ দেখাতেই পদ্মা ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংককে তথ্য গোপনের প্রস্তাব দিলে তা অনুমোদন করা হয় বলে একাধিক জাতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বিবৃতিতে বলেন, পরিচালকদের ব্যাপক আর্থিক অনিয়মসহ দুর্নীতি ও খেলাপি ঋণে ডুবতে থাকা বেসরকারি ব্যাংকটিকে বাঁচাতে ৭০০ কোটি টাকার বেশি মূলধন যোগানোসহ বেশ কিছু নীতি সহায়তাও দিয়ে আসছে সরকার। কিন্তু তারপরও ব্যাংকটির ঘুরে দাঁড়ানো তো দূরের কথা, বরং লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে দিনকে দিন।

“এমন অবস্থায় লোকসানের তথ্য বাদ দিয়ে ব্যাংকটির আর্থিক বিবরণী পরিষ্কার দেখানোর চেষ্টা হিসাববিজ্ঞানের দিক থেকে শুধু অনৈতিকই নয় বরং প্রতারণামূলকও বটে, এটি ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের নামে লুণ্ঠনতন্ত্রের পৃষ্ঠপোষকতার নামান্তর।”

ফারমার্স ব্যাংককে অবসায়ন না করে পদ্মা ব্যাংক নামে বাঁচিয়ে রাখার ‘ভুল সিদ্ধান্ত’ কার বা কাদের স্বার্থে সরকার বয়ে চলছে সেই প্রশ্ন তুলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।

তিনি বলেন, “আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকও কেন ব্যাংকটি বাঁচাবার নামে নজিরবিহীন সব উদাহরণ তৈরির দায় নিচ্ছে তা পরিষ্কার নয়। তার চেয়েও বড় প্রশ্ন হচ্ছে, আর্থিক বিবরণী কৃত্রিমভাবে ভালো দেখালেই প্রতিশ্রুত বিদেশি বিনিয়োগ যোগাড় করা সম্ভব হবে তার গ্যারান্টি কি?”

আর্থিক খাতের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ ব্যাংক তার সিদ্ধান্ত পুর্নমূল্যায়ন করবে বলে আশাপ্রকাশ করেছে টিআইবি।