এল আয়কর রিটার্ন দাখিলের মাস

মহামারীর কারণে এবারও আয়কর মেলার আয়োজন করছে না জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), তবে কর দাতাদের সুবিধার জন্য কর অঞ্চলগুলোতে পুরো নভেম্বরজুড়ে চলবে বিশেষ সেবা।

জাফর আহমেদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Oct 2021, 04:01 PM
Updated : 31 Oct 2021, 04:05 PM

সোমবার নভেম্বরের প্রথম দিন থেকেই এ সেবার শুরু হবে। কর অঞ্চলগুলোতে গিয়ে কর দিতে পারবেন করদাতারা।

এছাড়া এ মাসে জাতীয় ট্যাক্স কার্ড এবং জেলা ও সিটি কর্পোরেশনের সেরা করদাতাদের সম্মাননা দেওয়ার আয়োজন করেছে এনবিআর।

বোর্ডের কর বিভাগের প্রথম সচিব মোহাম্মদ আমিনুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতিটি কর অঞ্চলে প্যান্ডেল তৈরি করে বিভিন্ন সেবার বুথ বসিয়ে কর দাতাদের প্রয়োজনীয় সকল ধরনের সেবা নিশ্চিত করা হবে। আমরা ইতোমধ্যে প্রস্তুতি শেষ করেছি।”

তার ভাষায়, বড় পরিসরে আয়কর মেলা না হলেও যে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, তাতে এটাকে ‘ডিসেন্ট্রালাইজড মেলা’ বলা যায়।

“এখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেও মেলার মত পরিবেশ নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি আমরা।”

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের জ্যেষ্ঠ জনসংযোগ কর্মকর্তা (পরিচালক) সৈয়দ এ মু’মেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আসলে আমরা এবার কর অঞ্চলগুলোতেই মেলার সেবা দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছি।”

রিটার্ন দাখিল সহজ করা, কর তথ্য সেবা দেওয়া, জাতীয় আয়কর দিবস উদযাপন এবং জাতীয় ট্যাক্স কার্ড ও জেলা, সিটি কর্পোরেশনের সেরা করদাতাদের সম্মাননাও দেওয়ার আয়োজন ভালোভাবে সারতে তিনটি কমিটি এবং নয়টি উপ কমিটিও গঠন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

প্রতিটি কর অঞ্চলে হেল্প ডেস্ক বসানো হব। করদাতারা তাৎক্ষণিকভাবে কর পরিশোধের প্রাপ্তি স্বীকারপত্র পাবেন। এসব বুথে ই-টিআইএন নিবন্ধন ও পুনঃনিবন্ধনের ব্যবস্থাও থাকবে।

এছাড়া প্রতিটি কর অঞ্চলের ওয়েবসাইটে কর সংক্রান্ত সকল হালনাগাদ তথ্য পাবেন করদাতারা। পাবেন বিভিন্ন ফরম, পরিপত্র, রিটার্ন পূরণের নির্দেশিকা।

এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মু. রহমাতুল মুনিম জানান, এবার সরকারি কর্মকর্তাদের রিটার্ন দাখিলের সুবিধার জন্য ১ থেকে ১৪ নভেম্বর বাংলাদেশ সচিবালয় ও অফিসার্স ক্লাবে রিটার্ন গ্রহণ বুথ ও হেল্প ডেস্ক থাকবে।

এছাড়া সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের জন্য ঢাকা সেনানিবাসের সেনা মালঞ্চে ৯ ও ১০ নভেম্বর দুই দিন রিটার্ন গ্রহণ ও কর বিষয়ে যাবতীয় তথ্য সেবা দেওয়া হবে।

ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামের চারটি কর অঞ্চলে কেন্দ্রীয়ভাবে ও অন্য সব কর অঞ্চল নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় যথাযথ আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে জেলা ও সিটি কর্পোরেশনভিত্তিক সেরা করদাতা সম্মাননা দেবে।

কার কর কোন অঞ্চলে

করদাতার কর্মস্থল, করদাতার নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান, চাকরি বা ব্যবসার ধরন, ‍মুল আয়ের উৎস ইত্যাদি বিবেচনায় কর অঞ্চল নির্ধারিত হয়।

এছাড়া www.incometax.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে Jurisdiction finder  এ প্রয়োজনীয় তথ্য দিলে করদাতার কর অঞ্চল পেয়ে যাবেন।

তবে নতুন করদাতা অনলাইনে টিআইএনের আবেদন করলে টিআইএন সনদের সঙ্গে কর অঞ্চল ও কর সার্কেল উল্লেখ থাকে।

করমুক্ত আয়ের সীমা

বর্তমানে ব্যক্তি শ্রেণির সাধারণ করদাতাদের বার্ষিক তিন লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের জন্য কর দিতে হয় না।

নারী, ৬৫ বছরের বেশি বয়সী এবং তৃতীয় লিঙ্গের করদাতাদের ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

প্রতিবন্ধী করদাতার করমুক্ত আয়ের সীমা ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আর গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা করদাতাদের ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বার্ষিক আয়ে করা দিতে হয় না।

এছাড়া কোনো প্রতিবন্ধী ব্যক্তির বাবা-মা বা আইনানুগ অভিভাবকের প্রত্যেক সন্তানের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা ৫০ হাজার টাকা বেশি হবে। প্রতিবন্ধী ব্যাক্তির বাবা-মা উভয়েই করদাতা হলে যে কোনো একজন এই সুবিধা পাবেন।

কর হার

ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ করদাতাদের ক্ষেত্রে বার্ষিক আয় ৩ লাখ টাকার বেশি হলে তখন কর দিতে হয়। কার কত কর দিতে হবে তা নির্ধারিত হয় আয়ের অংকের ওপর ভিত্তি করে।

আয়

কর

প্রথম ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ওপর

শূন্য

পরবর্তী ১ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ওপর

৫%

পরবর্তী ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ওপর

১০%

পরবর্তী ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ওপর

১৫%

পরবর্তী ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ওপর

২০%

অবশিষ্ট মোট আয়ের ওপর

২৫%

ন্যূনতম কর

করযোগ্য প্রত্যেককে ন্যূনতম একটি অংকের টাকা কর হিসেবে দিতে হবে, যাকে বলা হচ্ছে ন্যুনতম কর। এই ন্যূনতম কর নির্ধারণ হবে করদাতা কোন এলাকায় থাকেন, তার ওপর।

ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ন্যুনতম কর ৫ হাজার টাকা। অন্যান্য সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৪ হাজার এবং সিটি কর্পোরেশনের বাইরে ৩ হাজার টাকা।

যেমন ধরা যাক, কারও আয় যদি ৩ লাখ ১০০ টাকা হয়, ৫ শতাংশ হার ধরে তার কর হয় ৫ টাকা। কিন্তু তিনি যদি ঢাকা সিটির বাসিন্দা হন, তাকেও অন্তত ৫ হাজার টাকা কর দিতে হবে।

আয়কর নিবন্ধন

ব্যক্তি করদাতার আয় যদি করমুক্ত আয়ের বেশি হয়, তাহলে তাকে আয়কর নিবন্ধন নিতে হয়।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত যে কোনো আয়কর কমিশনারেটের অধীনস্ত সার্কেল থেকে এই নিবন্ধ নেওয়ার পর প্রত্যেকের জন্য ১২ ডিজিটের একটি করদাতা শনাক্তকারী নম্বর (টিআইএন) বরাদ্দ হয়।  

রিটার্ন দাখিল না করলে কী হবে

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে করদাতা রিটার্ন দাখিল না করলে ওই করদাতাকে সংশ্লিষ্ট কর অঞ্চল খেলাপী হিসেবে চিহ্নিত করে নোটিস পাঠাবে। সর্বশেষ পরিশোধ করা করের ১০ শতাংশ অথবা এক হাজার টাকা জরিমানা করা হতে পারে তাকে।

এরপরও রিটার্ন দাখিল না করলে প্রতিদিনের জন্য ৫০ টাকা করে জরিমানা করা হবে।

কোনো ব্যক্তি করদাতা, যার আয়ের ওপর আগে কখনও কর ধার্য হয়নি, তিনি রিটার্ন দাখিল না করলে জরিমানা হবে। তবে সেই জরিমানার পরিমাণ ৫ হাজার টাকার বেশি হবে না।