কোভিড প্রণোদনা: নাহিম রাজ্জাক বললেন তরুণ উদ্যোক্তাদের হতাশার কথা

কোভিড-১৯ মহামারীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ক্ষুদ্র ও তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে অনেক রকমের ঘাটতি রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সরকারি দলীয় সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 June 2021, 01:13 PM
Updated : 13 June 2021, 01:13 PM

রোববার সাউথ এশিয়ান ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) ও একশন এইড বাংলাদেশ আয়োজিত ‘২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট: প্রেক্ষিত তরুণ জনগোষ্ঠী’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

একশন এইড বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি ফারাহ কবিরের সভাপতিত্বে এই আলোচনায় সমাজ কল্যাণ ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে কয়েকজন কর্মকর্তাও অংশ নেন।

আলোচনায় নাহিম রাজ্জাকের আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে কৃষিখাতের তরুণ উদ্যোক্তা ফারজিন আলম ঋণ পেতে উদ্যোক্তাদের ভোগান্তির কথা তুলে ধরেন।

নিজের প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, “চলতি অর্থবছরের বাজেটটা আমি ভালভাবে ফলো করেছিলাম। বাজেটে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য যে প্যাকেজ ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল সেই সূত্র ধরে আমি প্রণোদনার জন্য আবেদন করেছিলাম।

“নিয়ম মেনে প্রণোদনার জন্য আবেদন করলাম। এরপর ব্যাংক এতগুলো শর্ত দিল যে, আমি কোনওভাবে ওইসব শর্ত পূরণ করতে পারি নাই।“

প্রায় চার মাস ওই ঋণ পেতে ছোটাছুটির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “শেষ পর্যন্ত তারা আমাকে কোনও অর্থই দেয় নি।

“এসময় আমার পরিচিত সরকারের লোকজনকে জানানোর পরও আমি পারিনি।”

ওই একই সময়ে সিঙ্গাপুর ও হাঙ্গেরি থেকে ১ লাখ ৮৫ হাজার ডলারের বিনিয়োগ দেশে আনতে পেরেছেন জানিয়ে তিনি আরো বলেন, “কিন্তু মহামারী মোকাবিলায় সরকার ঘোষিত প্যাকেজ থেকে কোনও অর্থ নিতে পারিনি।”

প্রতিষ্ঠানটি একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নেতৃত্বে একটি ভালো কাঠামোর মাধ্যমে চলার পরও ঋণ পেতে সফল হয়নি জানিয়ে হতাশা প্রকাশ করে ফারজিন আলম প্রশ্ন রাখেন, “সেখানে অন্যরা পেরেছেন কীনা আমি জানি না।“

তার এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে নাহিম রাজ্জাক বলেন, “ক্ষুদ্র ও তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের জায়গায় অনেক রকমের ঘাটতি রয়েছে।”

তিনি বলেন, “তার সাথে (ফারজিন আলম) আমার একসময় পরিচয় হয়। তরুণ উদ্য্যোক্তা হিসেবে কৃষি ক্ষেত্রে তার বড় রকমের একটা প্রচেষ্টা রয়েছে। তার সাথে কথা বলে আমি ভ্যারি ইম্প্রেসড। 

“এসএমই খাতের জন্য যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল সেখান থেকে সুবিধা নেওয়ার জন্য সে আমার সাথে দুয়েকবার যোগাযোগ করার পরও আমরা তাকে কোনও রকমের সাপোর্ট দিতে পারি নাই।”

এটা সরকারের জন্য ব্যর্থতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “প্যাকেজে তরুণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আশ্চর্য্য হয়ে যাই কেন আমরা প্রান্তিক উদ্যোক্তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছি না।”

সরকারের এসব ভাল উদ্যোগ ও কর্মসূচি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহীতার মধ্যে আনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

নাহিম রাজ্জাক দক্ষ জনবল তৈরি, কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন করা এবং তরুণ জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্য সেবার আওতায় আনার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।

সভায় সানেম এর নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, “কোভিড-১৯ মহামারী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখতে সরকার যেসব উদ্যোগ হাতে নিয়ে তা বাস্তবায়নের সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে।

“নির্ধারিত সময় সীমার মধ্যে সরকার যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তা বাস্তবায়ন করতে না পারলে কোনওভাবেই উদ্দেশ্য সফল হবে না।“ 

এ জন্য তিনি সরকারের কাছে পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা জোরদার করার পরামর্শ রাখেন।

একশন এইড বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি ফারাহ কবির বলেন, “কোভিডের এই দ্বিতীয় বাজেটেও আমরা সরকারকে প্রবৃদ্ধিকে গুরুত্ব দিয়ে বাজেট প্রস্তাব করতে দেখলাম।

“কিন্তু এই মহামারীতে যে নতুন করে দেশের বিপুল পরিমাণ মানুষ যে দারিদ্র্য সীমার নীচে চলে গেল তাদের জন্য সরকার কি করছে তা নিয়ে বাজেটে কিছুই বলা হয়নি।“

“এসব প্রান্তিক মানুষের জন্য সরকার কি উদ্যোগ নিচ্ছে তা আমরা জানতে চাই,” যোগ করেন তিনি।

সানেম এর গবেষণা পরিচালক ড. সায়েমা হক বিদিশার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় এর আগে মূল প্রবন্ধে প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা ফেলো ইশরাত শারমিন বলেন, “দেশে চলমান জনমিতিক সুবিধা আমরা সর্বোচ্চ ২০৪০ সাল পর্যন্ত পেতে পারি। এরপর তরুণদের আধিক্য কমে যাবে।

“কিন্তু এই জনমিতিক সুবিধা গ্রহণের জন্য দক্ষ তরুণ সমাজ গড়ে তোলার জন্য যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে তা পর্যাপ্ত নয়।“

মূল প্রবন্ধে আরও বলা হয়, মহামারীর মধ্যে নতুন করে ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর পরিবারের আয় কমে গেছে। তাদের জন্য সরকার কী পদক্ষেপ নিচ্ছে তা পরিষ্কার নয়।

এতে শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল মাধ্যমে পড়াশোনার জন্য ডিভাইস ও ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

একই সঙ্গে যুব সংশ্লিষ্ট ২২টি মন্ত্রণালয়ের জন্য এডিপির মাধ্যমে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা অপ্রতুল বলে উল্লেখ করা হয়।