রাষ্ট্রায়ত্ত চিনি কলে ৫ বছরে ৪ হাজার কোটি টাকা লোকসান

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) গত পাঁচ বছরে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা লোকসান গুণেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Feb 2021, 01:22 PM
Updated : 25 Feb 2021, 01:22 PM

এ সময় প্রতিষ্ঠানটির আয় হয়েছে ৩ হাজার ১৪৭ কোটি ২২ লাখ টাকা। আর ব্যয় হয়েছে ৭ হাজার ৮৬ কোটি ২ লাখ টাকা। লোকসান দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৯৩৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা।

বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত শিল্প মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠক উপস্থাপিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ সুগার মিলস্ করপোরেশনকে বাংলাদেশ সুগার অ্যান্ড ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনে পরিণত করা হয়। চিনি উৎপাদন বাড়ানো এবং উপজাতভিত্তিক পণ্য উৎপাদন এই করপোরেশনের লক্ষ্য। এই করপোরেশনের অধীনে ১৫টি চিনিকল পরিচালিত হয়।

বিএসএফআইসি ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ৫২৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৬৩৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৮৩৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে এক হাজার ৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ৯৩৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছে।

প্রতিবেদনে বিএসএফআইসির লোকসানের আটটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হলো- চিনির উৎপাদন খরচের চেয়ে বিক্রয় মূল্য কম হওয়া, বিশ্বব্যাপী চিনির দাম কমে যাওয়া, পুঞ্জীভুত ঋণ ও সুদের পরিমাণ অনেক বেশি হওয়া, অধিক চিনি সমৃদ্ধ পোকা ও রোগবালাই প্রতিরোধ সক্ষম আখের জাত উদ্ভাবন না হওয়া, কারখানাগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়া, বেসরকারি খাতে আমদানিকৃত ‘র’ সুগার থেকে রিফাইন্ড সুগার উৎপাদন করে কম মূল্যে বাজারজাত হওয়া, ব্যাংক ঋণের সুদ বৃদ্ধির পাশাপাশি উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া এবং চিনি সংগ্রহের হার কমে যাওয়া।

প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের বর্তমানে দায় দেনার পরিমাণ আট হাজার ৮৪৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা। দায়-দেনার মধ্যে ব্যাংক ঋণ সাত হাজার ১৯৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা, ডিএসএল ও পাকিস্তানি ঋণ ৯৬৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা, আখের দাম ৩৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা, বেতন বাকি ৯২ কোটি ৩ লাখ টাকা, প্রভিডেন্ট ফান্ড খাতে ১০৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা, গ্র্যাচুইটি ২৫৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা, সরকরাহকারীদের পাওনা ১৩৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকা, আয়কর বাবদ ১১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, ভ্যাট ৯ কোটি টাকা, ডিলার জামানত ৩৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।

চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের বর্তমানে মোট পদ সংখ্যা ১৭ হাজার ২৬৩টি। এর মধ্যে ৬ হাজার ৩১টি শূন্য বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।

সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন সব অধিদপ্তরের কেনাকাটায় মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন গ্রহণ এবং সব কারখানায় ইউরোপ, আমেরিকা ও জাপান থেকে যন্ত্রপাতি কেনার পাশাপাশি একই কোম্পানির অতিরিক্ত যন্ত্রাংশ (স্পেয়ার পার্স) কেনার জন্য সুপারিশ করা হয়।

এছাড়া, বৈঠকে বন্ধ চিনিকলগুলো চালু করতে পদক্ষেপ গ্রহণ, চিনিশিল্পে লোকসানের মূল কারণ উদ্ঘাটন, অপ্রয়োজনীয় জনবল ছাঁটাই এবং অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ন্যায় ট্রেড ইউনিয়নের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকেও যথানিয়মে কাজে উদ্বুদ্ধ করার সুপারিশ করা হয়।

কমিটির সভাপতি আমির হোসেন আমুর সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, এ, কে এম ফজলুল হক, আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন, মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান, কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ এবং শফিউল ইসলাম অংশ নেন।