চাহিদা অনুযায়ী প্রণোদনা প্যাকেজ চলবে: অর্থ সচিব

করোনাভাইরাস মহামারীর ধাক্কা সামলাতে সরকারের ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ চাহিদা অনুযায়ী বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 June 2021, 01:59 PM
Updated : 4 June 2021, 01:59 PM

শুক্রবার অর্থমন্ত্রীর বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজ পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই প্যাকেজ চলবে। এ বছর, আগামী বছরও চলবে। যদি প্রয়োজন হয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, উনি আরও প্রণোদনা প্যাকেজ নিয়ে আসবেন।”

গতবছর সরকারের ঘোষিত ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজে বরাদ্দ ধরা হয়েছিল এক লাখ ২৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৬টি প্যাকেজের ৪০ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা সরাসরি বাজেট থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে বাস্তবায়ন হয়েছে এর ৭০ শতাংশের কাছাকাছি।

২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজের মধ্যে ছয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক বাস্তবায়ন করছে বলে উল্লেখ করে আব্দুর রউফ বলেন, “এখানে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা। যা পুরো প্যাকেজের ৭০ শতাংশ। অবশিষ্ট ৩০ শতাংশের ৩৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হচ্ছে।”

বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করছে, তার মুনাফা ও ভর্তুকি বাবদ বছরে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা বাজেট থেকে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

“সুতরাং বাংলাদেশ ব্যাংক করছে, এটা পুরোপুরি ব্যাংকিং সেক্টরে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, তা নয়। সরকারও ইনটারেস্ট-সাবসিডিয়ারিতে বার্ডেন শেয়ার করছে।”

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, “আমরা সাধারণত দেখি, অনেকেই বলেন, প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর ক্ষেত্রে শুধুমাত্র বিত্তবানদের বা বড় ব্যবসায়ীদের ফেভার করা হচ্ছে। এটা কিন্তু একেবারেই সঠিক নয়।”

সবচেয়ে বড় ৪০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ছিল শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের (বড় উদ্যোক্তাদের) ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল জোগানের জন্য।

“ক্ষতিগ্রস্ত বৃহৎ শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের ৪০ হাজার কোটি টাকার ৮২ শতাংশ ব্যবহৃত হয়েছে, যা ৩২ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা,” বলেন গভর্নর।

শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের ৩ হাজার ২৫৭ জন সুবিধাভোগী এই প্যাকেজের আওতাধীন রয়েছে।

ফজলে কবির জানান, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প এবং মাঝারি শিল্পে ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের ৭৩ দশমিক ৭ শতাংশ বিতরণ হয়েছে।

“অর্থাৎ ২০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ১৪ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা বিতরণ হয়ে গেছে। আরও এক হাজার কোটি টাকার উপরে অনুমোদন হয়ে আছে। এর মধ্যে সুবিধাভোগীর সংখ্যা ছিল ৯৬ হাজার ১৭১ জন। একইভাবে কৃষিখাতের ৫ হাজার কোটি টাকার মধ্যে এ পর‌্যন্ত ৩ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা অর্থাৎ৭৯ দশমিক ৯ শতাংশ ব্যবহৃত হয়েছে। সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৭২ হাজার ৩৯০ জন।”

নিম্ন আয়ের পেশাজীবীদের জন্য ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থার মাধ্যমে ৩ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজের ৬১ দশমিক ৮ শতাংশ বিতরণ হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

“এ প্যাকেজের এক হাজার ৮৩২ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এতে সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৩ লাখ ২৮ হাজার ৫৪৭ জন। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত এক লাখ ২৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকার প্যাকেজের প্রায় ৮০ শতাংশ ব্যাংকিং খাত সাপের্ট দিয়ে যাচ্ছে।”

বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে প্রায় ৭৬ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকিং খাত থেকে দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

“আমার মনে হয়, আমাদের অর্থমন্ত্রী সময়োপোযোগী একটি বাজেট ঘোষণা করেছেন গতকাল। আমাদের মুদ্রানীতিও আমরা বাজেট অনুসারেই করব। সরকারের জিডিপির লক্ষমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ রাখা প্রয়োজন। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি।”