বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম জানান, এর আগে এক মাসে এর চেয়ে বেশি চা কখনও উৎপাদন হয়নি।
উৎপাদন বাড়লেও চায়ের নিলাম মূল্য কম হওয়ায় বাগান মালিকরা লোকসানে আছেন বলে চা শিল্প সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য। চায়ের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে প্রতিবেশী দেশ থেকে অবৈধ পথে চায়ের প্রবেশ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন তারা।
চা বোর্ডের তথ্য মতে, অক্টোবরে দেশে এক মাসে সর্বোচ্চ ১ কোটি ৪৫ লাখ কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে। এর আগে ২০১৯ সালে সর্বোচ্চ ১ কোটি ৩৪ লাখ কেজি উৎপাদন হয়।
২০২১ সালে প্রথম ১০ মাসে মোট চা উৎপাদন হয়েছে ৭ কোটি ৯৩ লাখ কেজি, যা ইতিমধ্যে বছরের লক্ষ্যমাত্রা ৭ কোটি ৭৭ লাখ কেজিকে ছাড়িয়ে গেছে।
চলতি বছর জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত প্রতি মাসেই চায়ের উৎপাদন ছিল ১ কোটি ২৩ লাখ কেজির উপরে। সে হিসেবে নভেম্বর ও ডিসেম্বরে উৎপাদন কিছু কম হলেও বছর শেষে ১০ কোটি কেজির মাইলফলক ছোঁয়ার হাতছানি।
বৃষ্টিপাত চা উৎপাদন বাড়িয়েছে বলে জানালেন চা বোর্ডের চেয়ারম্যান আশরাফুল।
টি ট্রেডার্স অ্যান্ড প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশন শ্রীমঙ্গল, বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক জহর তরফদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে প্রকৃতি ছিল খুব অনুকূলে। যখন যেভাবে বৃষ্টি প্রয়োজন ছিল তা হয়েছে।”
দেশের ১৬৭টি চা বাগানের মধ্যে ১৩৬টিই বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে। এর মধ্যে মৌলভীবাজারে সর্বোচ্চ ৯১টি, হবিগঞ্জে ২৫টি, সিলেটে ১৯টি, চট্টগ্রামে ২১টি, পঞ্চগড়ে ৮টি বাগান, রাঙামাটিতে ২টি এবং ঠাকুরগাঁও জেলায় ১টি বাগান আছে।
দেশে প্রতিবছর চায়ের চাহিদা বাড়ছে। চা বোর্ডের হিসেবে, ২০১৭ সালে চাহিদা ছিল প্রায় ৮৬ মিলিয়ন কেজি (উৎপাদন প্রায় ৭৯ মিলিয়ন কেজি)। ২০১৮ সালে তা বেড়ে ৯০ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন কেজিতে উন্নীত হয়।
আর দেশে চাহিদা বাড়ায় চা রপ্তানি কমছিল। তবে গত বছর রপ্তানি বেশ বেড়েছে। আগের বছরের ৬ লাখ কেজি থেকে একলাফে বেড়ে ২০২০ সালে ২১ লাখ ৭০ হাজার কেজি চা রপ্তানি হয়েছে।
তবে চলতি বছর অক্টোবর পর্যন্ত মাত্র ৫ লাখ কেজি চা রপ্তানি হয়েছে। বাকি দুমাসে কি পরিমাণ রপ্তানি হবে তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
তবে বিদেশি ক্রেতাদের যারা বাংলাদেশের চা কিনতে চান তারা প্রায় অর্ধেক দাম প্রস্তাব করায় বাগান মালিকরা রপ্তানিতে উৎসাহ পান না বলে মনে করেন শাহ আলম।
চায়ের উৎপাদন বাড়লেও ন্যায্য দাম না মেলায় বাগান মালিকরা লোকসানে আছেন বলে জানান চা বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা সংসদ এর চেয়ারম্যান এম শাহ আলম।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, মহামারীতে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে যাওয়ায় ২০১৯ সাল থেকেই বাগান মালিকরা ক্ষতিতে আছেন।
“অনেক বাগানে প্রতি কেজি চা পাতা উৎপাদনে ২০০ টাকার উপরে খরচ পড়ে। গড় বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ১৭০-১৮০ টাকা কেজি দরে।”
চা বোর্ডের হিসেবে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে নিলামে প্রতি কেজি চা পাতার গড় মূল্য ছিল ২৯৭ টাকা, যা পরের বছর ১৬৯ টাকায় নামে। গত অর্থবছরে তা ৩০ টাকা বেড়ে ১৯১ টাকায় উঠে। আর চলতি অর্থ বছরে গড়ে ১৯৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “অবৈধ উপায়ে ট্রাকে করে চা পাতা আসছে। এক্সসাইজ বা কাস্টমস ডিউটি ছাড়াই এসব চা ঢুকছে।
“বৈধভাবে আসলে বাজার প্রতিযোগিতা পূর্ণ হত।”
এবিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সীমান্ত এলাকায় অবৈধ চা ব্যবসা ও নিলামের বাইরে চা বিক্রি বন্ধে দুই মাস আগে ‘মোবাইল কোর্ট’ চালু করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “উৎপাদন বাড়াতে হলে বয়স্ক গাছ পরিবর্তন করে নতুন গাছ লাগাতে হবে। কোনো দাতা সংস্থার সহায়তায় স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য প্রকল্প নেওয়া প্রয়োজন। তাহলেই কেবল দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।”
চা বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, রপ্তানি বাড়াতে এক মাস আগে চা শিল্পের জন্য ৪ শতাংশ হারে প্রণোদনা কার্যকর করা হয়েছে।