ঢাকার চেয়ে বেশি টাকায় পৌর শহরে সরকারি ফ্ল্যাট

পৌর শহরে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য ফ্ল্যাট বানাচ্ছে সরকার; তার প্রতি বর্গফুটে যে খরচ ধরা হচ্ছে, তার চেয়ে কম দরে রাজধানীর মিরপুর-উত্তরারও ফ্ল্যাট কেনা যায়।

জাফর আহমেদ জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Sept 2021, 05:33 PM
Updated : 6 Sept 2021, 08:08 PM

একটি প্রকল্পের অধীনে এই ৩ হাজার ৪০টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হচ্ছে।

এই প্রকল্পে প্রতিটি ফ্ল্যাটের আকার হবে ৪৯৫ বর্গফুট, প্রতিটি ফ্ল্যাটের নির্মাণ খরচ প্রস্তাব করা হয়েছে ৩৭ লাখ ৫৭ হাজার টাকার বেশি।

অর্থাৎ ভবনের প্রতি বর্গফুট নির্মাণে প্রায় ৭ হাজার ৬০০ টাকা ব্যয় হচ্ছে।

অথচ রাজধানী ঢাকা কিংবা বন্দরনগরী চট্টগ্রামে এর চেয়ে কম দামে ফ্ল্যাট কিনতেই পাওয়া যায়।

ঢাকায় ফ্ল্যাটের দাম জানতে চাইলে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বর্তমানে রিহ্যাব সদস্যরা মিরপুর ও উত্তরায় প্রতি বর্গফুট সাড়ে ৫ হাজার টাকা থেকে সাড়ে ৭ হাজার টাকার মধ্যে ফ্ল্যাট বিক্রি করছেন।”

বাড্ডাসহ আরও বিভিন্ন এলাকায় প্রতি বর্গফুট সাড়ে ৫ হাজার টাকার কমেও ফ্ল্যাট কিনতে পারা যাচ্ছে এখন।

এলজিইডি এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

অথচ পৌর শহরে তার চেয়ে বেশি দামি ফ্ল্যাট তৈরির প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।

এক হাজার ১৪২ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্প ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য ঠিক হয়েছে।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘পৌরসভায় পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মঙ্গলবার একনেক সভায় উপস্থাপন করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মো. মামুন-আল-রশিদ।

ব্যয়ের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রকল্পটি নিয়ে দুই বার পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভা করা হয়েছে। প্রথমটি গত বছরের শেষের দিকে। তখন ব্যয় আরও বেশি ধরা হয়েছিল।

“তখন এসব ভবনে লিফটের সংস্থানও রাখা হয়নি। এসব ভবনে বৃদ্ধ মানুষও বাস করতে পারে। তাই আমরা পিইসি সভায় এসব ভবনে লিফটের সংস্থান রাখার পাশাপাশি ব্যয় কমানোর পরামর্শ দিয়েছিলাম।”

এরপর এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকল্পটি নিয়ে দ্বিতীয় পিইসি সভা হয়।

“ওই সভায় প্রকল্পটির প্রস্তাবিত এই ব্যয় নির্ধারণ করে মঙ্গলবারের একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে,” বলেন মামুন।

এই প্রকল্পে ব্যয়ের প্রস্তাবের বিষয়ে এলজিইডির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এলজিইডির একেক কর্মকর্তা একেক কর্মকর্তাকে দেখিয়ে দিচ্ছিলেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ফোন করলেও তারা তা ধরেননি।

প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, উপজেলা পর্যায়ে ৬৬টি পৌরসভায় ১৪৪টি ৭ তলাবিশিষ্ট ভবন তৈরি করা হবে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য। এসব ভবনে ৪৯৫ বর্গফুটের মোট ৩ হাজার ৪০টি ফ্ল্যাট হবে।

তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ৪৯৫ বর্গফুটের প্রতিটি ফ্ল্যাটের নির্মাণ খরচ পড়ছে ৩৭ লাখ ৫৭ হাজার টাকার বেশি। আর প্রতি বর্গফুটে খরচ দাঁড়াচ্ছে ৭ হাজার ৫৯০ টাকা।

তিন শতাধিক পৌরসভার মধ্যে ৬৬টি কীভাবে নির্বাচন করা হবে- জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মামুন বলেন, “গুরুত্ব বিবেচনায় প্রথমে ৬৬টি পৌরসভা বাছাই করা হবে।”

কর্মচারীদের জন্য অন্য সরকারি ফ্ল্যাট যেভাবে ব্যবহার হয়, এটাও সেভাবে ব্যবহার হবে।

মামুন বলেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পের ভবনগুলোতে নিচতলা ফাঁকা রেখে দ্বিতীয় তলা থেকে আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে।

তিনি বলেন, প্রকল্পটির মাধ্যমে তিন ধরনের ভবন নির্মাণ করা হবে। ২৪টি ভবন চার ইউনিটের, ৪৮টি ভবনে ৮ ইউনিটের এবং ৭২টি ভবনে ১২টি ইউনিটের হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের একজন কর্মকর্তা জানান, আটটি বিভাগের ৫৯টি জেলার ৬৬টি উপজেলার ৬৬টি পৌরসভায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এজন্য ৫ দশমিক ৬১ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে।