জ্বালানি নিরাপত্তায় নতুন নীতি প্রস্তাব ক্যাবের

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম, দুর্নীতি ও ভোক্তা স্বার্থ পরিপন্থি পদক্ষেপ নিয়ে ভোক্তার অধিকার রক্ষায় জাতীয় সংগঠন ক্যাব এতদিন যেসব অভিযোগ করে আসছিল, এবার তারা ‘বাংলাদেশ জ্বালানি রূপান্তর নীতি’ শিরোনামে একটি প্রস্তাব নিয়ে এসেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Dec 2021, 06:00 PM
Updated : 30 Dec 2021, 06:00 PM

অধিক কার্বনযুক্ত জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে ভবিষ্যতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উপর নির্ভরতা বাড়ানো এবং আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় খনিজ সম্পদের ব্যবহার বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে এই প্রস্তাবে।

প্রস্তাবিত নীতি নিয়ে বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎভবনের মুক্তি হলে নাগরিক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে ক্যাব।

অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের থাকার কথা থাকলেও অসুস্থতার কারণে তিনি সংযুক্ত থাকতে পারেননি বলে আয়োজকরা জানান। সরকারি সংস্থাগুলোর কোনো প্রতিনিধিকেও অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজীম উদ্দিন খান অনুষ্ঠানে বলেন, বিদ্যুৎ-জ্বালানির অধিকার ছাড়া মৌলিক অধিকারের নিশ্চিত করা সম্ভব না। আবার জ্বালানির অধিকার নিশ্চিত করতে গিয়ে পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতি সাধনও করা যাবে না। পরিবেশের ক্ষতিকর জ্বালানি থেকে সরে আসতেই এই প্রস্তাব।

প্রস্তাবে জ্বালানি অধিকার কীভাবে সংবিধান নিশ্চিত করেছে, তা আলোচনা করা হয়েছে। চলমান জ্বালানি ব্যবস্থাপনায় কার্বনযুক্ত জ্বালানিকে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করে তানজীম বলেন, “কোম্পানিগুলোর মধ্যে ব্যাপক দুর্নীতি হচ্ছে। লুণ্ঠনমূলক মূল্য ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে প্রতিযোগিতাহীনতা রয়েছে। কাউকে কাউকে বিশেষ ‍সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এখানে ব্যাপক স্বার্থের সংঘাত রয়েছে। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের কারণে জনগণের স্বার্থ ক্ষুন্ন হচ্ছে। আমাদের যে আমলারা আছেন তারা কোম্পানিগুলোর শীর্ষ দায়িত্বে বসছেন। ফলে জনস্বার্থ রক্ষার জন্য কেউ থাকছে না।”

বর্তমান মূল্যহার নির্ধারণ পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার সুপারিশ করা হয়েছে প্রস্তাবে। প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়ানোর কৌশল নিয়েও সুপারিশ করা হয়েছে।

তানজীম বলেন, “রূপান্তরের মধ্য দিয়ে আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানির উপর নির্ভরশীলতা বাড়াতে চাই। এতে করে জ্বালানি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পাওয়া যায়। এখন জ্বালানির একটা বড় উৎস হচ্ছে বিদেশি রাষ্ট্র। সেখান থেকে আমদানি করতে হয়। আমদানি নির্ভরতা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিসহ আন্তর্জাতিক রাজনীতি থেকে বাইরে থাকার জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানি একটা নতুন উদাহরণ তৈরি করছে। নেপাল এইক্ষেত্রে ভালো উদাহরণ।”

অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, জ্বালানির খুচরা মূল্যের মধ্যে যে ব্যয়গুলো ঢুকেছে, সেগুলো ঠিক আছে কি না, সেটা কে খুঁজে দেখবে? এর জন্য কেউ নেই।

“জ্বালানি খাতে আমরা এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন তৈরি করেছি। তাদের এটা দায়িত্ব। তারা এরজন্য একটা শুনানি করে। কিন্তু শুনানিতে আধিপত্য করে ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের মাধ্যমেই দাম নির্ধারণ হচ্ছে সেখানে। সরকার প্রতিযোগিতামূলক পুঁজিবাদে না গিয়ে স্বজন তোষণমূলক পুঁজিবাদে যাচ্ছে। এই লড়াইয়ে সরকার যেন ব্যবসায়ীদের পক্ষ না নিয়ে জনগণের পক্ষে থাকে সেজন্যই এই প্রস্তাবিত রূপান্তর নীতি।”

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে না যাওয়ায় পক্ষে মত দিয়ে তিনি বলেন, “তার চেয়ে বরং আমরা দেশীয় গ্যাস উৎপাদন বাড়াই, কিংবা ভুটান বা নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করি।”

ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ক সরকারি কোম্পানিগুলোতে আমলাদের নেতৃত্বের বিরোধিতা করে বলেন, ‘তারা যেখানে ভোক্তার অধিকার সুক্ষার দায়িত্বে থাকার কথা, সেখানে তারা কোম্পানির লাভ-লোকসান নিয়ে চিন্তা করে। এটা স্পষ্টতই স্বার্থের দ্বন্দ্ব।

“আমাদেরকে আমলামুক্ত ও কার্বনমুক্ত জ্বালানি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এটাই আজকের প্রস্তাবনার উদ্দেশ্য। জ্বালানি খাতে সুশাসন নিশ্চিত করা গেলে তা জনজীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক বদরুল ইমাম, আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, স্থপতি মোবাশ্বের হেসোন, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বডুয়াসহ ক্যাবের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন।