ঋণ পুনঃতফসিল: ছাড় পাচ্ছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা

কোরবানি ঈদে চামড়া কেনার জন্য ব্যবসায়ীরা যাতে কিছুটা বেশি ঋণ পান সেজন্য ব্যাংকগুলোকে কিছুটা ছাড় দিতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 July 2021, 06:38 PM
Updated : 13 July 2021, 06:38 PM

মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন করেছে, যাতে চামড়া ব্যবসায়ীদের ৩ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট (এককালীন জমা) দিয়ে আগে নেওয়া ঋণের অপরিশেধিত অর্থ সর্বোচ্চ তিন বছরের জন্য পুনঃতফসিল করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনটি দেশের সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

২০২১ সালের আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানি পশুর চামড়া কেনার জন্য চামড়া ব্যবসায়ীদের ঋণ ও বিনিয়োগ সুবিধা প্রদানের জন্য এই প্রজ্ঞাপন করা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, “চামড়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে যারা গত বছর ব্যাংকগুলো থেকে টাকা নিয়ে পুরো টাকা ফেরত দিতে পারেননি, তারা এবার চাইলে প্রতিষ্ঠানে অবিক্রিত চামড়া ব্যাংকের কাছে বন্ধক রেখে গতবারের সমপরিমাণ টাকা নিতে পারবেন।

“তবে এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের অপরিশেধিত অর্থের উপর ৩ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট ব্যাংককে দিতে হবে। এই অপরিশেধিত অর্থ সর্বোচ্চ ৩ বছরের জন্য পুনঃতফসিল করা যাবে।“

সাধারণ নিয়মে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ অর্থাৎ খেলাপি ব্যবসায়ীরা এবছর ঋণ পাওয়ার যোগ্য হতেন না।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, “চামড়া শিল্পে বিরাজমান সমস্যাসহ কোভিড-১৯ এর নেতিবাচক প্রভাবজনিত কারণে ২০২০ সালে কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া কেনার উদ্দেশ্যে বিতরণ করা ঋণের কিছু অংশ অনাদায়ী রয়েছে।

ফলে ২০২১ সালের আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর চামড়া কেনার উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় ঋণ/বিনিয়োগ সুবিধা প্রদান করা তফসিলি ব্যাংকগুলোর পক্ষে দুরূহ হয়ে পড়েছে।

“কিন্তুদেশীয় কাঁচামালভিত্তিক চামড়া শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামালের প্রায় অর্ধেক যোগান আসে প্রতিবছর পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর চামড়া থেকে। এ সময় চামড়া ব্যবসায়ীদের নিকট প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান নিশ্চিত করা গেলে একদিকে মূল্যবান কাঁচামাল সংরক্ষণ করা সম্ভবপর হবে, অন্যদিকে কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী আর্থিকভাবে উপকৃত হবে।”

এবার দেশের ৯টি ব্যাংক চামড়া ব্যবসায়ীদের ৫৮৩ কোটি টাকার তহবিলের জোগান দেবে বলে জানিয়েছে।

এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানার ২২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে রূপালী ব্যাংক। জনতা ব্যাংক ১৪০ কোটি, অগ্রণী ব্যাংক ১২০ কোটি এবং সোনালী ব্যাংক ২৫ কোটি টাকা দেবে।

এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক আড়াই কোটি টাকা ঋণ দেবে।

বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে চামড়া কিনতে ইসলামী ব্যাংক ৬৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, এনসিসি ব্যাংক ৫০ লাখ টাকা এবং দি সিটি ব্যাংক ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ রেখেছে বলে জানা গেছে।

তবে ঋণের জন্য বরাদ্দ রাখা এই টাকার মধ্যে মাত্র ৪০ কোটি থেকে ৪৫ কোটি টাকা চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছে যাবে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন ট্যানারি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহিন আহমেদ।

এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “এই ঋণ ব্যাংকগুলো এক যুগ ধরে দিয়ে আসছে। এই ঋণ আমরা ২৭০ দিনের জন্য পেয়ে থাকি। সুদের হার ৭ শতাংশ। ২০১৭ সাল থেকে চামড়া ব্যবসায় সমস্যা দেখা দিলে ব্যাংকের অনেক টাকা ফেরত দিতে পারেনি চামড়া ব্যবসায়ীরা। এর ফলে নতুন ঋণ দেওয়ার সময় পুরোনা টাকা ব্যাংকগুলো সমন্বয় করে রাখবে।

“ফলে এবার ব্যাংকগুলো যে ঘোষণা দিয়েছে তা থেকে মাত্র ৪০ থেকে ৪৫ কোটি টাকা ঋণ পাবেন ব্যবসয়ীরা। অথচ আমাদের দরকার ৪০০ কোটি টাকার মত।”

আগের বছর ৬৪৫ কোটি টাকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল ব্যাংকগুলো, সেখান থেকে ব্যবসায়ীরা পেয়েছিলেন ৬০ থেকে ৬৫ কোটি টাকা।

এবার বাংলাদেশ ব্যাংকের এই ছাড়ের ফলে আগের বারের মত ৬০ থেকে ৬৫ কোটি টাকা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে ব্যবসায়ীদের জন্য বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।  

আরও পড়ুন