এর মধ্যে বুধবার রাত ১২টা মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) প্রায় ১২ হাজার টন বর্জ্য ও বৃহস্পতিবার দুপুর পর্ন্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনেও (ডিএসসিসি) ১২ হাজার টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়।
বৃহস্পতিবার ঢাকা উত্তরের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম ও দক্ষিণের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস আলাদা সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
বিকালে গুলশানের নগর ভবনে সংবাদ সম্মেলনে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, “এবার কোরবানির প্রথম দিনেই ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় তিন লক্ষাধিক পশু কোরবানি করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ২৭২টি নির্ধারিত স্থানে মাত্র ৪১৪১টি পশু কোরবানি করা হয়।
“স্থানীয় কাউন্সিলরসহ সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এবার ১২ ঘণ্টারও কম সময় রাত ১২টার মধ্যেই ডিএনসিসির সমগ্র এলাকায় কোরবানির প্রথম দিনের ১১,৯৩৫ মেট্রিক টন বর্জ্যের শতভাগ অপসারণ করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, এ নিয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং প্রয়োজনে সময়োপযোগী আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
“আগামীতে নির্দিষ্ট স্থানেই পশু কোরবানি দিতে হবে, নির্দিষ্ট স্থানের বাইরে অন্য কোথাও পশু কোরবানি দেওয়া যাবে না।”
কোরবানির পশুর বর্জ্য নিয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ রোধে এবার নগরবাসীর মাঝে যথাসময়ে ৬ লক্ষ ৫০ হাজার বর্জ্য ব্যাগ, পরীক্ষামূলকভাবে পরিবেশসম্মত ও পঁচনশীল আরও ২০ হাজার বায়ো ডিগ্রেডেবল ব্যাগ, ৫০ মেট্রিক টন ব্লিচিং পাউডার এবং ৫ লিটার আয়তনের ১ হাজার ৫ ক্যান স্যাভলন বিতরণ করে উত্তর সিটি করপোরেশন।
বাসযোগ্য সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকা গড়ে তোলার লক্ষ্যে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আন্তরিকভাবে কাজ করার আহ্বান জানান মো. আতিকুল ইসলাম।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন প্রায় ৮ হাজার টন কোরবানির পশুর হাট ও জবাইয়ের বর্জ্য অপসারণের কথা বৃহস্পতিবার দুপুরেই জানিয়েছিলেন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। পরে আরও ৪ হাজার টন বর্জ্য অপসারণের কথা জানানো হয়।
দুপুরে 'কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম তদারকিতে' নগর ভবনের শীতলক্ষ্যা হলে স্থাপিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষে পশুর বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় একথা বলেন তিনি।
“নিতান্তই কেউ যদি আজকের মধ্যে কোরবানির পশু জবাই শেষ করতে না পারেন, তাহলে দয়া করে আপনারা আগামীকাল নিজ দায়িত্বে পশুর বর্জ্য নির্ধারিত ব্যাগে ভরে আপনার নিকটবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্রে রেখে আসুন।”
কোরবানির প্রথম দিনের পশুর বর্জ্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ করার কথা ইতোমধ্যে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণের মেয়র।
“আজকে যে সকল পশু জবাই করা হবে, সেসব পশুর বর্জ্য আমরা আগামী ১০ ঘণ্টার মধ্যে অর্থাৎ রাত বারোটার মধ্যে অপসারণ করব।”
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রায় ৮ হাজার টন কোরবানির পশুর ও হাটের বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
রাতে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের জানান, মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের ঘোষণা অনুযায়ী ৭৫টি ওয়ার্ডের দ্বিতীয় দিনের কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট ৩৪৩৯টি ট্রিপের মাধ্যমে ১২ হাজার ৪০২ টন কোরবানির পশু ও হাটের বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে।
উন্মুক্ত স্থানে বর্জ্য ফেলে আসা অপ্রত্যাশিত
তাপস বলেন, তিন দিন ধরে (২০ তারিখ রাত থেকে) সিটি করপোরেশনের জনবল কাজ করছে, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একটানা কাজ করে চলেছে।
এই বিশাল কর্মযজ্ঞে সবার সহযোগিতার আহ্বান জানান তিনি।
মেয়র বলেন, “আমরা যে ব্যাগ সরবরাহ করেছি, দয়া করে তা সংগ্রহ করুন এবং সেই ব্যগে ভরে আপনার পশুর বর্জ্য আমাদের বর্জ্য সংগ্রহকারীদের কাছে হস্তান্তর করুন। উন্মুক্ত স্থানে বর্জ্য ফেলবেন না।"
চামড়া নিয়ে বিপাকে
মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীরা অনেক জায়গায় চামড়া ফেলে যাচ্ছেন বলে জানান মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস।
তিনি বলেন, “একটা বিষয় আমরা লক্ষ্য করছি, মৌসুমী ব্যবসায়ীরা চামড়া সংগ্রহ করেছেন। সেই চামড়াগুলো হয়তো তারা বিক্রি করতে পারেননি। আজ সকাল থেকে আমরা লক্ষ্য করছি, বিভিন্ন জায়গায় আমাদের নর্দমার সামনে, নর্দমার মুখে তারা সেই চামড়াগুলো ফেলে গেছেন। এটা অত্যন্ত গর্হিত কাজ “
দক্ষিণের মেয়র বলেন, “আমি বারবার নিবেদন করেছি, কোনোভাবেই যেন আমাদের নালা-নর্দমাগুলো বন্ধ করা না হয়, এখানে বর্জ্য ফেলা না হয়। কারণ আমরা এখনো বর্ষাকালেই আছে। এই বর্জ্য দ্বারা কোন নালা-নর্দমা যেন বন্ধ না হয়ে যায়।”
ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মো. বদরুল আমিন, সচিব আকরামুজ্জামান, পরিবহন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. জাফর আহমেদ, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আনিছুর রহমান সেখানে ছিলেন।