মহামারীকালে সমাজে অসমতা বেড়েছে আরও: ক্যাব

করোনাভাইরাস মহামারীর সঙ্কটে সমাজে অসমতা ‘আরও বেড়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 June 2021, 02:55 PM
Updated : 9 June 2021, 02:55 PM

বুধবার ক্যাব ও অনলাইন পোর্টাল ভোক্তাকণ্ঠের যৌথ উদ্যোগে ‘উন্নয়ন এবং অসমতায় ভোক্তা অধিকার' শীর্ষক ওয়েবিনার সিরিজের প্রথম পর্বে তার এ মন্তব্য আসে।

গোলাম রহমান বলেন, “করোনাকালীন সময়ে সমাজে অসমতা আরও বেড়ে গেছে। একদিকে দ্রব্যমূল্য বাড়ছে, অন্যদিকে আয়-রোজগার কমে গেছে।”

সরকারি হিসাবে মহামারীর মধ্যেও বাংলাদেশে মাথাপিছু গড় আয় ১৬৩ ডলার বেড়ে ২ হাজার ২২৭ ডলার হয়েছে।

সেই প্রসঙ্গ ধরে ক্যাব সভাপতি বলেন, “একদিকে আমরা দেখছি ৮০ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে, অনেকে বেকার হয়েছে। অন্যদিকে মোট আয় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাৎ বিত্তশালীরা আরও বিত্তবান হয়েছে। আয় বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা অর্থনীতির জন্য সুখকর কিছু নয়। ভোক্তার যদি চাহিদা না থাকে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গতি আসে না।”

ভোক্তার অধিকার রক্ষায় ভোক্তাদের সোচ্চার ও সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভোক্তাদের সচেতন ও সক্রিয় হওয়ার তাগিদ দেন।

শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের নেতা রাজেকুজ্জামান রতন একটি জরিপের তথ্য টেনে ওয়েবিনারে বলেন, “করোনাকালীন সময়ে মানুষের আয় কমে গেল। চাকরি হারাল ১ কোটি ৫৬ লাখের মত শ্রমজীবী মানুষ। যারা বেসরকারি খাতে চাকরিতে আছে, তারা তাদের আয় হারাল। এক জরিপে বলা হয়েছে, গড়ে তারা ২০ শতাংশ আয় হারিয়েছে।

“আবার সে সময়েই দেশে এক হাজার ৫০ জনের মত নতুন কোটিপতি তৈরি হয়েছে। তার মধ্যে ১১৪ জনের গড়ে ৫০ কোটি টাকারও বেশি টাকা বেড়েছে। অর্থাৎ অসমতা বেড়েই চলেছে।”

সব পরিস্থিতিতেই শ্রমজীবী মানুষ ‘লুণ্ঠনের’ শিকার হয়েছে মন্তব্য করে সেজন্য সচেতনতা বৃদ্ধি ও আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানান তিনি।

ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, “বাজেটে বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ বাড়ছে, কিন্তু ভোক্তার আয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হলে তার সুশিক্ষা এবং স্বাস্থ্য নিশ্চিত হতে হবে এবং সে দায়িত্বও রাষ্ট্রের।

“মহামারীর এই সময়েও গত বছরের তুলনায় বাজেটে বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ বেড়েছে। কিন্তু এই অর্থগুলো প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চশিক্ষার যে জায়গাগুলোতে ব্যবহার হচ্ছে, সেই খরচের মাধ্যমে সুশিক্ষা নিশ্চিত করা হয়নি। স্বাস্থ্যসেবায় সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা হয়নি। এই সম্পদ দক্ষ জনসম্পদ গড়ে তোলার নিশ্চয়তা দিচ্ছে না। ফলে জাতি এখন কঠিন চালেঞ্জের মুখে।”

বাজেটে বিভিন্ন খাতে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা মাঠ পর্যায়ে ভোক্তাদের অধিকার সুরক্ষায় ব্যয়ের ক্ষেত্রে যত রকমের অসঙ্গতি ও অসাঞ্জস্যতা দেখা দেবে, তা দূর করতে ভোক্তাদের তৎপর হওয়ার তাগিদ দেন শামসুল আলম।

ওয়েবিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এমএম আকাশ।

তিনি উন্নয়ন ও অসমতায় ভোক্তার অধিকার বিষয়ে বিভিন্ন অসঙ্গতির কথা তুলে ধরে ভোক্তাবান্ধব রাজনীতি, ভোক্তাবান্ধব সমাজ এবং ভোক্তাবান্ধব অর্থনীতির ওপর জোর দেন।

এক্ষেত্রে সংবাদ মাধ্যমের ভূমিকা তুলে ধরে আকাশ বলেন, “রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ মিডিয়া যদি ভোক্তাদের দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে জনমত গঠনে কাজ করে, তাহলে খুব দ্রুতই এটি গণআন্দোলনের রূপ নেবে এবং ক্যাবের দাবি আদায়ের পথ সহজ হবে।”

ভোক্তাকণ্ঠের সম্পাদক কাজী আবদুল হান্নান এবং ক্যাবের সংগঠক সৈয়দ মিজানুর রহমান রাজু যৌথভাবে ওয়েবিনার সঞ্চালনা করেন।

অন্যদের মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মলয় ভৌমিক এবং ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ওয়েবিনারে বক্তব্য দেন।