সরকারের রাজস্ব আহরণকারী প্রধান সংস্থাটি জাতীয়ভাবে সব কর অঞ্চলের করদাতাদের জন্য এই সুবিধা চালুর পদক্ষেপ এগিয়ে নিতে কাজ করছেন।
‘স্ট্রেনদেনিং গভর্ন্যান্স ম্যানেজমেন্ট প্রকল্প’ এর আওতায় এই কার্যক্রম পরিচালনা করবে এনবিআর। এরই মধ্যে প্রকল্পটি নতুন করে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করে সফলতা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
এই বিষয়ে এনবিআরের (আয়কর নীতি) সদস্য মো. আলমগীর হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ বছর থেকে আমাদের অনলাইন রিটার্ন সাবমিশনের একটা পরিকল্পনা আছে। এ জন্য অভ্যন্তরীণভাবে (প্রকল্প) দীর্ঘদিন ধরে একটি সফটওয়্যার নিয়ে কাজ চলছে।
“তারা আশা করছেন এই সিস্টেম সেপ্টেম্বরের ১ তারিখ থেকে ট্যাক্সপেয়ারদের জন্য ওপেন করে দেবেন। অর্থাৎ সেপ্টেম্বর থেকে অনলাইনে রিটার্ন সাবমিশন শুরু হবে, এটা আমরা আশা করছি।“
তবে এর আগে আরও কিছু কাজ আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ইন্টারনাল আরও কিছু রিভিউ আছে। রিভিউ যদি ওকে হয় তাহলে আমাদের আয়করদাতারা তাদের রিটার্ন অনলাইনে সাবমিট করতে পারবেন, এটা আমরা আশা করছি।“
এজন্য একটি অ্যাপ ডেভেলপ করা হচ্ছে জানিয়ে ঊর্ধ্বতন এই কর্মকর্তা বলেন, “সেই অ্যাপটা মোবাইল, ল্যাপটপ ও ডেস্কটপ থেকে ব্যবহার করা যাবে।“
এর আগে পরীক্ষামূলকভাবে ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে তিনবছর অনলাইনে রিটার্ন জমা নেওয়া হয়। তবে এই কার্যক্রম পরিচালনাকারী ভিয়েতনামি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি শেষ হলে তা ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে বন্ধ হয়ে যায়।
করোনাভাইরাস মহামারীতে গতবছর আয়কর মেলাও বন্ধ ছিল। এমন প্রেক্ষাপটে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় করদাতাদের অনেকেই বিপাকে পড়েন।
এনবিআর আয়কর বিবরণী দাখিলের প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে ও করদাতাদের ভোগান্তি কমাতে ২০১১ সালে অনলাইনে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে রিটার্ন জমা নিতে স্ট্রেনদেনিং গভর্ন্যান্স ম্যানেজমেন্ট নামের এই প্রকল্প হাতে করে।
এই প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘ সময় ব্যয় হয়। ৫৯ কোটি টাকায় ভিয়েতনামের এফটিপি নামের একটি কোম্পানি সফটওয়্যার তৈরির কাজ পায়।
২০১৬ সালের নভেম্বরে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নিজের আয়কর বিবরণী জমা দিয়ে অনলাইন ব্যবস্থার উদ্বোধন করেন।
পরের তিন বছর (২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থবছর) করদাতারা অনলাইনে বিবরণী জমা দিতে পারেন।
কিন্তু ভিয়েতনামি ওই কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি শেষ হওয়ার প্রেক্ষাপটে ২০২০ সালের পেপ্টেম্বরে এটি বন্ধ হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে একবছর পর আবারও এই কার্যক্রম নতুনভাবে শুরু করছে এনবিআর।
ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, এবার এনবিআর এর আইটি বিভাগের নিজস্ব জনবল দিয়ে সিস্টেমটি আবার চালু করা হচ্ছে।
ইতোমধ্যে আয়কর শাখা পরীক্ষামূলকভাবে এই সফটওয়্যার এবং অ্যাপ পরিচালনা করে সফলতাও পেয়েছেন।
এই কার্যক্রমের শতভাগ সফলতা পাওয়া গেলে সেপ্টেম্বর থেকে করদাতারা এনবিআর এর ওয়েবসাইট থেকে এই অ্যাপ ব্যবহার করে বিবরণী জমা দিতে পারবেন।
অ্যাপটি মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ কম্পিউটারের মাধ্যমে ব্যবহার করা যাবে বলে তারা জানিয়েছেন।
আয়কর বিবরণী জমা দেওয়ার এই নতুন পদ্ধতির মাধ্যমে করদাতারা যে কোনো সময়ের আয়কর সার্টিফিকেট, বিবরণী দাখিলের প্রাপ্তি স্বীকার ও টিআইএন সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন।
এ জন্য আগে করদাতাদের বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে নিবন্ধিত তাদের মোবাইল ফোন ব্যবহার করে ওয়েবসাইটে গিয়ে নিবন্ধন করতে হবে।
অনলাইন সিস্টেমটি বিটিআরসির বায়োমেট্রিক ডাটাবেস ব্যবহার করে করদাতাদের সত্যতা যাচাই করে দেবে এবং ব্যবহারকারীর নাম ও পাসওয়ার্ড সরবরাহ করবে।