তামাকপণ্যের দাম ক্রয়ক্ষমতার বাইরে নেওয়ার পরামর্শ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত তামাকমুক্ত বাংলাদেশের লক্ষ্যে পৌঁছাতে তামাকপণ্যে সুনির্দিষ্ট করারোপের মাধ্যমে দাম বাড়িয়ে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে নিয়ে পাওয়ার পরামর্শ এসেছে গোলটেবিল বৈঠক থেকে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 May 2021, 02:18 PM
Updated : 10 May 2021, 02:25 PM

সোমবার ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে তামাক কর ও মূল্য পদক্ষেপ: বাস্তবতা ও করণীয়’ শীর্ষক এই ভার্চুয়াল বৈঠকে সংসদ সদস্য, অর্থনীতিবিদ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন।

আলোচনায় অংশ নিয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভেবেচিন্তেই ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। যারা এই ঘোষণার অন্তরায় হিসেবে কাজ করছেন তাদের চিহ্নিত করতে হবে।”

প্রতিবছরই সরকারের কাছে তামাকের কর বাড়ানোর দাবি জানানো হয় কিন্তু বাজেটে তার প্রতিফলন দেখা যায়না উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তামাক কোম্পানিতে সরকারের কোনো শেয়ার থাকলে দাবি বাস্তবায়ন কষ্টকর।”

জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ তামাকপণ্যের দাম বাড়ানো হলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীই সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে বলে মত প্রকাশ করেন।

“তামাকের দাম বাড়ানো হলে গরিব মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড যে বক্তব্য দিয়েছে তা খুবই হতাশাজনক,” বলেন এই অর্থনীতিবিদ।

তিনি এবছরের তামাক-কর বিষয়ক বাজেট প্রস্তাব সমর্থন করে তামাকের রপ্তানি শুল্ক পুনর্বহালেরও দাবি জানান।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, “কর বৃদ্ধি করে সিগারেটের সহজলভ্যতা যদি কমানো যায় তাহলে বিশেষ করে যারা দরিদ্র মানুষ তারা এই অর্থ পুষ্টিকর খাবারসহ অন্যান্য প্রয়োজনে ব্যয় করতে পারবে।”

তিনি তামাক নিয়ন্ত্রণে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণের উপরও গুরুত্বারোপ করেন।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার চেয়ারম্যান আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে বৈঠকে বক্তব্য রাখেন এনবিআরের সাবেক প্রাক্তন চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন আহমদ, সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল, দৈনিক প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) রিসার্চ ডিরেক্টর মাহফুজ কবীর এবং ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে), বাংলাদেশের লিড পলিসি অ্যাডভাইজর মো. মোস্তাফিজুর রহমান।

তামাকবিরোধী সংগঠন প্রগতির জন্য জ্ঞান- প্রজ্ঞা এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স-  আত্মা’র যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত বৈঠকে প্রজ্ঞার পক্ষ থেকে তামাক কর বিষয়ক ‘বাজেট প্রস্তাব ২০২১-২২’ তুলে ধরা হয়।

এতে বলা হয়, এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে প্রায় ১১ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপান ছেড়ে দিতে উৎসাহিত হবে, তিন লাখ ৯০ হাজার ধূমপায়ী এবং চার লাখ তরুণের অকাল মৃত্যু রোধ হবে এবং সিগারেট থেকে সম্পূরক শুল্ক, স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ এবং ভ্যাট বাবদ অতিরিক্ত তিন হাজার ৪০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হবে।

প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে-

>> সকল সিগারেট ব্রান্ডে অভিন্ন করভারসহ (সম্পূরক শুল্ক চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৬৫%) মূল্যস্তরভিত্তিক সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ (সম্পূরক) শুল্ক আরোপ করা

>> নিম্ন স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৩২.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা;

>> মধ্যম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৭০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা;

>> উচ্চ স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১১০ টাকা নির্ধারণ করে ৭১.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক করা; এবং

>> প্রিমিয়াম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৪০ টাকা নির্ধারণ করে ৯১ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।

>>মধ্যমেয়াদে (২০২১-২২ থেকে ২০২৫-২৬) সিগারেটের ব্রান্ডসমূহের মধ্যে দাম ও করহারের ব্যবধান কমিয়ে মূল্যস্তরের সংখ্যা ৪টি থেকে ২টিতে নামিয়ে আনা।

>> সকল তামাকপণ্যের খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল রাখা উল্লেখযোগ্য।