বিদেশি অর্থায়ন: ১১ মাসে ছাড় ও প্রতিশ্রুতি দুটোই বেড়েছে

সদ্য সমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রায় পুরোটা সময় করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে কাটলেও মে মাস পর্যন্ত সরকারি উন্নয়ন কার্যক্রমে বৈদেশিক অর্থায়নের পরিমাণ এবং সামনের দিনগুলোতে ঋণ পাওয়ার প্রতিশ্রুতি উভয়ই বেড়েছে।

জাফর আহমেদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 July 2021, 03:37 AM
Updated : 1 July 2021, 03:37 AM

একদিন আগেই শেষ হওয়া অর্থবছরের ১১ মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৫০ কোটি ডলার বেশি অর্থছাড় হয়েছে। ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ বেড়ে ঋণ ও অনুদান মিলে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে মোট ৫৭৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার পাওয়া গেছে।

অন্যদিকে ভবিষ্যতে প্রকল্প বাস্তবায়নে ঋণ দিতে উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রুতি বেড়েছে ১০০ কোটি ডলারের বেশি। 

তবে এই সময়ে অর্থছাড়ের পরিমাণ পুরো অর্থবছরের মোট লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম বলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে।

২০১৯-২০ অর্থবছরের মে পর্যন্ত সময়ে ছাড় হয়েছিল ৫২৩ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। আর সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে মোট ৭৪১ কোটি ডলারের বৈদেশিক সহায়তা ছাড়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল সরকার।

এই বিষয়ে ইআরডির ফরেন এইড বাজেট উইংয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত অর্থবছরের মাত্র ৩ মাস কোভিড-১৯ এ ক্ষতি হয়েছিল। কিন্তু এবার প্রায় পুরোটা সময়ই মহামারীর প্রভাব ছিল।

“তা সত্বেও গত অর্থবছরের তুলনায় বেশি বৈদেশিক অর্থছাড় করতে পারাটা কিছুটা স্বস্তির।”

প্রকৃত বৈদেশিক অর্থায়ন ছাড়ের পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, “এই প্রতিবেদনেও ছাড় হওয়া অনেক অর্থ যোগ করা সম্ভব নাও হতে পারে। কারণ অনেক প্রকল্প ও কার্যক্রম দীর্ঘসূত্রীতা থাকায় ওইসব ছাড় রিফলেক্ট করতে সময়ের প্রয়োজন হয়। সকল ছাড়ের চূড়ান্ত হিসাব করতে অর্থবছর শেষেও প্রায় দেড় থেকে দুই মাস সময় লেগে যায়।

“তখন দেখতে পারি যে আমরা টার্গেটের খুব কাছকাছি চলে যেতে পারি।”

মহামারী দীর্ঘ হতে পারে এমন আশংকায় সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে বেশ কিছু কৌশল নেওয়া হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক ও মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে বৈঠক করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছি।

“এছাড়াও মেগা প্রকল্পগুলোর মনিটরিং জোরদার করার মাধ্যমে অর্থছাড় বাড়াতে নেওয়া উদ্যোগের ফলে মহামারীর মধ্যেও ছাড় বেড়েছে।“

তার মতো সংশ্লিষ্ট অন্যদেরও আশা বছর শেষে অর্থছাড় বাড়বে। কেননা অর্থবছরের শেষ মাসে বরাবরই ছাড়ের পরিমাণ বেশি থাকে।

সে কারণে শেষ পর্যন্ত পুরো বছরের বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান পেতে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল সেটির কাছাকাছি পৌঁছানো যাবে বলে তাদের প্রত্যাশা।

ইআরডির সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের মে পর্যন্ত ১১ মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) আওতায় চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে অর্থায়ন পেতে যেসব ঋণ চুক্তি হয়েছিল সেখান থেকে মোট ৫৭৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার ছাড় হয়েছে।

আগের অর্থবছরের ১১ মাসের চেয়ে যা ৪৯ কোটি ৮৭ লাখ ডলার বেশি।

অন্যদিকে পুরো অর্থবছরের মোট লক্ষ্যমাত্রা থেকে অর্থায়ন ছাড়ের পরিমাণ ১১ মাস শেষেও কম ১৬৮ কোটি ডলার।

২০২০-২১ অর্থবছরে উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে মোট ৭৪১ কোটি ডলারের বৈদেশিক অর্থায়ন পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল সরকারের।

এদিকে সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের মে পর্যন্ত ১১ মাসে ৫৩৬ কোটি ২৭ লাখ ডলারের নতুন বৈদেশিক ঋণ পাওয়ার প্রতিশ্রুতি মিলেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১০০ কোটি ৪৭ লাখ ডলার বেশি।

২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪৩৫ কোটি ৭৯ লাখ ডলারের প্রতিশ্রুতি আদায় করা সম্ভব হয়েছিল।

এদিকে সরকার সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের ১১ মাসে দাতাদের পুঞ্জিভূত পাওনা থেকে মোট পরিশোধ করেছে ১৭১ কোটি ৫৬ লাখ ডলার।

এরমধ্যে আসল হিসেবে পরিশোধ করেছে ১২৬ কোটি ৩৪ লাখ ডলার এবং ৪৫ কোটি ২১ লাখ ডলার পরিশোধ করেছে সুদ হিসেবে।