১০ মিনিটে বাজেট নিয়ে কী আলোচনা করা যায়: মেনন

ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন অভিযোগের সুরে বলেছেন, এবার জাতীয় সংসদে বাজেটের ওপর আলোচনার জন্য সংসদ সদস্যদের যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়নি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 June 2021, 02:17 PM
Updated : 17 June 2021, 02:17 PM

বৃহস্পতিবার বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি ও অক্সফাম আয়োজিত ‘কোভিডকালীন বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থানে কী আছে’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই কথা বলেন।

সংলাপে বরিশাল, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের বেশ কয়েকটি দরিদ্রপ্রবণ এলাকার সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরাও অংশ নেন।

কোভিডকালীন এই দুর্যোগের মধ্যেও সরকারের পক্ষ থেকে দরিদ্র মানুষের জন্য যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা পেশি শক্তির কারণে সঠিক মানুষ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ তোলেন অনেক বক্তা।

সংলাপে রাশেদ খান মেনন বলেন, “কোভিডকালীন সুযোগ নিয়ে টেকনিক্যালি আজকে (জাতীয় সংসদে সাধারণ এমপিদের আলোচনা) শেষ হয়ে গেল। এরপর ২৮, ২৯ ও ৩০ তারিখে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেত্রী অথবা আরও কয়েকজন সিনিয়র লিডার কথা বলতে পারেন। এরপর বাজেট পাশ হয়ে যাবে।”

সরকারদলীয় সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরীর মতো বাজেট প্রণয়নের আগে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংস্দীয় স্থায়ী কমিটির সঙ্গে বাজেট আলোচনা করেন না বলে সমালোচনাও করেন তিনি।

“আমাদের সংসদে কথা বলতে হয় বলে, বলছি। ১০ মিনিটের মধ্যে বাজেটে কী আলোচনা করা যায়। একটা পয়েন্ট বলতে গেলেই ১০ মিনিট সময় চলে যায়। সেখানে কী বলা যায়?

অভিজ্ঞ এই পার্লামেন্টারিয়ান বলেন, “যদি (সংসদীয় স্থায়ী) কমিটির সঙ্গে আলোচনা হত, তাহলে সেখানে সময় নিয়ে আমরা এই আলোচনা করতে পারতাম।”

এসময় তিনি সম্প্রতি সাবের হোসেনের এক মন্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “আসলেই হ্যাঁ এবং না বলার মধ্যে আমাদের দায়িত্ব চলে যায়, তখন সংসদ কোনও কার্যকর প্রতিষ্ঠানই থাকে না।”

মেনন বলেন, “দু:খের সঙ্গে বলতে চাই যে সেই দ্বিতীয় সংসদ থেকেই আমি সংসদ সদস্য। ‘৯১ এর পার্লামেন্টেও যখন আমরা বিরোধী দলে ছিলাম তখনও কিন্তু সংসদে বাজেট নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা খুব ভালো আলোচনা হতো।

এসময় জনপ্রতিনিধিদের ওপরে সচিবদের বসিয়ে দেওয়া হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ৫০ লাখ দরিদ্র লোকের যে তালিকা করা হয়েছে, সেখানে সর্বোচ্চ জন প্রতিনিধিদের...নেওয়া হয়নি।

“শেষ পর্যন্ত পত্র-পত্রিকায় নিচের লেভেলে গম চুরি থেকে শুরু করে চাল চুরির রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু প্র্যাক্টিক্যালি এটা বিলিবন্টন থেকে শুরু করে সমস্ত ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আমলাতন্ত্রই কাজ করেছে।“

এতে ৫০ লাখ লোকের মধ্যে ৩৫ লাখ পেয়েছেন, তাও সঠিকভাবে পায়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মেনন বলেন, “এই বন্টন সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় জিটুপি পদ্ধতিতে দেওয়া হয়েছে। সেখানে শহরের অধিকাংশ বস্তিবাসী তাদের বেশিরভাগেরই গ্রামের ঠিকানা। সেখানেই তাদের আইডি কার্ড। ফলে এটা মিলছে না, বিরাট অংশ বাদ পড়ে যাচ্ছে।“

সংলাপে অংশগ্রহণকারীরা। ছবি সিপিডির ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া।

এই যে সমস্যাগুলো এগুলো কী সমাধান করার ছিল না, জানতে চান তিনি।

সংলাপে সভাপতির বক্তব্যে সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, “১৯৬৫ সালের সময় দেশে বন্টনের যে সমস্যা ছিল, সরকার এখনও সে সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। তখন কয়েক হাজার কোটি টাকার বাজেটে যে সমস্যা ছিল, এখনও একই সমস্যা রয়ে গেছে।“

তিনি বলেন, “তৃণমুল পর্যায় থেকে যেসব তথ্য উঠে আসছে, এসব তথ্য সরকার আমলে নেয় না। সরকার এখনো মুক্তিযোদ্ধার ভাতা, পেনশন এবং সঞ্চয়পত্রের সুদ সামাজিক নিরপত্তা খাতে দেখিয়ে সামাজিক নিরাপত্তা খাতকে বড় করে দেখানোর চেষ্টা করছে।

“দেশের ঝুকিপূর্ণ দরিদ্র মানুষগুলোর জন্য সঠিকভাবে যেটা করা উচিত, সেটা করছে না। বাজেটের আগে দেশের সকল পেশা ও এলাকাভিত্তিক এবং সুশীল সমাজের সঙ্গে কার্যকর কোনও আলোচনা করছে না। আবার কিছু আলোচনা করলেও সেটা আমলে নেওয়া হচ্ছে না।“

এসময় সুশৃংখল পন্থায় বাজেট হচ্ছে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, “বাজেট নিয়ে কোনও তথ্য উপাত্তের ভিত্তি ছাড়া সংসদে এক ধরণের নাটক মঞ্চস্থ করছে।

“বাজেটের মাধ্যমে সারা দেশের মানুষকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ফেলে তাদের যার যা প্রয়োজন সেভাবে সহযোগিতা করতে হবে। ঝুকিপূর্ণদের তালিকায় আনতে হবে। যারা কর্ম হারিয়েছেন তাদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে।“

এসময় তিনি বাজেট প্রণয়নে একটি ভালো কাঠামোর অনুসরণের কথা উল্লেখ করে বলেন, “উন্নত দেশ এমনকি আমাদের প্রতিবেশি দেশগুলোতেও এই নিয়ম চালু রয়েছে যে, বাজেট ঘোষণার আগে বাজেটের রূপরেখা ঠিক করে এটি প্রথমে জাতীয় সংসদের ফ্যাইন্যান্স কমিটির কাছে পাঠানো হবে।“

এরপর তাদের পরামর্শ দিয়ে বাজেট চূড়ান্ত করবে। কিন্তু বাংলাদেশে এই ধরনের কোনও চর্চা এখনও শুরু হয়নি, জানান তিনি।

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এর সঞ্চালনায় সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।

তিনি বলেন, পরিস্থিতির বিচারে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষকে সহযোগিতা করার বরাদ্দ নতুন বাজেটে দেওয়া হচ্ছে না।

চূড়ান্ত বাজেটে এই বরাদ্দ বাড়ানোর সুপারিশ তুলে ধরেন তিনি।

আরও বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য অধ্যাপক আলী আশরাফ, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান ও নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, অক্সফামের কান্ট্রি পরিচালক ড. দীপংকর দত্ত প্রমুখ।

আরও পড়ুন