বিদেশি অর্থায়ন: টানা দ্বিতীয় অর্থবছরে ৭০০ কোটি ডলারের বেশি ছাড়

কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে টানা দ্বিতীয় অর্থবছরে বাংলাদেশের অনুকূলে ৭০০ কোটি ডলারের বেশি অর্থ ছাড় করেছে দাতারা।

জাফর আহমেদ জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 July 2021, 10:43 AM
Updated : 31 July 2021, 11:01 AM

সদ্য বিগত ২০২০-২১ অর্থবছরে (জুলাই ২০২০ থেকে জুন ২০২১) দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭১০ কোটি ছয় লাখ ডলার ঋণ সহায়তার অর্থ ছাড় হয়েছে।

যদিও এই ছাড় লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৩১ কোটি ডলার বা ৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ কম।

গেল অর্থবছরে ৭৪১ কোটি ডলারের বৈদেশিক সহায়তা ছাড়ের লক্ষ্য ছিল সরকারের।

তবে গত অর্থবছর দাতাদের কাছ থেকে সরকার ভবিষ্যৎ উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৫৫ শতাংশ বেশি প্রতিশ্রুতি আদায় করেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৭২৭ কোটি ডলার ছাড় হয়েছিল। সে হিসাবে গত অর্থবছরে তার আগের অর্থবছরের তুলনায় ১৭ কোটি ডলার কম ছাড় হয়েছে।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার বা ৬৫৪ কোটি ডলার ছাড় হয়েছিল।

এ প্রসঙ্গে ফরেন এইড বাজেট অ্যাকাউন্টের (ফাবা) একজন কর্মকর্তা বলেন, বৈদেশিক সহায়তার চুক্তিগুলো হয় প্রধানত উন্নয়ন প্রকল্পের বিপরীতে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন বাড়াতে পারলে সহায়তার ছাড়ও বৃদ্ধি পায়। আবার বাস্তবায়ন কম হলে অর্থছাড়ের পরিমাণ কমে যায়।

তিনি বলেন, টানা দুই অর্থবছর কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়নকাজ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা বিদেশি সহায়তার অর্থ ছাড় হয়নি।

তবে তিনি দাবি করেন, এই প্রতিবেদনে গত অর্থবছরের শতভাগ অর্থছাড়ের পরিসংখ্যান আসেনি। প্রতিবেদনটি গত ২৫ জুলাই ইআরডির জরুরি বৈঠকের জন্য তৈরি করা হয়।

এরপরেও অর্থ ছাড়ের আরও তথ্য আসছে, সবমিলিয়ে গত অর্থবছরের বৈদেশিক সহায়তার অর্থ ছাড় তার আগের অর্থবছরকে ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) অনুবিভাগের প্রধান অতিরিক্ত সচিব পিয়ার মোহাম্মদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মূলত কোভিড-১৯ এর নেতিবাচক প্রভাবের কারণে গত অর্থবছর বিশেষ করে মেগা প্রকল্পগুলোর পরামর্শকসিহ বিদেশি জনবল কাজে যোগ দিতে সমস্যা হচ্ছে। এই কারণে প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজের গতি ধীর হচ্ছে। ফলে অর্থছাড়ও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী হচ্ছে না।

ইআরডি‘র সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত অর্থবছরে যে ৭১০ কোটি ডলার ছাড় হয়েছে তার মধ্যে ঋণ সহায়তা হিসেবে ছাড় হয়েছে ৬৭৭ কোটি ২১ লাখ ডলার। আর অনুদান ৩৩ কোটি ৪২ লাখ ডলার।

তবে গত অর্থবছর দাতাদের কাছ থেকে সরকার ভবিষ্যত উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৫৫ শতাংশ বেশি প্রতিশ্রুতি আদায় করেছে।

এসময়ে সরকার দাতাদের কাছ থেকে প্রায় ৯৩৫ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি আদায় করেছে। এরমধ্যে ঋণের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে ৮৬৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলারের আর অনুদান প্রতিশ্রুতি পেয়েছে ৬৭ কোটি ৩৬ লাখ ডলারের।

গেল অর্থবছর প্রতিশ্রুতি আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৬০০ কোটি ডলার। তার আগের ২০১৯-২০ ছিল ৯৫৫ কোটি ডলার।

এদিকে গত এক অর্থবছরে সরকার দাতাদের কাছে পুঞ্জিভূত পাওনা থেকে পরিশোধ করেছে ১৯০ কোটি ৯৩ লাখ ডলার।

সে হিসাবে গেল অর্থবছরে সরকার নিট বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তা দেশে রাখতে পেরেছে প্রায় ৫২০ কোটি ডলার।