সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমানোর ব্যাখ্যা দিলেন অর্থমন্ত্রী

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বেশি লাভের আশায় বড় অংকের টাকা কেউ সঞ্চয়পত্রে ফেলে রাখুক, সরকার তা চায় না বলেই সুদের হার কমানো হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Sept 2021, 02:10 PM
Updated : 22 Sept 2021, 02:10 PM

বুধবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, যেভাবে সুদের হার কমানো হয়েছে, তাতে প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র বিনিয়াগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।

সুদের হার তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ায় সঞ্চয়পত্রে যে চাপ পড়ছে, তাতে অর্থনীতির অন্যান্য চালিকাশক্তিগুলো বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “এই ইনস্টুমেন্টটি আমরা রেখেছি, সাধারণত পেনশনার যারা তাদের জন্য এবং যারা আমাদের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তাদের জন্য।

”কিন্তু এখন আমরা লক্ষ্য করলাম, তুলনামূলকভাবে সুদের হার বেশি হওয়ার কারণে এখন সবাই এখানে চলে আসছে। ফলে আমাদের অর্থনীতির অন্যান্য চালিকাশক্তিগুলো, এগুলো অচল হয়ে যাচ্ছে।”

প্রতি বছর বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকারকে যে টাকা ঋণ নিতে হয় তার একটি অংশ আসে ব্যাংক থেকে, আর একটি অংশ সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে জনগণের কাছ থেকে ঋণ নেয়। মেয়াদ শেষে সুদসহ সেই টাকা সরকারকে ফেরত দিতে হয়। 

এখন সঞ্চয়পত্রে সুদের হার বেশি বলে অনেকে উৎপাদনশীল খাতের বদলে বিপুল অংকের টাকা খাটাচ্ছেন নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত সঞ্চয়পত্রে। ফলে এ খাতে সরকারের পরিকল্পনার চেয়ে অনেক বেশি ঋণ হয়ে যাচ্ছে। 

সুদের হার কমানোর মাধ্যমে সরকার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করছে কি-না, এমন প্রশ্নে অর্থ মন্ত্রী বলেন, “নিরুৎসাহিত করবে কেন? যাদের জন্য আমরা উৎসাহিত করি, তাদেরকে (উৎসাহিত) করতে চাই।

”এখন যদি এক কোটি টাকা কেউ সঞ্চয়পত্রে নিয়ে আসে, আমরা কি এটা গ্রহণ করব? এটাতো আমরা চাইনি। আমরা চেয়েছি, ১ লাখ, ২ লাখ, ৫ লাখ, ১৫ লাখ, ২০ লাখ, ২৫ বা ৩০ লাখ রাখুক।”

বিনিয়োগের অংকের ভিত্তিতে তিন ধাপে লাভের হার ঠিক করে দিয়ে মঙ্গলবার জাতীয় সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার পুনঃবণ্টন করেছে অর্থমন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ।

এর ফলে, এখন থেকে যারা ছয় ধরনের জাতীয় সঞ্চয়পত্রে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ করবেন, তারা মুনাফা পাবেন অন্যদের তুলনায় কম। বিনিয়োগের অংক ৩০ লাখ টাকার বেশি হলে মুনাফা আরও কমবে।

মুস্তফা কামাল বলেন, “এখানে সুদের হার কমানোর কারণে যারা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, যারা ক্ষুদ্র ডিপোজিট রাখে, তারা কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।

”এক থেকে দুই শতাংশ কমানো হয়েছে। এর মাঝে প্রান্তিক বিনিয়োগকারীদের কথা বিবেচনায় রেখে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত সুদের হার কমানো হয়নি। এর উপরে যেটা আছে, সেটাকে কমানো হয়েছে। এটাও সারা দেশে এখন যে সুদের হার বিদ্যমান আছে, এখনও সঞ্চয়পত্রে তার তুলনায় হার বেশি।”

অর্থমন্ত্রী বলেন, “এখন আমরা সব কিছু বিবেচনায় প্রান্তিক বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ দেখেছি এবং সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে ১৫ লাখ পর্যন্ত আমরা হাত দিই নাই। এটা ঠিকই রেখেছি।

”যারা এর উপরে, তাদেরকে আমরা মনে করেছি মধ্যবিত্ত বা উচ্চ মধ্যবিত্ত। সুদের হার এটা চলমান প্রক্রিয়া। এটা কখনো বাড়বে কখনো কমবে, কোনো কারণের জন্য আবার বাড়তেও পারে।”