রেন্টাল-কুইক রেন্টালের ইতি ‘২০২৪ সালের মধ্যে’

তিন বছরের মধ্যে অবসরে যাচ্ছে দেশের ভাড়াভিত্তিক সব বিদ্যুৎ কেন্দ্র।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 March 2021, 03:14 PM
Updated : 11 March 2021, 03:14 PM

রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নামে পরিচিত এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে উপস্থাপিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

সংসদীয় কমিটির সভাপতি শহীদুজ্জামান সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন বড় বড় সব বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে আছে। সামনে আরও উৎপাদনে আসছে।

“এখন আর ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্রের দরকার নেই। আমরা প্রয়োজন অনুসারে সেগুলো বন্ধ করে দিতে বলেছি। মন্ত্রণালয়ও তাদের পরিকল্পনার কথা আমাদের জানিয়েছে।”

সংসদীয় কমিটিকে দেওয়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারের মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালু হলে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো মেয়াদপূর্তিতে অবসরে যাবে।

বর্তমানে এক হাজার ১০৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৬টি ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু আছে জানিয়ে এতে বলা হয়, এগুলো ২০২৪ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে অবসরে যাবে।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর বিদ্যুৎ ঘাটতি মোকাবেলায় অতি দ্রুত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের তাৎক্ষণিক পরিকল্পনায় তিন বছর, পাঁচ বছর ও ১৬ বছর মেয়াদী ভাড়াভিত্তিক (রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল) বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন শুরু করে।

এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন দ্রুত বেড়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতিশীল হয় বলে সরকারের দাবি। তবে এসব কেন্দ্র থেকে উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কিনতে সরকারকে অনেক টাকায় ভর্তুকি দিতে হওয়ায় একে জনগণের ‘পকেট টাকা’ বলে সমালোচনাও উঠেছিল।

মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা না গেলে খাতভিত্তিক উৎপাদন এবং দেশজ উৎপাদন ও রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেত। এতে সামষ্টিক অর্থনীতির অন্যান্য সূচক এবং কর্মসংস্থান ও দারিদ্র দূরীকরণ সংক্রান্ত খাতভিত্তিক সূচকে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারত।

সংসদীয় কমিটি ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মেয়াদ আর না বাড়িয়ে দ্রুততম সময়ে সেগুলোকে অবসরে পাঠানোর সুপারিশ করে।

মন্ত্রণালয়ের দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার আওতায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো যথাসময়ে বাস্তবায়িত না হওয়ায় ভাড়াভিত্তিক কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো হয়।

এ পর্যন্ত ৬টি রেন্টাল এবং ৬টি কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয় বলে জানানো হয়েছে।

এরমধ্যে ২৮০ মেগাওয়াট ক্ষমতার চারটি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং ১৫৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ফার্নেস অয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং ৩৯৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৬টি ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। সব মিলে মেয়াদোত্তীর্ণ ১২টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মোট উৎপাদন ক্ষমতা ৮৩৩ মেগাওয়াট।

প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনটি রেন্টাল ও দুটি কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেও তা বাড়ানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। গ্যাসভিত্তিক এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ২৪৫ মেগাওয়াট।

বর্তমানে ১৬টি কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এর মধ্যে গ্যাসভিত্তিক সাতটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৩৫২ মেগাওয়াট এবং ফার্নেস অয়েলভিত্তিক নয়টি উৎপাদন ক্ষমতা ৭৫৭ মেগাওয়াট।

কমিটি থেকে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হয়। একই বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

শহীদুজ্জামান সরকারের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য আবু জাহির, এস এম জগলুল হায়দার, আছলাম হোসেন সওদাগর ও নার্গিস রহমান অংশ নেন।