এতে দেশে মুখ থুবড়ে পড়া বিনিয়োগ নিবন্ধন পরিস্থিতিতে গতির সঞ্চার হয়েছে। নতুন বিনিয়োগ পরিকল্পনা নিয়ে দেশি বিদেশি উদ্যোক্তারা সরব হলে বিনিয়োগ প্রস্তাব নিবন্ধনে উল্লম্ফন হয়েছে।
চলতি ২০২১ পঞ্জিকা বছরের এপ্রিল থেকে জুন দ্বিতীয় প্রান্তিকে দেশ-বিদেশি ১৮৪টি শিল্প ইউনিট স্থাপনের জন্য অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন বোর্ড- বিডা। গতবছর একই সময়ে বিনিয়োগের জন্য নিবন্ধিত হয়েছিল মাত্র ৪৬টি প্রতিষ্ঠান।
২০২০ সালের মার্চে বাংলাদেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শুরুর পর দীর্ঘ লকডাউনে সব কিছু থমকে গেলে উদ্যোক্তারাও সিদ্ধান্তহীনতায় পড়ে যান। শুধু দেশে নয়, ওই সময় মার্চ থেকে মে পর্যন্ত বৈশ্বয়িক মহামারীর প্রথম ঢেউেয় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে দেশের ও আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য।
ফাইল ছবি
তবে এরই মধ্যে কভিড-১৯ প্রতিরোধী টিকাদান এবং মহামারীর বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড।
ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারাও থমকে থাকা সময় ফেলে এসে ‘নিউ নরমালের’ এই সময়ে নতুন পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে শুরু করেছেন। এর ইতিবাচক প্রভাব দেখা গেছে নতুন বিনিয়োগ প্রস্তাব নিবন্ধনে।
বিডার বিনিয়োগ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগের জন্য গত এপ্রিল থেকে জুন সময়ে ১৮৪টি দেশ বিদেশি প্রতিষ্ঠান বিডার নিবন্ধন নিয়েছে।
এসব প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ ১৪ হাজার ১২৮ কোটি টাকা, যা ২০২০ সালের একই সময়ের তুলনায় ৮ হাজার ৪৪৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা বেশি। এসব প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে ৩৮ হাজার ৯৬৯ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গত বছর একই সময়ে কোভিডের ধাক্কার মধ্যে মাত্র ৪৬টি শিল্প প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ প্রস্তাব নিবন্ধন করেছিল। অর্থের পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৬৮৩ কোটি ৫০ লাখ। গত বছরের তুলনায় এবছর দ্বিতীয় প্রান্তিকে নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে ১৩৮টি।
বিনিয়োগের এই প্রস্তাবকে প্রাথমিকভাবে ইতিবাচক মনে করলেও এর বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জগুলোর বিষয়ে সতর্ক করেছেন অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকনোমিক মডেলিং- সানেম এর নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হন।
ফাইল ছবি
“অতীতে আমরা দেখেছি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নীতিগত, আমলাতান্ত্রিক ও অবকাঠামোগত চ্যালেঞ্জের কারণে অনেক বিনিয়োগ উদ্যোগ সফল হয়নি। তাই কতটি প্রস্তাব বাস্তবে রূপ নিল, সেদিকেই বেশি নজর দেওয়া উচিত।“
গত বছর মহামারী শুরুর পর অনেক প্রতিষ্ঠানই তাদের উৎপাদন সংকুচিত করতে বাধ্য হয়েছিল। নতুন বিনিয়োগের চেয়ে পুরোনো এসব সংকোচন স্বাভাবিক হলেই বরং ভালো বলে মনে করেন তিনি।
“সানেম গত এপ্রিলের ৫০০টি ছোট বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানে সার্ভে করে দেখেছে, ২০২০ সালের মার্চের তুলনায় এই বছর মার্চে কারখানাগুলো ৫৭ শতাংশ রিকভারি বা ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে। বড় কারখানাগুলো ভালো রিকভারি করেছে, ছোটরা তুলনামূলক কম রিকভারি করেছে। তাই রিকভারিতে বেশি জোর দেওয়া উচতি।”
গত তিনমাসে যেসব বিদেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে সেগুলোর একটা বড় অংশ এসেছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে। তবে বিশ্বমানের কমপ্লায়েন্স ঘাটতির কারণে খাতটি এখনও অসম্পূর্ণ রয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গটি টেনে আনেন সেলিম রায়হান।
“এখনও বিদেশ থেকে আমদানি করা চামড়া দিয়ে জুতা তৈরি করে সেটা উন্নত বিশ্বে রপ্তানি করতে হচ্ছে। আমাদের দেশে জুতার কাঁচামাল থেকে গেলেও সেগুলো কমপ্লায়েন্স সমস্যার কারণে রপ্তানিযোগ্য জুতায় খুব একটা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। চামড়াখাতে বিনিয়োগ সফল করার জন্য এই সমস্যাটি দূর করতে হবে,” বলেন তিনি।
বিডার তথ্য অনুযায়ী, আলোচ্য তিন মাসে সম্পূর্ণ স্থানীয় বিনিয়োগের জন্য নিবন্ধিত হয়েছে ১৫৮টি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ প্রস্তাবের পরিমাণ ১৩ হাজার ২৩৪ কোটি ১০ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বেশি।
২০২০ সালের এপ্রিল থেকে জুনে স্থানীয় বিনিয়োগের জন্য নিবন্ধিত হয়েছিল ৩৮টি শিল্প ইউনিট। তখন প্রস্তাবিত অর্থের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা।
ফাইল ছবি
এর মধ্যে রাসায়নিক শিল্পে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে বলে জানিয়েছে বিডা। এছাড়া পর্যায়ক্রমে রয়েছে ফুড অ্যান্ড এলায়েড খাত, সেবা ও বস্ত্র খাতে।
বিদেশি বিনিয়োগ
একই সময়ে ১২টি শতভাগ বিদেশি বিনিয়োগের প্রস্তাব নিবন্ধন করা হয়েছে। আর দেশি বিদেশি যৌথ বিনিয়োগের জন্য নিবন্ধিত হয়েছে ১৪টি প্রতিষ্ঠান। মোট ২৬টি প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ ৮৯৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
২০২০ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ৮টি বিদেশি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগের জন্য নিবন্ধন করেছিল। সেগুলোর মোট বিনিয়োগ প্রস্তাব ছিল ৪ হাজার ১৫০ কোটি টাকা।
বিদেশি বিনিয়োগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এসেছে চামড়া খাতে। এরপর রয়েছে প্রকৌশল, সেবা ও রাসায়নিক খাত।