ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি ৬% ছাড়িয়ে বছরের সর্বোচ্চ

খাদ্যসহ ভোগ্য পণ্যের দামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্য দিয়ে সদ্যবিগত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি ছয় শতাংশের কোঠা ছাড়িয়ে গেছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Jan 2022, 03:09 PM
Updated : 6 Jan 2022, 03:09 PM

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বৃহস্পতিবার হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে গত মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ।

অর্থাৎ ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে দেশের মানুষ যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পেয়েছিল গত মাসে সেই সেবা বা পণ্য কিনতে ১০৬ টাকা ০৫ পয়সা দিতে হয়েছে।

পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতির এই হার ২০২১ সালের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ২৯ শতাংশ।

২০২১ সালের ১২ মাসের মূল্যস্ফীতির গড় দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ, যার আগের বছর ছিল ৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ। গড় মূল্যস্ফীতির আগের বছরের চেয়ে কম থাকলেও সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না নিয়ে সংশয় প্রকাশ করার সুযোগ আছে।  

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৩০ শতাংশের মধ্যে বেধেঁ রাখার লক্ষ্য নিয়েছে সরকার। আগের অর্‌থবছরে ৫ শতাংশে বেঁধে রাখার লক্ষ্য ছিল সেটাও অর্জিত হয়নি।

বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বরে পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ; অক্টোবরে ছিল ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ।

গত বছর অগাস্ট থেকে মূল্যস্ফীতির পারদ চড়ছে। সে মাসের মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ। ক্রমেই তা বেড়ে ৬ শতাংশ ছাড়াল।

ডিসেম্বর মাসে খাদ্য উপখাতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ। আগের বছরের ডিসেম্বর মাসে এই হার ছিল ৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে ডিসেম্বর মাসে খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি বেশি বেড়ে ৭ শতাংশে ওঠেছে, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৫ দশমিক ২১ শতাংশ।

মূল্যস্ফীতি বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দেশে-বিদেশে পণ্যের দাম বেড়েছে। তাই মূল্যস্ফীতি বাড়ছে।

“পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়াসহ অন্যান্য কারণেও বিদেশি পণ্যের দাম বাড়ছে। সেসঙ্গে ডলারের দাম বাড়ায় দেশের বাজারে বিদেশি পণ্যের দাম আরও বাড়ছে।”

এছাড়া দেশীয় পণ্যের মধ্যে বিশেষ করে চালের দাম সরকার কমাতে পারছে না বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিশেষ করে আমন মৌসুমের ধান কাটার পরও দেশের বাজারে চালের দাম বেড়েছে।

অর্থীতির এই গবেষক বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের এগ্রিকালচার ডিপার্টমেন্ট ইতিমধ্যেই আমাদেরকে সতর্ক করে দিয়েছে যে এবারের আমন মৌসুমে গত বছরের তুলনায় ৮ লাখ টন চাল কম উৎপাদন হয়েছে। গত বছর চালের সংকট মোকাবিলায় সরকার প্রায় ১০ লাখ টন চাল আমদানি করেছিল। এর সঙ্গে নতুন করে আরও আট লাখ টন কম উৎপাদন হলে ঘাটতি অনেক বেড়ে যাবে।”

তিন চার মাসের মধ্যে তার প্রভাব পড়তে শুরু করবে জানিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে দ্রুত চাল আমদানির পরামর্শ দেন ড. মনসুর।

বিবিএসসের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিসেম্বরে গ্রামেও সাধারণ মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৬ দশমিক ২৭ শতাংশ হয়েছে, যা আগের বছরের এই মাসে ছিল ৫ দশমিক ২৮ শতাংশ।

এ মাসে গ্রামে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ, যা আগের বছরের ডিসেম্বরে ছিল ৫ দশমিক ৬০ শতাংশ।

আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ব্যাপক বেড়েছে। আগের বছরের ডিসেম্বরের ৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশে ওঠেছে।

অপরদিকে শহরাঞ্চলে সাধারণ মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ হয়েছে। আগের বছর একই সময়ে ছিল ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ।

পয়েন্ট টু পয়েন্ট হিসাবে গেল ডিসেম্বরে শহরাঞ্চলে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ৪ দশমিক ৪১ শতাংশ হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

আর শহরে এ সময়ে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৭ দশমিক ০৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। আগের বছর একই সময়ে যা ছিল ৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ।