এর অংশ হিসেবে দুর্ঘটনা রোধের পাশাপাশি সবার জন্য নিরাপদ কাজের পরিবেশ ঠিক রাখতে সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নিতে বহুপক্ষীয় একটি কমিটি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এক প্রজ্ঞাপনে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এর নেতৃত্বে ২৪ সদস্যের এই কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়।
উচ্চ পর্যায়ের এই কমিটি গঠনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পৃথক ‘অনুশাসনে’ অবিলম্বে সব শিল্প কলকারখানা সরেজমিনে পরিদর্শনের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নেতৃত্বে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে অবিলম্বে সকল শিল্প কলকারখানা সরেজমিনে পরিদর্শনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। “
হাসেম ফুডস কারখানায় সম্প্রতি ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৫১ জন শ্রমিক নিহত ও বহুশ্রমিক আহত হন।
এই দুর্ঘটনার পর কারখানায় ঝুঁকিপূর্ণ কর্মপরিবেশ, অগ্নি নিরাপত্তা ও অবকাঠামোগত দুর্বলতার বিষয়টি আবারও আলোচনায় আসে।
কাছাকাছি সময়ে রাজধানীর মগবাজারে ব্যস্ত এলাকায় একটি ভবনে ভয়াল বিস্ফোরণে ১২ জনের প্রাণহানি হয়। ওই ভবনে নিচ তলা ও দোতলায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ছিল।
বৃহস্পতিবারের প্রজ্ঞাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটির কার্যপরিধি ও কার্যপ্রণালীও ঠিক করে দেওয়া হয়েছে।
কমিটির কাজের পরিধি
>> কল-কারখানা, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে দুর্ঘটনারোধ এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ/কমিটি কর্তৃক সরেজমিন পরিদর্শনে পাওয়া পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশমালা পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ।
>> কল-কারখানা, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট আইনানুগ কর্তৃপক্ষগুলোর কার্যক্রম পরিবীক্ষণ।
>> কল-কারখানা, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামোর বিষয়ে প্রায়োগিক আইন/বিধি/নীতিমালা/গাইডলাইন/নির্দেশনাগুলো পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ।
>> সংশ্লিষ্ট আইন/বিধি/নীতিমালা/গাইডলাইন/নির্দেশনাগুলো পরিপালনের বিষয়টি পরিবীক্ষণ।
>> কল-কারখানা, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে অগ্নিকাণ্ড/দুর্ঘটনা সম্পর্কে কর্মী ও ব্যবস্থাপনার সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ।
সদস্য হিসেবে রয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী, শিল্পমন্ত্রী, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী, সংশ্লিষ্ট সংসদীয় এলাকার সংসদ সদস্য, সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন/ পৌরসভার মেয়র, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব, বাণিজ্য সচিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব, শিল্প সচিব, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিডা এর নির্বাহী চেয়ারম্যান, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউক এর চেয়ারম্যান, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন), গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী, স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক, এফবিসিসিআই সভাপতি ও বিজিএমইএর সভাপতি।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, এই কমিটি প্রয়োজনীয় সংখ্যক সাব-কমিটি গঠন করতে পারবে এবং এসব সাব-কমিটির পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশমালার আলোকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
>> এই কমিটিতে প্রয়োজনে যে কোনো সংখ্যক সরকারি-বেসরকারি ব্যক্তিকে সদস্য হিসাবে কো-অপ্ট করা যাবে।
>> এই কমিটি সরকারের বিবেচনার জন্য প্রয়োজনীয় সুপারিশমালা প্রণয়ন করবে।
প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকেই এসব আদেশ কার্যকর হবে বলে এতে উল্লেখ করা হয়।
পৃথক অনুশাসন
>>বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নেতৃত্বে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে অবিলম্বে সব শিল্প কলকারখানা সরেজমিনে পরিদর্শনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
>> এসব পরিদর্শনের আলোকে শিল্প কলকারখানাগুলোর অবকাঠামোগত এবং অগ্নি-দুর্ঘটনা ও অন্যান্য দুর্ঘটনা নিরোধের বিদ্যমান অবস্থা পর্যালোচনা এবং করণীয় নির্ধারণে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়নের জন্য বিডা সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব পালন করবে।
আরও পড়ুন