রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, “অর্থনৈতিক সূচক একই সময়ে জোরালো সমর্থন পেয়েছে মানবিক সূচকের। মানব উন্নয়ন সূচকেও আমাদের অগ্রগতি বিস্ময়কর।
“যদিও আমরা এখনও মাঝ পর্যায়ে আছি। এক্ষেত্রে আমরা এখনও শ্রীলঙ্কা থেকে পিছিয়ে। এই একটা জায়গা যেখানে আমাদের ভবিষ্যতে অধিক মনোযোগ দেওয়া দরকার।”
ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ’ঐতিহাসিক সাতই মার্চ এবং বাংলাদেশের উন্নয়নের অভিযাত্রা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে মূল বক্তব্য দেন মুহিত।
তিনি বলেন, “ক্ষুধা ও অপুষ্টির শিকার ওই শিশুকে জাউ খাওয়াতে চাইলেও সে খেতে পারেনি। আমার কোলেই শিশুটির মারা গিয়েছিল।”
উন্নয়নের উদাহরণ টানতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী হিসাবে টানা ১০ বছর দায়িত্ব পালনের শুরুর বছরের পাঁচ গুণ বাজেট বিদায়ের বছরে ঘোষণার কথা বলেন তিনি।
মুহিত বলেন, “মানুষের জন্য কাজ করার বড় নির্দেশক হিসাবে কাজ করে বাজেট। যেটাকে আমরা ওই সময়েই ৫০০ শতাংশ বাড়াতে পেরেছিলাম।”
স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকে অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি সার ও লোহা প্রভৃতি শিল্প বিকাশের কথা তুলে ধরেন তিনি।
তিনি বলেন, “আমরা খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে পেরেছি। দারিদ্রের সীমা ৭০ ভাগ থেকে ২২ শতাংশে আমরা নামাতে পেরেছি। অতি দরিদ্রের সংখ্যাও নেমে এসেছে মাত্র ১০ শতাংশে।”
রপ্তানি খাত বিকাশের উদাহরণ টেনে তৈরি পোশাকের রপ্তানিতে বাংলাদেশ বিশ্বে এক নম্বর হয়ে ওঠার কথা তুলে ধরেন সাবেক এই অর্থমন্ত্রী।
অন্যান্য রপ্তানি খাতেও বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “কেবল তৈরি পোশাক নয়, খুবই অগ্রগামী খাত ওষুধ এখন আমাদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি পণ্য।
”পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে আমরা ওষুধ রপ্তানি করি। এমনকি সবচেয়ে কঠিন ওষুধ প্রশাসনের দেশ যুক্তরাষ্ট্রেও আমরা রপ্তানির অনুমতি পেয়েছি।”
আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগে উন্মুক্ত সীমান্ত নীতি নেওয়ার কারণে বিপুল সম্ভাবনার দ্বার খুলে গেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মুহিত বলেন, “যদিও বিএনপিসহ অন্যান্য দল শুরুতে বিরোধিতা করেছিল, পরে তারা মেনে নেয়। উন্মুক্ত সীমান্ত হলে আমাদের জন্য বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ এর মাধ্যমে আমরা আশপাশের ছয়টি দেশে রপ্তানির সুযোগ তৈরি করতে পারি।”
নদীপথগুলো সচল করার মাধ্যমে বাণিজ্যের সুযোগ বিপুল পরিমাণে বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন মুহিত।
তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার উদ্যোগের মাধ্যমে সরকার আধুনিক প্রযুক্তিকে অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে কাজে লাগিয়েছে।
অনুষ্ঠানে অর্থনৈতিক উন্নতি ও বিনিয়োগের সুযোগ বিদেশের মাটিতে তুলে ধরতে বাংলাদেশ মিশনগুলোর আহ্বান জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
তিনি বলেন, “আমাদের বিনিয়োগের যে সহায়ক পরিবেশ আছে, তার প্রচার অনেক সময় ঠিকমত হয় না। আপনাদের দায়িত্ব হবে বিদেশের বিভিন্ন সংস্থা, জনগণ ও বাংলাদেশি বংশধরদের সঙ্গে মিলে জানান দেওয়া— বাংলাদেশ হচ্ছে সম্ভাবনার দেশ।”
মুহিতের ছোট ভাই মোমেন বলেন, ইন্টারনেটে বাংলাদেশের শ্রমিক বলতে একজন নারী ইট ভাঙছে এবং তার পাশে শিশু। কিন্তু এই অবস্থা তো এখন আর নেই।
“বিশ্বে পরিবেশবান্ধব তৈরি পোশাক কারখানার মধ্যে সাতটি বাংলাদেশের। কিন্তু দুঃখ লাগে সেই ছবি আমি দেখি না। কৃষি যখন দেখায়, তখন দেখায় লাঙল দিয়ে কৃষক হাল চাষ করছে। অথচ আমরা এখন এই কাজকে যান্ত্রিক করেছি।”
অন্যদের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।