কোভিড: দ্রুত টিকাদান ও প্রণোদনা প্যাকেজ বড় করার তাগিদ

কোভিড-১৯ মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় দেশের নাগরিকদের দ্রুত টিকার আওতায় আনার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি ঠিক রাখতে চলমান প্রণোদনা প্যাকেজ পুনর্নির্ধারণের মাধ্যমে আরও বড় করার পরামর্শ এসেছে এক আলোচনা সভায়।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 June 2021, 01:20 PM
Updated : 24 June 2021, 01:21 PM

একই সঙ্গে উন্নত দেশগুলোকে অনুসরণ করে ভোক্তা, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানবান্ধব উদ্যোগের মাধ্যমে যথাসময়ে সরকারের প্রণোদনা কমর্সূচি বাস্তবায়নের পরামর্শও দিয়েছেন বক্তারা।

বৃহস্পতিবার ‘লিংকিং কোভিড স্টিমুলাস টু কনজাম্পশন, ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট” শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনায় তারা এমন পরামর্শ রাখেন।

বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট-বিল্ড আয়োজিত এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। গেস্ট অব অনার ছিলেন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) পরিচালক টুমো পওশিয়ানেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসীম উদ্দিন।

বিল্ড এর চেয়ারম্যান আবুল কাশেম খানের সভাপতিত্বে ও এমসিসিআই সভাপতি নিহাদ কবিরের সঞ্চালনায় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান ড. মাশরুর রিয়াজ।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে প্রণোদনা প্যাকেজ পুনর্নির্ধারণের কথাবার্তা শুরু হয়েছে। তবে এখনও সঠিকভাবে কিছু বলার মত হয়নি।

“রপ্তানি খাতের ওপর আমাদের নির্ভরশীলতা ক্রমে বাড়লেও এখনও আমাদের অর্থনীতি কৃষিপ্রধান। তবে আমরা প্রায় ১০ লাখ লোককে শারিরীক পরিশ্রম থেকে বের করে আনতে পেরেছি।”

ফাইল ছবি

মহামারীতে কম আয়ের ঝুঁকিপূর্ণ মানুষগুলোর কাছে আরও ব্যাপকভাবে সহায়তা পৌঁছে দেওয়া প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেন তিনি।

নারী উদ্যোক্তাদের বিষয়ে বিশেষভাবে সতর্ক থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করে এমএ মান্নান বলেন, “দেশের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কাছে আরও বেশি করে সহায়তা পৌঁছাতে হবে।

মূল প্রবন্ধে মাশরুর রিয়াজ বলেন, “গত বছর থেকে সরকার প্রায় ১ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করছে এটি প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।

“দেশে এখন দ্বিতীয় ঢেউ নতুন মোড় নিয়েছে। এখান থেকে বের হতে হলে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে টিকাসংগ্রহসহ দেশের প্রয়োজনীয় সকলকে টিকার আওতায় নিয়ে আসার বিষয়টিতে।”

সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় পরিচালিত কর্মকাণ্ডও যথাসময়ে বাস্তবায়ন করার তাগিদ দেন তিনি।

বিভিন্ন সমীক্ষার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, “মহামারীর কারণে এখন পর্যন্ত দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। চাহিদা কমে যাওয়ায় ৮০ ভাগের মতো প্রতিষ্ঠানের বিক্রি কমে গেছে। ৭৮ শতাংশ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ক্রয়াদেশ কমে গেছে।

“৪৪ শতাংশ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা এবং ৩৮ শতাংশ নীচু সারির প্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান প্রায় ৫০ শতাংশ কর্মী ছাঁটাই করেছে।“

বিল্ড পরিচালিত এক সমীক্ষার কথা উল্লেখ করে ড. রিয়াজ বলেন, “গেল বছর দেশের মাত্র ৩১ শতাংশ এসএমই প্রতিষ্ঠান আয় বাড়াতে পারলেও ৬১ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের আয় কমে গেছে।“

এমন পরিস্থিতিতে কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউ আরও দীর্ঘ এবং কঠিন সময়ে দিকে যাওয়ার আশংকায় তিনি সরকারকে প্রণোদনা প্যাকেজ আবার নতুন করে সাজিয়ে বড় করার পরামর্শ দেন।

মহামারী মোকাবিলায় অন্য দেশের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এগুনোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “জার্মানি মহামারী মোকাবিলায় জিডিপির প্রায় ২৪ শতাংশ প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করছে। যুক্তরাষ্ট্র জিডিপির ১০ শতাংশের সমান ২ লাখ ২০ হাজার কোটি ডলারের প্য্যাকেজ বাস্তবায়ন করছে।“

তিনি বলেন, “অথচ উঠতি অর্থনীতির দেশ হওয়ায় আমাদের বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান প্রায় নতুন এবং ক্ষুদ্র হওয়ায় ঝুঁকি বেশি। তাই আমাদের দেশের জন্য প্রণোদনাও বেশি প্রয়োজন।“

পলিসি রিসার্চ এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আরও বলেন, “চলমান প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা লাভবান হতে পারছেন না। কারণ প্রথমত আমাদের তথ্যের ঘাটতি রয়েছে। এছাড়া ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলো এত বেশি শর্ত আরোপ করেছে ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলো সেসব পূরণ করতে না পেরে বঞ্চিত হচ্ছে।

“ওই প্যাকেজের ৮৩ শতাংশ বাস্তবায়নের কথা বলা হলেও বাস্তবে দেশের অধিকাংশ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাই ওই প্যাকেজের আওতায় আসতে পারেননি।”

তিনি বেকার ও ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের হাতে নগদ সহায়তা পৌঁছানো, স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ আরও বাড়ানো, সবার স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিচালক টুমো পওশিয়েনেন বলেন, “মহামারী মোকাবিলায় শিশু, যুব, ছোট-বড় উদ্যোক্তা সবার কাছে যেতে হবে। যার প্রয়োজন তাকেই সহায়তা দিতে হবে।

তিনি বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তোলার তাগিদ দিয়ে সরকারি বেসরকারি অংশগ্রহণ (পিপিপি) ও ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ বাড়াতে নীতি সহায়তায় জোর দেওয়ার পরামর্শ দেন।

তিনি এসএমই‘র পাশাপাশি অনানুষ্ঠানিক খাতেও জোর দেওয়ার সুপারিশ করেন।

এফবিসিআই সভাপতি জসীম উদ্দিন বলেন, “প্রণোদনা প্যাকেজ এখন আরও বড় করতে হবে। এবং এই সহায়তা আগামী কয়েক বছর অব্যাহত রাখতে হবে।“

সরকারের এখন সবচেয়ে বেশি প্রাতিষ্ঠানিক বা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের হালনাগাদ তথ্য প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যতদ্রুত সম্ভব তথ্য সংগ্রহ করে সময়মত সহায়তায় এগিয়ে আসতে হবে।“

ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ উৎসাহে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলেন এই ব্যবসায়ী নেতা।

ভাচুর্য়াল এই আলোচনায় সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানসহ আরও অনেকে বক্তব্য দেন।