বিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন প্রযুক্তিতে নজর সরকারের: প্রতিমন্ত্রী

কয়লাভিত্তিক ১০টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা থেকে সরে আসার ঘোষণার পর বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে নবায়নযোগ্য বিভিন্ন উৎস এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের দিকে নজর দিচ্ছে সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 June 2021, 07:07 PM
Updated : 27 June 2021, 07:07 PM

রোববার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের বিশদ পরিকল্পনায় থাকা ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত বাতিলের কথাও জানান তিনি।

এসব কেন্দ্র নির্মাণে ১০ বছর আগে পরিকল্পনা নেওয়া হলেও সময়মত এগুলো বাস্তবায়ন না হওয়াই প্রকল্প বাতিলের অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে বিশ্বব্যাপী পরিবেশবাদীদের উদ্বেগের বিষয়টিও সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়।

আগামী ২০ বছরের মধ্যে পরিকল্পনা অনুযায়ী ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদনে সরকারের ইচ্ছার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানির ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। নতুন প্রযুক্তি, জ্বালানির দামের ওঠানামার কারণে নতুনভাবে চিন্তা করার একটা বিষয় চলে আসছে।

“বাংলাদেশে যে উন্নয়ন হচ্ছে এবং যেই ধারা আমরা বজায় রাখতে চাই, তাতে মূল চালিকা শক্তি হিসাবে কাজ করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি। একে নিরবিচ্ছিন্ন ও সুলভ রাখতে চাইলে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত নতুন প্রযুক্তির সাথে সংযুক্ত হতে হবে।“

তিনি আরও বলেন, “এই চিন্তা করেই যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র সময়মত আসতে পারে নাই, তা বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী এই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।

“রিনিউবল এনার্জির ক্ষেত্রে আমাদের প্রতিশ্রুতি হচ্ছে ২০৪১ সালের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ রিনিউবল এনার্জি থেকে উৎপাদন টার্গেট রেখেছি। সে অনুযায়ী কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদনের নতুন নতুন যে সম্ভাবনাগুলো আসছে সেগুলো নিতে চেষ্টা করছি।”

দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সেজন্য নেপাল ও ভূটানের মতো দেশ থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি আনার চেষ্টা চলছে।

“নবায়নযোগ্য জ্বালানির মধ্যে সোলার পাওয়ার প্লান্ট যেটা আছে তার দাম এখনও সহনীয় পর্যায়ে আসে নাই। প্রচুর জায়গা লাগে, উৎপাদন খরচও অনেক বেশি। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে সোলার পাওয়ার প্লান্টের পরিধি কিভাবে বাড়ানো যায়।

‘নেট মিটারিংয়ের’ মাধ্যমে খরচ কিছুটা কমছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “বাড়ি, ফ্যাক্টরির ছাদে কিছু সোলার যদি করা যায় তাহলে বিদ্যুতে কিছুটা সাশ্রয় হবে। তবে আমরা রিনিউবল এনার্জির ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিচ্ছি নেপাল থেকে ও ভূটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করার মাধ্যমে।

জলবিদ্যুৎ নিয়ে নেপালের সঙ্গে সমঝোতা চূড়ান্ত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যে কনসাল্টেন্ট নিয়োগ করা হয়েছিল তাদের রিপোর্ট এই মাসের মধ্যেই পেয়ে যাব।

“আগামী মাসের মধ্যেই নেপালের সঙ্গে ফাইনাল চুক্তি হয়ে যাবে।”

আপাতত নেপাল থেকে ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চিন্তা করছে সরকার জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, “সে লক্ষ্যে ভারতে একটি গ্রিড লাইন স্থাপনের কাজও চলছে।

“এখন ৭০০ মেগাওয়াটের কথা আলোচনা হচ্ছে। ভারতের জিএমআর কোম্পানি তাদের ট্রান্সমিশন লাইন করবে। তাদের কাছ থেকে আমরা নেপালের বিদ্যুৎ নেব। সুবিধা হচ্ছে এতে বিুদ্যতের লাইনটা নির্মাণ হয়ে যাবে। বড় দ্বার উন্মোচন হবে।“

ভবিষ্যতে ড্রাই সিজনে বিদ্যুৎ রপ্তানিও করার সুযোগ থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনার ক্ষেত্রে আমরা কেবল ট্যারিফের পয়সা দেব।“

নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনার ক্ষেত্রে ভারতের দিক থেকে কোনো বাধা বা অসহযোগিতার কিছু নেই বলেও উল্লেখ করেন প্রতিমন্ত্রী।

রিনিউবল এনার্জির বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “নবায়নযোগ্য জ্বালানি বলতে কেবল সৌরবিদ্যুৎ নয়। বায়ু বিদ্যুৎ, জলবিদ্যুৎ, সৌরবিদ্যুৎ। প্রযুক্তিগুলো প্রতিনিয়তই পরিবর্তন হচ্ছে। ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ নবায়ণযোগ্য উৎস থেকে আসবে এটাই হচ্ছে মূল কথা। “

কিভাবে নেপালে বাংলাদেশের অর্থায়নে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায় সেই চেষ্টা চলছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, “সেটা বাংলাদেশের প্রাইভেট সেক্টর হউক কিংবা ভারতের প্রাইভেট সেক্টর হউক। অথবা সরকারি পর্যায়ে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে বিনিয়োগ করবো।

“কিভাবে সেখানে হাইড্রো পাওয়ার উৎপাদন বাড়ানো যায় আমরা সেটা চিন্তা করছি। কোনো দেশ কিংবা কোনো সরকারের পক্ষ থেকে এখানে কোনো বাধা নেই।“