বাংলাদেশের উন্নয়ন-স্থিতিশীলতার জন্য কাজ করবে জাপান: রাষ্ট্রদূত

বাংলাদেশের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার জন্য জাপান কাজ করে যাবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Oct 2021, 06:33 PM
Updated : 26 Oct 2021, 06:33 PM

রাষ্ট্রদূত হিসাবে বাংলাদেশে কাজ শুরুর দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে এক বার্তায় এই আশ্বাস দেন তিনি।

নাওকি বলেন, “সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী হিসাবে জাপান অবকাঠামো প্রকল্পের মাধ্যমে আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি বাংলাদেশ এবং বৃহৎ পরিসরে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা রক্ষার কাজ অব্যাহত রাখবে।”

স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী হিসাবে পাশে রয়েছে জাপান সরকার।

নাওকির মেয়াদে ঢাকার মেট্রো রেল, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ, যমুনা রেলওয়ে সেতু এবং মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের মতো বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে দেশটি কাজ করছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে ঘিরে বিস্তৃত পরিকল্পনা ও কার্যক্রম রয়েছে জাপানের।

এই পরিকল্পনায় বাংলাদেশের সঙ্গে ‘বাস্তবভিত্তিক সহযোগিতা’ বাড়াতে ভূমিকা রাখার কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত নাওকি বলেন, “এই অঞ্চলের শাস্তি, স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতির জন্য ‘অবাধ ও উন্মুক্ত ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের’ অভিষ্ট অর্জনে বাংলাদেশের সঙ্গে বাস্তবভিত্তিক সহযোগিতা বাড়াতে জাপান কাজ করবে।”

চলমান অবকাঠামো উন্নয়ন সহযোগিতার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “জাপানি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও ব্যবসা বাড়াচ্ছে। তাদের বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করতে আমরা আমাদের উদ্যোগ দ্বিগুণ করব।”

২০১৬ সালে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলায় জাপানি নাগরিকদের মৃত্যুর প্রসঙ্গও বার্তায় টানেন রাষ্ট্রদূত।

গুলশানের সন্ত্রাসী হামলায় যে ৭ জন জাপানি নাগরিক নিহত হয়েছিলেন তাদের মধ্যে ৬ জন ছিলেন ঢাকার মেট্রো রেল প্রকল্পের পরামর্শক।

গত জুলাইয় ঘটনার পাঁচ বছর পূর্তিতে তাদের জন্য শোক প্রকাশের কথা তুলে ধরে ইতো নাওকি বলেন, “ওই ঘটনাকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারে দৃঢ়ভাবে কাজ ইচ্ছা আমি পুনর্ব্যক্ত করেছিলাম।”

জাপানি মুদ্রায় কোনো দেশকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে গত বছর নতুন মাইলফক সৃষ্টির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ইয়েনে ঋণগ্রহীতা হিসাবে গতবছর সবচেয়ে বড় ছিল বাংলাদেশ। প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে এই পরিমাণ প্রায় ৩৩২ বিলিয়ন ইয়েন।”

‘অবাধ ও উন্মুক্ত ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের’ লক্ষ্য অর্জনের জন্য এই সঙ্কটের সমাধান দরকার মন্তব্য করে জাপানি দূত বলেন, “মিয়ানমারে অভ্যুর্থানের পর সাম্প্রতিক পরিস্থিতি শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনকে কঠিন করে তুলেছে।

“যেহেতু সঙ্কট দীর্ঘায়িত হচ্ছে, সেহেতু শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ ও জীবিকাসহ অন্যান্য দিকে কক্সবাজার শরণার্থী শিবিরের পরিবেশ ভালো করা জরুরি।”

রোহিঙ্গা ইস্যুতে জোরালো ভূমিকা না নেওয়ায় বিভিন্ন সময় সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে বাংলাদেশের মতো মিয়ানমারেরও উন্নয়ন সহযোগী জাপানকে।

বিনিয়োগ-বাণিজ্য ইস্যুতে মিয়ানমারের পাশে থাকার ঘোষণা দিলেও ২০১৯ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশ সফরে এসে প্রত্যাবাসন নিয়ে মধ্যস্ততার কথা বলেছিলেন জাপানের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো কোনো। কিন্তু এর কোনো ফলাফল দেখা যায়নি।

প্রত্যাবাসন নিয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি পুনরায় দিয়ে রাষ্ট্রদূত নাওকি বলেন, “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিলে মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রে এবং বাস্তুচ্যুত এই মানুষদের প্রত্যাবাসনে জাপান কাজ করবে।”

আগামী বছর দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ পূর্তির আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়ার কথাও বার্তায় জানান জাপানি দূত।