৪০টি অক্সিজেন জেনারেটর, চীনা টিকা কেনার প্রস্তাবে সায়

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে জরুরি বিবেচনায় ৪০টি অক্সিজেন জেনারেটর এবং চীন থেকে সিনোফার্মের উৎপাদিত করোনাভাইরাসের টিকা কেনার প্রস্তাবে সায় দিয়েছে সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 May 2021, 01:13 PM
Updated : 19 May 2021, 02:50 PM

বুধবার অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয় বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শাহিদা আক্তার জানান।

অক্সিজেন জেনারেটর এবং চীনা টিকা- দুটোই কেনা হবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে। সরকারের কেন্দ্রীয় ঔষধাগার এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব দুটি মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে তোলে।

সরকারের ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর ইতোমধ্যে সিনোফার্মের তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। চীনের প্রথম টিকা হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থারও সবুজ সংকেত পেয়েছে এই টিকা।

শাহিদা আক্তার জানান, চীন থেকে কত দামে কী পরিমাণ ভ্যাকসিন কেনা হবে তা বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়নি। কতদিনের মধ্যে এই কেনাকাটা সম্পন্ন হবে তাও আলোচনা হয়নি।

সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ৪০টি অক্সিজেন জেনারেটর কিনতে কত খরচ হবে, কোন দেশ থেকে সেগুলো আসবে, সে বিষয়েও কোনো তথ্য দেননি তিনি। 

দেশের হাসপাতালে স্বাভাবিক সময়ে ১০০-১২০ টনের মতো অক্সিজেনের চাহিদা থাকে। ওই চাহিদা পূরণ হয় দেশের উৎপাদনেই।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত অনেকের স্বাসকষ্ট দেখা দেয় বলে অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। সে কারণে মহামারীতে দেশে অক্সিজেনের চাহিদাও বেড়েছে। 

চলতি বছর সংক্রমণের দ্বিতীয় ধাক্কায় এপ্রিলের শুরুতে অক্সিজেনের দৈনিক চাহিদা দাঁড়িয়েছিল সর্বোচ্চ ১৫০ থেকে ১৬০ টনে। তবে তা সঙ্কটের পর্যায়ে যায়নি।

কিন্তু পাশের দেশ ভারতে অক্সিজেনের ব্যাপক সঙ্কটে বহু মানুষের মৃত্যুর পর তারা রপ্তানি রেখেছে। বাংলাদেশের মোট চাহিদার ২০ শতাংশ অক্সিজেন ভারত থেকেই আমদানি করা হত।

এ অবস্থায় আবারও সংক্রমণ ও রোগী বেড়ে গেলে বড় ধরনের সঙ্কট এড়াতে অক্সিজেনের মজুদ ও উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে আসছিলেন বিশেষজ্ঞরা।

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি তিন কোটি ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা কিনে এ বছর ফেব্রুয়ারিতে গণ টিকাদান শুরু করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু আগে নিজেদের চাহিদা মেটাতে ভারত টিকা রপ্তানিও মার্চ থেকে বন্ধ রেখেছে।

ফলে বেকায়দায় পড়ে বাংলাদেশকে অন্য উৎস থেকে টিকা পাওয়ার চেষ্টা করতে হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে রাশিয়ার স্পুৎনিক-ভি এবং চীনের সিনোফার্মের টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছৈ সরকার।

চীনের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে দেওয়া সিনোফার্মের তৈরি পাঁচ লাখ ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা ইতোমধ্যে বাংলাদেশে পৌঁছেছে। তবে কেনা টিকা পেতে বাংলাদেশকে এ বছরের দ্বিতিয়ার্ধ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে চীন রাষ্ট্রদূত ইতোমধ্যে জানিয়েছেন।  

সরসারি ক্রয়ে দুর্নীতি ও অতিমূল্যায়নের আশঙ্কা থাকার বিষয়টি তুলে ধরে একজন সাংবাদিক মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করেন- দেশে দীর্ঘদিন ধরে মহামারী চললেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কেন সময়মত কেনাকাটা না করে পরে সরাসারি কেনার পথ বেছে নেয়?

এর উত্তরে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, “আমাদের কাছে নীতিগত অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ছিল যথা সময়ে যাথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। মহামারীর এই পরিস্থিতি সারা বিশ্বেই এক নতুন অভিজ্ঞতা। সেই বিবেচনায় আমরা নীতিগত অনুমোদন দিয়েছি।”

অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এদিন শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বিসিআইসিকে কাতারের মুনতাজাত-কাতার কোম্পানির কাছ থেকে ৫ লাখ টন, সৌদি আরবের সাবিক এর কাছ থেকে ৫ লাখ টন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফার্টিগ্লোবের কাছ থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার টন ইউরিয়া সার আমদানির চুক্তি স্বাক্ষরের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।

ক্রয় কমিটিতে ৯ প্রস্তাব অনুমোদন

সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে ১০টি প্রস্তাব উত্থাপনের পর ৯টি প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে এদিন। 

সুইজারল্যান্ডের এওটি ট্রেডিংয়ের কাছ থেকে ৩৪০ কোটি ৬২ লাখ ৪৫ হাজার ৩০১ টাকায় ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি কেনার একটি প্রস্তাব রয়েছে এর মধ্যে। পেট্রোবাংলার ওই প্রস্তাবে প্রতি ইউনিট এলএনজির দাম পড়ছে ১০ দশমিক ১৯৯৭ ডলার।

চট্টগ্রামের রাউজানে পুরোনো উৎপাদন ইউনিট স্থানান্তর করে সেখানে ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের একটি প্রস্তাবও অনুমোদন পেয়েছে।

এক হাজার ৭৯৬ কোটি ৭২ লাখ ৫ হাজার ১৫০ টাকায়  এই প্রকল্পের কাজটি পেয়েছে চীনের সেপকো-থ্রি ইলেক্ট্রনিক পাওয়ার কনস্ট্রাকশনস।

নতুন মেশিন স্থাপনের ফলে এখন থেকে উৎপাদিত প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুতের দাম ১ টাকা ৩৮ পয়সা পড়বে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শাহিদা আক্তার।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বাংলাদেশ পুলিশের জন্য সার্ভেইলেন্স সিস্টেম চালু করতে ‘হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি’ প্রকল্পের আওতায় ১২৯ কোটি ২২ লাখ ৬০ হাজার ৭৬৬ টাকার একটি ক্রয় প্রস্তাবও অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা কমিটি।

ওই টাকায় সিসিটিভি মনিটরিং সিস্টেম, অবকাঠামো নির্মাণ এবং অপারেশন ও মেইন্টেনেন্সের কাজ করে দেবে স্মার্ট টেকনলজিস বিডি লিমিটেড ও ডিজিকন টেকনলজিস লিমিটেড।

বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিপিটিইউ) ডিজিটাল ইমপ্লিমেন্টেশন মনিটরিং অ্যান্ড পাবলিক প্রকিউরমেন্ট প্রকল্পের পরামর্শকের কাজ পেয়েছে  দোহাটেক নিউ মিডিয়া, যুক্তরাষ্ট্রের ডট গভ সলিউশন ও বেক্সিমকো। এ কাজের জন্য তিন কোম্পানি মিলে ৪৪ কোটি ২৪ লাখ ৭১ হাজার ১৭২ টাকা পাবে।

বাংলাদেশের সব খাদ্য গুদামে ডেটা সেন্টার স্থাপন, ইন্টারনেট সংযোগ, মনিটরিং সিস্টেম স্থাপন এবং সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি সরবরাহের কাজ পেয়েছে বেক্সিমকো কম্পিউটার লিমিটেড, বেক্সিমকো ও ভারতের টেক মাহিন্দ্রার জয়েন্ট ভেঞ্চার। এ প্রকল্পে ব্যয় হবে ২৬১ কোটি ৭০ লাখ ৭৬ হাজার ৬০৯ টাকা।

বরিশালে চাল সংরক্ষণের জন্য একটি স্টিলের সাইলো স্থাপন করার অনুমোদন পেয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর। ৩৩০ কোটি ৮৬ লাখ ১৫ হাজার ৮২২ টাকায় কাজটি করে দেবে বাংলাদেশের কনফিডেন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ও যুক্তরাষ্ট্রের জিএসআই গ্রুপ।

বেলজিয়ামের ড্রেজিং কোম্পানি জান ডে নুলকে (জেডিএন) ৫ হাজার ৬২৯ কোটি ১৮ লাখ টাকায় পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ও মেনটেইনেন্স ড্রেজিংয়ের কাজ দিয়েছে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ।

কর্ণফুলি শিপ বিল্ডার্সের কাছ থেকে চারটি কোস্টাল প্যাসেঞ্জার ভ্যাসেল মোট ২৩০ কোটি ৯৪ লাখ ৯৫ হাজার ৮৫০ টাকায় কিনে নিচ্ছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন।

এ দুটো প্রস্তাবও ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে অনুমোদন পেয়েছে।