কারখানা পরিদর্শন নিয়ে ‘অভয়’ দিল এফবিসিসিআই

দুর্ঘটনা প্রতিরোধ, নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তা খতিয়ে দেখতে অক্টোবরে শুরু হতে যাওয়া কলকারখানা পরিদর্শন অভিযানে ব্যবসায়ীদের হয়রানির মুখোমুখি হতে হবে না বলে ‘অভয়’ দিয়েছেন এফবিসিসিআই নেতারা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Sept 2021, 02:45 PM
Updated : 29 Sept 2021, 02:45 PM

বুধবার পরিদর্শনের প্রস্তুতিমূলক এক অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ এ সংগঠনের সভাপতি জসিম উদ্দিনসহ অন্যান্য নেতা হয়রানির বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে কথা বলেন।

বিডা ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারাও পরিদর্শনকালে হয়রানি বা শিল্পোদ্যক্তাদের ভোগান্তিতে ফেলা হবে না বলে অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন।

অনুষ্ঠানে ভিডিও বার্তায় যুক্তরাষ্ট্র সফরে থাকা জসিম উদ্দিন বলেন, এই পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ কোনোভাবেই একটি অভিযান নয়। এতে অভিযুক্তকে দণ্ড দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়নি। এর উদ্দেশ্যে হচ্ছে সমস্যা চিহ্নিত করা এবং এর সমাধানের জন্য প্রয়োজনে প্রণোদনার ব্যবস্থা করা।

“ইতোমধ্যে এসওপি তৈরি করা হয়েছে, চেকলিস্ট তৈরি করা হয়েছে। সে অনুযায়ী টিমও গঠন করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য পর্যালোচনা ও পরবর্তী কাজ করার জন্য সুপারিশ করা।“

তিনি জানান, চেকলিস্টে কাঠামোগত নিরাপত্তা, অগ্নিনিরাপত্তা, বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা, মেশিন নিরাপত্তা, বয়লার নিরাপত্তা, বিস্ফোরকজনিত নিরাপত্তা এবং পরিবেশগত নিরাপত্তার বিষয়টি রাখা হয়েছে।

এফবিসিসিআই সভাপতি আরও বলেন, কারখানার নিরাপত্তাজনিত বিষয়ে অনেকগুলো সংস্থার কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হয়। বিডায় সেফটি সেল স্থাপনের মাধ্যমে ওয়ান স্টপ সার্ভিস পেলে উদ্যোক্তাদের হয়রানি কমার পাশাপাশি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা সহজ হবে। এর মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে দেশের শিল্পখাত উপকৃত হবে।

সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, সংস্কার কার্যক্রমে কিছুটা অর্থ ব্যয় হলেও, এর সুফল পাবে দেশের রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্প। দেশের অন্য শিল্পখাতকেও নিরাপদ করতে বিডার সঙ্গে এই উদ্যোগে যৌথভাবে কাজ করছে এফবিসিসিআই।

“কারখানায় দুর্ঘটনা হলেই মালিকদের দোষারোপ করা হয়। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে যেসব সংস্থা লাইসেন্স দিয়ে থাকে তাদেরকেও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আলাদা কেমিক্যাল পল্লী গঠিত হলে, চুড়িহাট্টায় আগুনের দুর্ঘটনা ঘটত না।”

পোশাক শিল্পের মই অন্য খাতগুলোকেও নিরাপদ করে তুলতে দেশব্যাপী পরিদর্শন কার্যক্রমে এফবিসিসিআই এর সদস্যভুক্ত ৮০টি চেম্বার ও ৪০৬টি অ্যাসোসিয়েশন সক্রিয়ভাবে অংশ নেবে বলে জানান তিনি।

ভয়াবহ আগুনে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া নারায়ণগঞ্জের হাসেম ফুডস কারখানা। ফাইল ছবি

সহসভাপতি এম এ মোমেন বলেন, পরিদর্শনের চেকলিস্ট দেখে উদ্যোক্তাদের ভয় পাবার কিছু নেই। শিল্প মালিকদের সহায়তা করার জন্যই এই উদ্যোগে অংশীদার হয়েছে এফবিসিসিআই।

“এটাকে পরিদর্শন না বলে পর্যবেক্ষণ বা ইভালুয়েশেন বলাই সঠিক। আমরা ইন্সপেকশন করছি না। গবেষণা করার জন্য এটা করা হচ্ছে। হুট করে সরকার ইন্সপেকশন করতে চাচ্ছে না।

এফবিসিসিআইর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ মাহফুজুল হক বলেন, ‘পরিদর্শন’ শব্দের পরিবর্তে ‘জরিপ’ অথবা ‘পর্যবেক্ষণ’ ব্যবহার করলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ভীতি কমে আসবে।

এর আগে অনুষ্ঠানে অনলাইনে অংশ নিয়ে বিডার নির্বাহী সদস্য অভিজিৎ চৌধুরী উদ্যোক্তাদের আশ্বস্ত করে বলেন, এই পরিদর্শনের কার্যক্রমের মূল উদ্দেশ্যে নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিয়ে সচেতনতা তৈরি করা। কোনভাবেই কাউকে হয়রানি করা হবে না।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জুলফিকার রহমান জানান, এই কর্মসূচির মাধ্যমে কোনো ব্যবসায়ীকে ধরা হবে না। বরং পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই বাছাই করে, কারখানাগুলোকে নিরাপদ করতে উদ্যোক্তা, অ্যাসোসিয়েশন এবং সরকারি পর্যায়ে খাতভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।

এফবিসিসিআই সেফটি কাউন্সিলের উপদেষ্টা ব্রিগ্রে. জেনারেল (অবঃ) আবু নাঈম মো. কলকারখানা পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণের প্রেক্ষাপট ও পদ্ধতি পর্বে পরিদর্শন কমিটির তথ্য তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বে ২৪ সদস্যের জাতীয় কমিটি, বিডার নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি ও তিনটি উপ-কমিটি সম্পর্কে জানান তিনি।

তার উপস্থাপিত তথ্যে অনুযায়ী, ৬৮ ধরনের শিল্পখাতকে অন্তর্ভুক্ত করে, দুর্ঘটনা ও ঝুঁকি বিবেচনায় ৩২টি খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

সরকারি-বেসরকারি খাতের সমন্বতি পরিদর্শন কার্যক্রমের আওতায় আনা হবে মোট ৪৬ হাজার ১০০টি কারখানাকে। তবে প্রথম তিন মাসে পাঁচ হাজার কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হবে। পর্যবেক্ষণে যাওয়ার তিন দিন আগে সংশ্লিষ্ট কারখানা কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে জানানো হবে।

অনুষ্ঠানে অগ্রাধিকার তালিকার অন্তর্ভুক্ত শিল্প সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন সেফটি অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের সভাপতি ব্রিগে. জেনারেল (অবঃ) ইঞ্জিনিয়ার আলি আহমেদ খান।

এছাড়া পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ কার্যক্রমে কোন কোন বিষয়গুলো যাচাই বাছাই করা হবে, তার চেকলিস্ট তুলে ধরেন আইওটা কনসাল্টিং বিডি এর ফাউন্ডার ও সিইও এবং সেফটি অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের সদস্য গোলাম কিবরিয়া।

হাসেম ফুডস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অর্ধশত প্রাণহানির পর ১৫ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে দুর্ঘটনা রোধ ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে উচ্চ পর্যায়ের এ কমিটি গঠন করা হয়।

একই সঙ্গে ‘অবিলম্বে’ সব শিল্প কারখানা সরেজমিনে পরিদর্শনের ব্যবস্থা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।