বোরো সংগ্রহ সন্তোষজনক না হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা: খাদ্যমন্ত্রী

চলতি জুন মাসের মধ্যে বোরো সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৭৫ শতাংশ অর্জনের তাগাদা দিয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার খাদ্য কর্মকর্তাদের সতর্ক করে বলেছেন, অগ্রগতি সন্তোষজনক না হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 June 2021, 05:24 PM
Updated : 14 June 2021, 05:24 PM

একই সঙ্গে ফড়িয়াদের কাছ থেকে সরকার ধান সংগ্রহ করবে না বলেও সাফ জানিয়েছেন তিনি।

সোমবার সচিবালয়ে ‘অভ্যন্তরীণ বোরো সংগ্রহ ২০২১ এর রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের অগ্রগতি পর্যালোচনা’ সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

মহামারীর মধ্যে আগের কয়েকটি ধানের মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী না হওয়ায় দেশে খাদ্যশস্যের মজুদ কমে যায়। সরবারহ সংকটে চালের বাজারও চড়া হয়ে যায়।

মূলত মিল মালিকরা সরকারকে চাল সরবরাহ না করায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা যায়নি। তারা চালের দর বাড়ানোর দাবি জানিয়েছিল।

পরিস্থিতি সামাল দিতে ও মজুদ ঠিক রাখতে শেষ পর্যন্ত সরকারকে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিতে হয়।

এমন প্রেক্ষাপটে গত ২৬ এপ্রিল বোরো মৌসুমের ধান-চাল সংগ্রহে নতুন দর ঘোষণা করে সরকার।

কৃষকের জন্য কেজিতে এক টাকা এবং মিলারদের জন্য কেজিতে তিন টাকা দাম বাড়িয়ে এবারের বোরো মৌসুমে সাড়ে ছয় লাখ মেট্রিক টন ধান এবং সাড়ে ১১ লাখ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে সরকার।

কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনা হবে ২৭ টাকা কেজি দরে। আর মিলারদের কাছ থেকে ৪০ টাকায় সিদ্ধ চাল এবং ৩৯ টাকায় আতপ চাল কেনার কথা ২৬ এপ্রিল জানিয়েছিলেন খাদ্যমন্ত্রী।

গতবছর বোরো মৌসুমে ২৬ টাকা কেজি দরে ধান, ৩৭ টাকা কেজি দরে সিদ্ধ চাল এবং ৩৬ টাকা কেজি দরে আতপ চাল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার।

এ বছর বোরোতে ২ কোটি ৫ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে বলে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক জানান।

১১ মে হাওরে ধান কাটার অগ্রগতি বিষয়ক এক অনুষ্ঠানে তিনি জানান, গত বছর উৎপাদন হয়েছিল ১ কোটি ৯৬ লাখ টন। গত বছরের তুলানায় কমপক্ষে ১০ লাখ টন উৎপাদন বেশি হবে।

সোমবারের অনুষ্ঠানে বোরো সংগ্রহে ব্যর্থতায় কোনো অজুহাত চলবে না উল্লেখ করে খাদ্য কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “যারা ইতিমধ্যে সংগ্রহ অভিযানে লক্ষ্য পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে, তাদেরকে নতুন করে বরাদ্দ দেওয়া হবে।

“একই সাথে যাদের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়, তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।“

ধান-চাল সংগ্রহের এই সময়ে কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকার নিদের্শ দিয়ে তিনি আরও বলেন, “মিলাররা কেন চাল সরবারহে গড়িমসি করছেন, তা মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের খতিয়ে দেখতে হবে। মাঠ পর্যায়ের তথ্য সঠিক হলে পরিকল্পনা করা সহজ হয়।”

প্রকৃত কৃষকের ধান কেনাই খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মূল লক্ষ্যের কথা পুর্নব্যক্ত করে সাধন চন্দ্র বলেন, “ফুড গ্রেইন লাইসেন্স ছাড়া কেউ যাতে খাদ্য মজুদ না করে সেটি মনিটরিং করতে হবে।”

মিলাররা যাতে নির্ধারিত সময়ে চুক্তি অনুযায়ী চাল সরবরাহ করেন, সেটিও নিশ্চিত করতে খাদ্য কর্মকর্তাদের আরও নজরদারি বাড়াতে বলেন তিনি।

চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে তিনি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সমন্বয় করে বাজার ও মিলগেট মনিটরিং কাজে খাদ্য কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর নির্দেশ দেন।

তিনি বলেন, “মনে রাখতে হবে খাদ্য অধিদপ্তর ১৭ কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করে। যে কোনো দুর্যোগে এই সংগ্রহ করা খাদ্যশস্যই মুখ্য ভূমিকা রাখে।”

খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম।

খাদ্য অধিদপ্তরের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের খাদ্য বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা সভায় যুক্ত ছিলেন।

আরও পড়ুন-