উদ্বৃত্ত থাকবে ‘২০ লাখ টন’ আলু, বড় লোকসানের আশঙ্কা

তিন মাসের মধ্যে হিমাগারে সংরক্ষিত ২০ লাখ মেট্রিক টন আলু বাজারজাত করতে না পারলে ৩ হাজার ৬শ কোটি টাকা লোকসান হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষক, ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিকরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Oct 2021, 12:44 PM
Updated : 2 Oct 2021, 12:50 PM

চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হওয়ায় ভাতের বিকল্প হিসেবে আলু ব্যবহার এবং বিদেশে রপ্তানিসহ বহুমুখী ব্যবহারে উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

শনিবার দুপুরে ঢাকা ক্লাবের স্যামসন এইচ চৌধুরী মিলনায়তনে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন এলাকার কৃষক প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিকরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে তারা দেশে আলু উৎপাদনের সার্বিক পরিস্থিতি ও হিমাগার শিল্পের সমস্যা নিয়ে আলোচনাসভা করেন।

অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মোশারফ হোসেন সংবাদ সম্মেলনে জানান, ২০২১ সালে দেশে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়েছে। গত মার্চ ও এপ্রিলে ৪০০ হিমাগারে প্রায় ৪০ লাখ টন আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশে আলুর বাৎসরিক চাহিদা প্রায় ৯০ লাখ মেট্রিক টন। সেই হিসাবে এবার প্রায় ২০ লাখ টন আলু উদ্বৃত্ত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

মোশারফ হোসেন বলেন, “এই উদ্ধৃত্ত আলুর ব্যবহার সম্বন্ধে সময়মতো পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে বিগত বছরের ন্যায় বাজারে ভয়াবহ ধস সৃষ্টি হবে। ফলশ্রুতিতে আগামীতে কৃষকরা আলু উৎপাদনে নিরুৎসাহিত হবে।

“সুতরাং উৎপাদিত উদ্ধৃত্ত আলু যাতে উদ্বেগের কারণ না হয় তর জন্য আলুর সুষ্ঠু ব্যবহারে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেওয়া আবশ্যক বলে অ্যাসোসিয়েশন মনে করছে।”

আলুর দাম কমে যাওয়ায় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা হিমাগার থেকে আলু বাজারজাত করছেন না দাবি করে লিখিত বক্তেব্যে বলা হয়, “আলু উৎপাদনের যাবতীয় খরচসহ এবার কৃষকদের ব্যয় হয়েছে প্রতি কেজিতে ১৮ টাকা।

“কিন্তু হিমাগার পর্যায়ে আলুর বাজারদর কেজিতে গড়ে মাত্র ৮/৯ টাকা। প্রতি বস্তায় লোকসান প্রায় ৫০০ টাকা। উৎপাদন ও সংরক্ষণের আধিক্যের কারণে আলুর বাজারদর পড়ে যাওয়ায় হিমাগার থেকে কৃষকরা আলু খালাস করছে না।”

এ অবস্থায় হিমাগার মালিকরা অত্যন্ত হতাশ জানিয়ে তিনি বলেন, “আলু বাজারজাতকরণের সময়কাল আর মাত্র ২ মাস। এর মধ্যে নিম্নদরের কারণে সংরক্ষিত আলু বাজারজাত করা সম্ভব না হলে বিপুল পরিমাণ আলু অবিক্রিত থাকার সম্ভাবনা দেখা দিবে এবং আলু ফেলে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।”

উদ্বৃত্ত আলু সুষ্ঠু ব্যবহারের লক্ষ্যে গত মে মাস থেকে কৃষি মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, টিসিবি, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সভা করে উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়।

মোশারফ হোসেন বলেন, “চলমান পরিস্থিতির বিষয়ে পত্র-পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার প্রদান, টক শোতে অংশগ্রহণ করা ছাড়াও অনেক চিঠিপত্র দিয়েছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো সুরাহা হয় নাই।”

“আমাদের আবেদন সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিবেচিত হয় নাই। আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে ও সচিবদের সাথে কথা বলে এই বৎসরের ভয়াবহ পরিস্থিতি তাদের কাছে তুলে ধরেছি।”

আলুর বহুমুখী ব্যবহারের দাবি জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “আলুকে ত্রাণকার্য, কাবিখা, ভিজিএফ, ভিজিডি কার্ড এবং ওএমএস-এর মাধ্যমে আলু বিতরণের পদক্ষেপ নেওয়া আবশ্যক।

“পাশাপাশি রপ্তানি কম হওয়ায় রপ্তানির প্রতি জোর দেওয়া একান্ত প্রয়োজন। দেশে খাদ্যের ভারসাম্য রক্ষায় ভাতের বিকল্প দ্বিতীয় প্রধান খাদ্য হিসেবে আলুর ব্যবহার বৃদ্ধিকল্পে সরকারিভাবে বাস্তবভিত্তিক কার্যক্রম গ্রহণ করা আবশ্যক।”

উদ্বৃত্ত আলু সুষ্ঠু ব্যবহারের পদক্ষেপ না নিলে বড় ক্ষতির আশঙ্কা করে বলা হয়, “২০১৭ সালে আলুর বাজারে স্মরণকালের ভয়াবহ ধস সৃষ্টি হওয়ায় কৃষক ও হিমাগার মালিকদের লোকসান সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

“ঐ বৎসর ব্যবসায়িক লোকসানজনিত কারণে হতাশাগ্রস্ত হয়ে কয়েকজন হিমাগার মালিক হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুবরণও করেছেন এবং বেশ কয়েকজন প্রান্তিক কৃষক ও ব্যবসায়ী আত্মহত্যা করেছেন।”

সংবাদ সম্মেলন থেকে সরকারের কাছে বেশ কিছু দাবি জানানো হয়। এর মধ্যে রয়েছে- হিমাগারে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও ব্যবসায়ীদের ভর্তুকি দেওয়া, আলু রপ্তানিতে নগদ প্রণোদনা ২০ শতাংশ থেকে উন্নীত করে ৩০ শতাংশ ধার্য করা।

উন্নত জাতের বীজ আমদানি ও বীজের উন্নয়ণ ঘটানো এবং আলুর মাটিজনিত রোগবালাই দুর করার পদক্ষেপ গ্রহণ। সরকার কর্তৃক ৫০০০ টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন একটি ‘রেফার ভেসেল’ দ্রুত ক্রয় করা।

হিমাগারসমূহের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের বিদ্যুৎ বিল স্থগিত রেখে পরবর্তীতে সারচার্জ ছাড়া কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধের সুযোগ প্রদান করা।

সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, “আলুর দাম বাজারে যেভাবে কমে গেছে, সেখানে কৃষক, ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিক সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

“সরকার আলু উৎপাদনে ৮শ কোটি টাকা সারে ভর্তুকি দিয়ে থাকে। সেই সারে আলুর বাম্পার ফলন হচ্ছে। কিন্তু আলুর বাজার নাই। রপ্তানিসহ আলুর বহুমুখী ব্যবহার যদি না থাকে, তাহেল বলে দেন এত আলু উৎপাদনের দরকার নাই।”

সরকারের প্রতি আলুর বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করার দাবিও জানান এই ব্যবসায়ী নেতা।