চরের অবশিষ্ট মানুষকেও দ্রুত বিদ্যুৎ দিতে ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ’

চরের বাসিন্দা এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনও যারা বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে আছেন, তাদের দ্রুত সংযোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে প্রয়োজনে নতুন প্রকল্প হাতে নিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Nov 2021, 02:46 PM
Updated : 26 Nov 2021, 02:46 PM

রংপুর জেলার গংগাচড়া উপজেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে কয়েক হাজার পরিবার এখনও বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে থাকার বিষয়টি নজরে এলে এ নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশের কথা জানিয়ে বলেন, “তিনি বলেছেন, কোনো বাড়ি বা পরিবার অন্ধকারে থাকবে না।”

সরকারপ্রধানের নির্দেশনা অনুযায়ী শতভাগ মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় আনার লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ করে যাওয়ার কথা বলেন তোফাজ্জল হোসেন।

বিদ্যুৎ মন্ত্রাণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জাতীয় গ্রিড লাইন এবং দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকায় সোলার প্যানেলের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ৯৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে সরকার।

বাকিরাও দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ পাবেন জানিয়ে সচিব বলেন, “চর এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের পরিবারগুলোকে দ্রুত বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রয়োজনে নতুন প্রকল্প গ্রহণ করতে বলেছেন।”

পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের (পিডিবিএফ) তথ্য অনুযায়ী, ‘বাংলাদেশের বিদ্যুৎবিহীন প্রত্যন্ত এবং চর এলাকায় সৌর শক্তির উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় রংপুর জেলার রংপুর সদর ও গঙ্গাচড়া উপজেলা এবং লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলায় মোট ১২ হাজার ১৭০টি সোলার হোম সিস্টেম বসানোর কথা ছিল।

এ পর্যন্ত সেখানে ৯ হাজার ৮৪৫টি সোলার সিষ্টেম স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা পিডিবিএফ।

গঙ্গাচড়ায় সর্বশেষ নির্বাচিত চার হাজার ৫০৪ জনের মধ্য থেকে যারা কন্ট্রিবিউশনের অর্থ, এনআইডি জমা দেওয়া এবং অন্যান্য শর্ত পূরণ করেছেন, চলতি বছরের জুন মাসে তাদের ৭১২ জনের মাঝে সোলার হোম সিষ্টেম বিতরণ করা হয়।

গত ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও তালিকাভুক্ত ৯০টি পরিবারকে এই সিস্টেম দিতে পারেনি পিডিবিএফ। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে এলে তার নির্দেশে তাৎক্ষণিকভাবে বিশেষ প্রকল্পে তাদের বাড়িতে সোলার হোম সিস্টেম বসানো হয়।

সচিব জানান,  এসময় বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে থাকা গঙ্গাচড়া উপজেলার বাকি পরিবারগুলোকেও দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পাওয়ার পর ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন পিডিবিএফ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহম্মদ মউদুদউর রশীদ সফদার।

তিনি বলেন, “রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় চরাঞ্চলের তিন হাজার ৭০৮ পরিবারকে কীভাবে বিদ্যুতের আওতায় আনা যায় সে লক্ষ্যে আমরা পল্লী বিদ্যুতের সঙ্গে সমন্বিত ভাবে কাজ করছি।

“যেখানে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া যাবে সেখানে পল্লী বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে। আর যেসব প্রত্যন্ত অঞ্চলে পল্লী বিদ্যুতের লাইন টানা যাবে না, সেখানে সোলার হোম প্যানেল সিস্টেম বসানোর মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে।”

যে সকল প্রত্যন্ত এলাকায় গ্রিড লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব নয় সেখানে সোলার হোম প্যানেল সিস্টেমের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে সরকার।

বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে এখন পর্যন্ত ৬২ লাখ হোম সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে। এসব সোলার প্যানেলের মাধ্যমে ২৬৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।

এসব সোলার প্যানেল সিস্টেমের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছেন ২ কোটি মানুষ। ২০০৯ সালে দেশে ৪৭ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পেতেন।

বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়,দেশে ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা এখন ২৫ হাজার ২৩৫ মেগাওয়াট। যেখানে ২০০৯ সালে এ সক্ষমতা ছিল ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট।

২০০৯ সালে দেশে বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৮ লাখ। বর্তমানে এ সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪ কোটি ১৪ লাখ। এছাড়া ২০০৯ সালে সেচ সংযোগ ছিল ২ লাখ ৩৪ হাজার, বর্তমানে সেচ সংযোগের সংখ্যা ৪ লাখ ৪৬ হাজার।

২০০৯ সালে বিদ্যুৎ খাতে সরকারের বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা। গত ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে ২৮ হাজার ৫৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।