‘শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা আর মানুষের আকাঙ্ক্ষা লিখছে উন্নয়নের গল্প’

শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব আর সাধারণ মানুষের মধ্যে উন্নয়নের আকাঙ্ক্ষা এ দুইয়ের সম্মিলনে উন্নয়নের গল্প লিখছে বাংলাদেশ, এমন কথা বলেছেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Dec 2021, 05:52 PM
Updated : 23 Dec 2021, 05:52 PM

বৃহস্পতিবার ‘বাংলাদেশ ব্যাংক পুরস্কার ২০২০’ গ্রহণ করে বাংলাদেশের ৫০ বছরের অর্থনৈতিক উন্নয়নের এই মূল্যায়ন তুলে ধরেন অর্থনীতির এই অধ্যাপক।

১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব প্রথম নেওয়ার পর শেখ হাসিনা কীভাবে অর্থনীতির জটিল বিষয়ও বুঝে পরিকল্পনা সাজাতে চেয়েছিলেন, তা তুলে ধরেন ওয়াহিদউদ্দিন।  

“১৯৯০ দশকের শেষ ভাগের কথা, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর প্রথম টার্মে তখন উন্নয়ন বাজেটের আকার কী হবে, তা নিয়ে তখনকার ভারপ্রাপ্ত পরিকল্পনামন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী এই দুজন দুই ধরনের মতামত দিয়েছিলেন। তা ছিল লিখিত আকারে যুক্তি সহকারে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ব্যাখ্যা করে প্রতিবেদন।”

“পরিকল্পনামন্ত্রীর ব্যাখ্যাটা ছিল কিছুটা সাপ্লাই সাইড ইকোনমিকসের তত্ত্বের মতো, বেশি খরচ করলে আয় বাড়বে, চাহিদা বাড়বে প্রবৃদ্ধি বাড়বে। আর অর্থমন্ত্রীর বাজেটের বক্তব্য ছিল যে বাজেটে বড় ধরনের ঘাটতি হলে বড় ঘাটতির অর্থায়ন হলে মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি তৈরি হবে। এরপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উভয় ব্যাখ্যা মনোযোগ সহকারে পড়ে আমার পরামর্শ চেয়েছিলেন।”

আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের আগে যে তত্ত্বাধায়ক সরকার ছিল, সেই সরকারে অর্থ উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেছিলেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

বাংলাদেশের স্টিয়ারিংও টানা এক যুগ ধরে শেখ হাসিনার হাতে। ফাইল ছবি

তিনি বলেন, “কী পরামর্শ আমরা দিয়েছিলাম, সেটা বড় কথা নয়। কিন্তু আমি তখন খুব চমকিত হয়েছিলাম এই ভেবে যে এই ধরনের অর্থনীতির তাত্ত্বিক বিতর্ক নিয়ে একজন সরকার প্রধান নিজে পুঙ্খনাপুঙ্খ পর্যালোচনা করেন।

“ওই দিন খুব সকালে নাকি তিনি (প্রধানমন্ত্রী) উঠেছিলেন। উঠে তিনি (দুই মন্ত্রীর) প্রতিবেদন পড়ে আত্মস্থ করতে চেয়েছিলেন। এরপর আমার কাছ থেকে আবার নিরপেক্ষ একটা মতামতও চাইলেন। আমার তখন মনে হয়েছিল, আমরা সুশাসন যেটা বলি, এটা সেটার একটা আদর্শ দৃষ্টান্ত।”

আর বাংলাদেশের মানুষের উন্নয়নের যে আকাঙ্ক্ষা রয়েছে, তা অন্য অনেক দেশে নেই বলে মনে করেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

“আমাদের দেশের খুব গরিব মানুষরাও মনে করেন যে দারিদ্র্য তাদের ভাগ্য নয়। এটি উন্নয়নের আকাঙ্ক্ষা, এটা একটা বড় শক্তি। মানুষের এই আকাঙ্ক্ষা বোধহয় মুক্তিযুদ্ধ থেকেই এসেছে এবং এখন পর্যন্ত আছে।”

তার ভাষ্যে, “এত দিন আমরা যে উন্নয়নের সাফল্য পেয়েছি, সেখানে সাধারণ মানুষ, কৃষক, ক্ষুদ্র মাঝারি, বড় শিল্প উদ্যোক্তাদের একটা বৈশিষ্ট্য ছিল, যখন যেই সুযোগ এসেছে তার পূর্ণ ব্যবহার করেছেন। যতটুকু তাদের সাধ্যের মধ্যে ছিল, এমনকি ক্ষুদ্র কৃষক। আর সরকার সেখানে প্রয়োজনীয় নীতি সমর্থন দিয়েছেন এবং সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। এটাই হলো বাংলাদেশের সাফল্যের মূল কথা।”

গত এক দশকে অর্থনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়েছে অনেক দূর; স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটানোর শর্তগুলোও পূরণ করে ফেলেছে।

নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে মানব সম্পদ তৈরি এবং প্রশাসনের দক্ষতা ও জবাবদিহিতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন এই অর্থনীতিবিদ।

“আমরা এখন উন্নয়নের নতুন পর্যায়ে পৌঁছেছি। বিশ্ব অর্থনীতিও বদলে যাচ্ছে। উন্নয়নের পর্যায়ে আমাদের নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ অনেক আছে।”

তিনি একইসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়ন কাউকে অনুকরণ করে হয়নি, হয়েছে ‘নিজস্ব মডেলে’।

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। ফাইল ছবি

“কী করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়, প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়, সে বিষয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে, বিশ্ব অর্থনীতিবিদরা এতদিন পরে এখন প্রায় একমত যে উন্নয়নের কোনো ধরাবাঁধা ফর্মুলা নেই। এমনকি বিশ্ব ব্যাংক ২০০৬ সালের একটি প্রতিবেদনে স্বীকার করেছে, একই নীতি ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভিন্ন ফল দেয়। এর অর্থ হল, অন্য দেশের মডেল অনুকরণ করে আসলে লাভ হবে না। ‍নিজেদের অভিজ্ঞতার আলোকে নিজেদের উন্নয়ন কৌশল নিজেদেরকেই নির্ধারণ করতে হবে।”

“উন্নয়নের মডেল হিসেবে বহুদিন ধরেই পূর্ব এশিয়ার ব্যাঘ্র অর্থনীতিগুলোর কথা বলা হত। বিশ্ব ব্যাংকসহ অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা সবসময় উপদেশ দিয়েছে, তাদেরকে অনুকরণ কর। কিন্তু আসলে কাউকে অনুকরণ করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করা যায় না।”

এতদিন ধরে বাংলাদেশ যে নিজের মতো চলেছে, সেই পথই ধরে রাখার পরামর্শ দেন তিনি।

“সুতরাং পূর্ব এশিয়ার টাইগার নয়, আমাদেরকে টাইগার হতে হলে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারই হতে হবে।”

বাংলাদেশের মৌলিক অর্থনীতিতে অসামান্য অবদানের জন্য অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক পুরস্কার-২০২০’ দেওয়া হয়।

ঢাকার মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) মিলনায়তনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদের গলায় স্বর্ণ পদক পরিয়ে দেন। গভর্নর ফজলে কবীর নগদ ৫ লাখ টাকা তার হাতে তুলে দেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ফজলে কবীর বাংলাদেশ ব্যাংক, পাঁচটি পাঁচশালা পরিকল্পনা এবং দুটি ব্যাংক রিফর্মসহ অর্থনীতির প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ওয়াহিদউদ্দিনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অর্থমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, চলতি অর্থবছরের মধ্যে অর্থাৎ জুন মাসের মধ্যে রিজার্ভ ৫০ বিলিয়ন ডলার হবে। লক্ষ্য অনুযায়ী ৭ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধিও অর্জিত হবে।