ঢাকায় চামড়া সংগ্রহে তৎপর সবাই, দামও ভালো

রাজধানী ঢাকায় কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের প্রথম দিনে গত বছরের বিপর্যয়কর পরিস্থিতি ফিরতে দেখা যায়নি; দামও মিলছে কিছুটা ভালো, যদিও কোথাও কোথাও সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কম দেওয়ার খবরও মিলেছে।

জাফর আহমেদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 July 2021, 04:18 PM
Updated : 21 July 2021, 05:28 PM

তবে ঢাকার বাইরে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে চামড়া কেনার পর বেকায়দায় পড়েছেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। কেননা সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া নিতে চাইছেন না আড়তদাররা।

রাজধানীর বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দাম নিয়ে এবার ততটা অভিযোগ না থাকার বড় কারণ বেশিরভাগ কোরবানিদাতা পশুর চামড়া মাদ্রাসা ও এতিমখানায় প্রায় বিনামূল্যে দিয়ে দিয়েছেন।

অন্যদিকে করোনাভাইরাসের অতি সংক্রমণ পরিস্থিতিতে আগের বছরের তুলনায় কোরবানির পরিমাণ কিছুটা কমে যাওয়ায় চামড়া সংগ্রহের চাহিদার চেয়ে সরবরাহে টান পড়েছে। এই কারণেও সরকার নির্ধারিত দরের আশেপাশেই ছিল দাম এবং গতবারের মত বিপর্যয় দেখা দেয়নি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এবার একটি বড় গরুর চামড়া গড়ে বিক্রি হয়েছে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায়। মাঝারি গরুর চামড়ার দর ছিল ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। আর ছোট গরুর চামড়া ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় কেনাবেচা হতে দেখা গেছে।

গত কোরবানি ঈদে একই মানের ও আকারের চামড়া ঢাকার কোথাও কোথাও ২০০ টাকাতেও বিক্রি না হওয়ার খবর ছিল। এবার সরকার কিছুটা বাড়িয়ে দর নির্ধারণ করার সুফল মিলেছে বলে উল্লেখ করেন সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকায় কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন মাদ্রাসা ও এতিমখানা ছাড়াও অনেক স্থান থেকে আড়তদার ও ট্যানারির প্রতিনিধি এবং মৌসুমী ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহে মাঠে ছিলেন তৎপর।

তারা বিকেলের পর থেকেই সংগ্রহ করা এসব চামড়া পোস্তার আড়তদার এবং ট্যানারির কাছে বিক্রি শুরু করেছেন।

বুধবার মিরপুরের রূপনগর আবাসিক এলাকার জামিয়া নূরিয়া কাসেমুল উলুম মাদ্রাসা ও এতিমখানা রূপনগর এলাকা থেকে বিনামূল্যে প্রায় এক হাজার চামড়া সংগ্রহ করেছে। পরে বিকেল ৫টার দিকে ওই কাঁচাচামড়া সাভারের হেমায়েতপুরের আইয়ুব ট্যানারির কাছে নগদ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে।

এই ট্যানারির ক্রয় প্রতিনিধি মো. মোস্তফা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই মাদ্রাসা থেকে সরকারের বেঁধে দেওয়া দরের চেয়ে ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি দাম দিয়ে প্রায় ৮০০ গরু ও মহিষের চামড়া কিনেছি।

“এভাবে আমাদের ক্রয় প্রতিনিধিরা ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে চামড়া সংগ্রহ করছেন।“

অন্যান্য ট্যানারিও এভাবে এবং মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সরাসরি কাঁচাচামড়া সংগ্রহ করছেন বলে জানান তিনি।

জানতে চাইলে জামিয়া কাসেমুল উলুম মাদ্রাসা ও এতিমখানার নির্বাহী কমিটির সদস্য জালাল উদ্দিন রতন বলেন, “সারাদিন এই এলাকা থেকে আমরা প্রায় ৭০০ গরু ও মহিষের চামড়া এবং প্রায় আড়াইশর মত ছাগলের চামড়া বিনামূল্যে সংগ্রহ করেছি।

“পূর্বের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী হেমায়েতপুরের আইয়ু ট্যানারি সকল চামড়া কিনে নিচ্ছে। এবার আমরা গত বছরের তুলনায় দাম কিছুটা বেশি পেয়েছি।“

রাজধানীর আরও কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অন্যান্য স্থানের মাদ্রাসা ও এতিমখানাও সংশ্লিষ্ট মহল্লার কোরবানিদাতাদের কাছ থেকে প্রায় বিনা পয়সায় চামড়া সংগ্রহ করেছেন।

আবার অনেক ফড়িয়া, আড়তদার ও ট্যানারি মালিকদের প্রতিনিধি এবং মৌসুমী ব্যবসায়ীরাও চামড়া সংগ্রহে ছিলেন বেশ তৎপর। তাদের কেউ কেউ সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে কম দামে আবার কেউ কাছাকাছি দামে চামড়া কিনেছেন।

বিকেলের শেষভাগে এদের মধ্যে মৌসুমী ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা আগের যোগাযোগের সূত্র ধরে পুরান ঢাকার পোস্তার আড়তদারদের কাছে বিক্রির জন্য চামড়া নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন।

মিরপুর ১ নম্বর থেকে পিকআপ নিয়ে প্রায় ২০০ পশুর চামড়া নিয়ে পোস্তায় বিক্রি করতে যাচ্ছেন মামুন মিয়া।

তিনি বলেন, “এক আড়তদারের কাছ থেকে কিছু অগ্রিম টাকা এনেছি। এখন সেখানে চামড়া নিয়ে যাচ্ছি।“

বর্তমানে রাজধানীতে কোনও ট্যানারি নেই। সবগুলো সাভারের হেমায়েতপুরে চামড়া শিল্প নগরীতে স্থানান্তর করা হয়েছে।

তাই অনেক ট্যানারি মালিক রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় অস্থায়ী ক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করে চামড়া সংগ্রহ করছেন।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা ঈদের দিনে শুধু ঢাকার চামড়া সংগ্রহ করছি। ফড়িয়া, মৌসুমী ব্যবসায়ী, বিভ্ন্নি মাদ্রাসা ও এতিমখানাভিত্তিক উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা শুরু করেছি।“

ঢাকার বাইরের চামড়া পরে সংগ্রহ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকার বাইরের চামড়া ঠিকমত লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করে রেখে পরে সুবিধাজনক সময়ে ঢাকায় এনে ট্যানারি শিল্প এবং আড়তদারদের কাছে বিক্রি করবেন ব্যবসায়ীরা।“

এবারের চামড়া সংগ্রহ পরিস্থিতির বিষয়ে শাহীন আহমেদের আশঙ্কা এবার গতবারের চেয়ে কম সংগ্রহ হবে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “আমাদের ধারণা অনুযায়ী এবার ঢাকায় ৫ লাখ গরু এবং এক লাখ ছাগলের চামড়া পাওয়া যেতে পারে, যা গত বছরের তুলনায় এক থেকে দুই লাখ কম হতে পারে।“

সারা দেশের অবস্থা এমন হলে চামড়া নিয়ে কিছুটা সংকটও হতে পারে বলে আশংকা করেন তিনি।

এবার দেশে প্রায় এক কোটি পিস পশুর চামড়া সংগ্রহের আশা করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

বিপুল এই চামড়া সংগ্রহে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আড়ত ও ট্যানারিগুলোর জন্য ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরু বা মহিষের চামড়ার দর ৪০ থেকে ৪৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে।

গত বছর এই দর ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, যা ২০১৯ সালের চেয়ে প্রায় ২৯ শতাংশ কম ছিল।

ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরু বা মহিষের চামড়ার দাম হবে ৩৩ টাকা থেকে ৩৭ টাকা, গতবছর যা ২৮ থেকে ৩২ টাকা ছিল।

এছাড়া লবণযুক্ত খাসির চামড়ার দর প্রতি বর্গফুট ১৫ থেকে ১৭ টাকা, আর বকরির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

গতবছর খাসির চামড়ার দর ১৩ থেকে ১৫ টাকা এবং বকরির চামড়া ১০ থেকে ১২ টাকায় বেঁধে দেয় সরকার।