ন্যূনতম ১৫% করপোরেট করের ঐতিহাসিক চুক্তিতে ১৩৬ দেশ

বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে একটি ন্যায্য করহারের আওতায় আনতে এবং তাদের কর এড়ানোর পথ বন্ধ করতে ঐতিহাসিক এক চুক্তিতে পৌঁছেছে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Oct 2021, 06:50 PM
Updated : 8 Oct 2021, 08:07 PM

বিবিসি জানিয়েছে, এ চুক্তির মধ্য দিয়ে ১৩৬টি দেশ ঘোষণা করেছে, কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে অন্তত ১৫ শতাংশ হারে করপোরেট কর আদায় করবে তারা। পাশাপাশি যে লাভ তারা করবে, সেটির একটি ন্যায্য অংশ যেন তারা কর হিসেবে দেয়, সেটাও নিশ্চিত করা হবে।

আয়ারল্যান্ড, ইস্তোনিয়া ও হাঙ্গেরি বহু কাঙ্খিত মাইলফলক এ চুক্তিতে সই করতে সম্মতি জানালে `গুগল, অ্যাপল ও অ্যামাজনের মত বৃহৎ কোম্পানিগুলোর কর ফাঁকি দেওয়ার দীর্ঘ দিনের চলে আসা ব্যবস্থার ইতি ঘটতে যাচ্ছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে উঠে এসেছে।

রয়টার্স লিখেছে, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ টানার পাশাপাশি কর্মসংস্থান বাড়ানোর চেষ্টায় গত চার দশক ধরে বিভিন্ন দেশের সরকার করপোরেট করহার কমানোর যে প্রতিযোগিতা চালিয়ে আসছিল, সেটির অবসান ঘটানোই এ চুক্তির লক্ষ্য।

এ চুক্তির জন্য আলোচনা চলছিল গত চার বছর ধরেই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সমর্থন আর কোভিড-১৯ মহামারীর অর্থনৈতিক অভিঘাত সেই আলোচনাকে আরও বেগবান করে। 

যে ১৪০টি দেশ এ আলোচনায় ছিল, তাদের মধ্যে চার উন্নয়নশীল দেশ কেনিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা আপাতত চুক্তিতে আসছে না। 

এ আলোচনার নেতৃত্বে থাকা প্যারিসভিত্তিক অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) বলছে, বিশ্ব অর্থনীতির ৯০ শতাংশ এই চুক্তির আওতায় আসবে।

জার্মানির অর্থমন্ত্রী ওলাফ শলৎস রয়টার্সকে বলেন, “কর খাতে ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ আজ আমরা নিলাম।”

বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি জায়ান্ট ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে আরও বেশি কর আদায়ের এই মাইলফলক চুক্তির বিষয়ে চলতি বছরের ৬ জুন সমঝোতায় পৌঁছায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ জি৭ জোটের দেশগুলো।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো তখন বৈশ্বিক করারোপের এ সমঝোতাকে ‘ঐতিহাসিক’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেছিল, ‘ট্যাক্স হেভেন’ হিসেবে পরিচিত নিম্ন করের দেশগুলোতে কোম্পানিগুলোর মুনাফা স্থানান্তরের বিষয়টিকে নিরুৎসাহিত করতেও জি৭ প্রণোদনা কমাবে।

নিজ দেশের উচ্চ হারের কর এড়াতে প্রায় সব বড় কোম্পানির কম করহারের দেশগুলোতে ব্যবসা নিবন্ধনের যে প্রবণতা বছরের পর বছর ধরে চলছি, এবার তা কমার সুযোগ তৈরি হবে।

ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেন, “সুষম কর ব্যবস্থার ক্ষেত্রে এখন আমাদের একটি স্পষ্ট পথ তৈরি হল। বহুজাতিক বড় কোম্পানিগুলো যেখানেই ব্যবসা করুক, তারা তাদের ন্যায্য হিস্যা দেবে।“ 

মার্কিন অর্থমন্ত্রী জেনেট ইয়েলেন এ চুক্তিকে আমেরিকান পরিবার এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জয় হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তার ভাষায়, অর্থনৈতিক কূটনীতির ক্ষেত্রে এ চুক্তি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা।

ওইসিডি জানিয়েছে, এ চুক্তির ফলে যদি নূন্যতম করও আরোপ করা হয়, তাহলে বছরে অন্তত ১৫০ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব বাড়বে।

পাশাপাশি কোম্পানিগুলো যেসব দেশে ব্যবসা করে, সেসব দেশে ১২৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি মুনাফা স্থানান্তর হবে এবং সেই লাভের ওপর আরও কর আরোপের অধিকার তৈরি হবে।

গুগল, অ্যাপল, অ্যামাজন ও ফেইসবুকের মত টেক জায়ান্ট এবং বড় কোম্পানিগুলোর আয় আয়ারল্যান্ড বা অন্য কোনো ‘করস্বর্গে’ স্থানান্তরের মাধ্যমে কম কর দিয়ে বেশি মুনাফা করার পথও এই প্রক্রিয়ায় বন্ধ হবে।

কর এড়াতে এক দেশ ছাপিয়ে অন্য দেশে কোম্পানি নিবন্ধনের এ প্রবণতা নিয়ে আলোচনা চলছিল বেশ কয়েকবছর ধরেই।

চলতি সপ্তাহে দীর্ঘ এ আলোচনার পথে শেষ পর্যন্ত আয়ারল্যান্ড, ইস্তোনিয়া ও হাঙ্গেরির মত নিম্ন করহারের দেশগুলো তাদের আপত্তি তুলে নিলে চুক্তির পথ সুগম হয়।

তবে নূন্যতম কর আরও বেশি নির্ধারণের পক্ষে থাকা কিছু উন্নয়নশীল দেশ বলেছে, এ সিদ্ধান্তে তাদের দাবিকে খুব বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। আয়ারল্যান্ডের মত ধনী দেশের স্বার্থ দেখতে গিয়ে তাদের বক্তব্যকে আমলে নেওয়া হয়নি।

ওইসিডি জানিয়েছে, এখন এ চুক্তি জি২০ ভুক্ত দেশগুলোর অর্থমন্ত্রীদের বৈঠকে তোলা হবে। ওই বৈঠকে তা আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করা হবে। আগামী বুধবার ওয়াশিংটনে এ বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।  

এরপর জি২০ দেশগুলোর নেতাদের বৈঠকে এটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হবে। রোমে চলতি মাসের শেষে এ সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে।

যেসব দেশ এ চুক্তিতে সমর্থন দিয়েছে, তারা আগামী বছর তাদের আইনে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনবে, যাতে ২০২৩ সালে এটি কার্যকর করা যায়।

তবে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ চুক্তির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু বিষয় নিয়ে এখনও প্রশ্ন রয়েছে, সেগুলো নির্ভর করছে কংগ্রেসে কর সংস্কার নিয়ে আলোচনার ওপর।