রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থাপনায় আরও সংস্কার চায় এফবিসিসিআই

বাজেটকে ব্যবসাবান্ধব ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে সফল করতে রাজস্ব নির্ধারণ ও আহরণ ব্যবস্থায় বেশ কিছু সংস্কার চেয়েছে দেশে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 June 2021, 02:57 PM
Updated : 5 June 2021, 02:58 PM

প্রস্তাবিত বাজেট অনেকাংশে ব্যবসাবান্ধব হলেও রাজস্ব আহরণ বাজেট বাস্তবায়নের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসেবেই থাকছে বলে মনে করেন সংগঠনটির নতুন সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এই বাজেটকে ব্যবসাবান্ধব হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন জসিম উদ্দিন, তখনও কথা বলেছিলেন বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ নিয়ে।

শনিবার মতিঝিলে ফেডারেশন ভবনে বাজেট নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, “বাংলাদেশে বাজেট বাস্তবায়নের চিরায়ত চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সুশাসন, মনিটরিং এবং ব্যবসা-বাণিজ্যবান্ধব রাজস্ব নির্ধারণ করে তা আদায় নিশ্চিত করা।

“এসব ক্ষেত্রে প্রশাসনিক দক্ষতা, নির্বাহী দক্ষতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও তদারকির মানোন্নয়ন জরুরি।“

রাজস্ব আদায় বাড়ানোর জন্য উপজেলা পর্যায়ে আয়কর ও ভ্যাট অফিস চালু করার পরামর্শ দেন তিনি।

পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের হয়রানির হাত থেকে বাঁচাতে এনবিআর এর পলিসি উইং ও বাস্তবায়ন উইং আলাদা করা এবং কালো টাকা সাদা করার সুযোগ সবসময় অব্যাহত না রাখার কথাও বলেন।

২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে নিজেদের পর্যবেক্ষণ শনিবার তুলে ধরে এফবিসিসিআই। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

এই ব্যবসায়ী নেতা মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সহায়তায় নতুন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা এবং চলমান প্যাকেজের সুফল সবার কাছে পৌঁছানোর আহ্বান জানান। 

এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী এনবিআরের মাধ্যমে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন, যা শেষ হতে চলা অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি।

কর্মকর্তাদের দক্ষতা, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার অভাব এবং সমন্বয়হীনতার কারণে রাজস্ব আদায় হুমকির মুখে পড়ে বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।

এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে অগ্রিম আয়কর (এআইটি) বাড়িয়ে দেওয়ার কারণে ব্যবসার খরচ বাড়বে এবং ব্যবসায়ীদের হয়রানি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হবে বলেও সতর্ক করেন তিনি।

“অগ্রিম ৫ শতাংশ আয়কর ব্যবসায়িক খরচ বাড়িয়ে দেওয়ার কারণে তা প্রত্যাহার করার আবেদন ছিল। কিন্তু তা না করে উল্টো সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ করা হয়েছে।

“আবার কর কমিশনারদের একটা ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে খাতভিত্তিক এআইটি বন্টনের জন্য। আমি মনে করি এটা অত্যন্ত বেআইনি। এটা ব্যবসার খরচ বাড়িয়ে দেয়। আমরা আবার এটা শতভাগ মওকুফ করার দাবি জানাচ্ছি,” বলেন এফবিসিসিআই সভাপতি।

তিনি আরো বলেন, একইভাবে আমদানি পর্যায়ে ভ্যাটের আগাম কর ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। এটাও সম্পূর্ণ মওকুফ করা প্রয়োজন।

আমদানি শুল্ক, মুসক ও আয়কর নিয়ে এফবিসিসিআইয়ের মধ্যস্ততায় খাতওয়ারি বাণিজ্য সংগঠনগুলোর পরামর্শ নিতে এনবিআরকে আহ্বান জানান তিনি।

এনবিআরের মূসক আদায় প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “কোনো একটি মার্কেটে ১০০টি দোকান থাকলে সেখানে ১০টি দোকানে মেশিন বসিয়ে বাকিগুলো ফাঁকা রেখেছে। অথচ এই মেশিনগুলো কিনে সবার হাতে তার উপস্থিতি নিশ্চিত করা খুব বেশি টাকার ব্যাপার নয়।

“সরকার এক টাকা খরচ করে একশ টাকা আয় করবে, তবুও কাজটি করছে না। কেন করছে না আপনারাও সেটা বোঝেন।“

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, “সরকার রাজস্ব বৃদ্ধি এবং ট্যাক্স জিডিপির অনুপাত বৃদ্ধি করার জন্য উপজেলা পর্যায়ে ভ্যাট অফিস ও আয়কর অফিস স্থাপন করতে পারে। এতে করে করজালের পরিধি আরও বৃদ্ধি পাবে। সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন কাজে ট্যাক্স ডকুমেন্ট বাধ্যতামূলক করতে পারে।“

কালো টাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সারাজীবন কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া উচিত নয়; এটা একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দেওয়া যেতে পারে। যেহেতু বাজেটে এই নিয়ে কিছু বলা হয়নি, তাই বেশি মন্তব্য করারও প্রয়োজন নেই।“

সংবাদ সম্মেলনে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন করে আরও একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা এবং বর্তমানে চলমান প্যাকেজের সুফল সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার দাবি জানান জসিম উদ্দিন।

তিনি বলেন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ দেয়া হয়েছিল, যেটির ৩০ শতাংশ এখনও বিতরণ হয়নি। কেন হয়নি এ নিয়ে আমরা ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বসব।

প্রস্তাবিত বাজেটের অধিকাংশ দিক ব্যবসাবান্ধব হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, সরকারি-বেসরকারি খাত এক সঙ্গে কাজ করলেই কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, রপ্তানি বাড়বে। এই বাজেটে দেশীয় শিল্পের জন্য অনেক সুবিধা দেওয়া হয়েছে, সেজন্য অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।

সংবাদ সম্মেলনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ, বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের আয়ের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ আয়কর প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি নিহাদ কবির, কা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমানসহ অন্যান্য ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।