কৃষকদের কৃষি ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে জামানতের পরিবর্তে ‘কৃষি কার্ড’ বা স্থানীয় পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের ‘প্রত্যয়নপত্র’ আমলে নেওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
Published : 25 Feb 2021, 12:42 AM
কৃষকদের প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ সহায়তা বৃদ্ধির বিষয়ে বুধবার কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে একটি সভা হয়ে। এতে সভাপতিত্ব করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, কৃষি ঋণ বিতরণের পরিসংখ্যানকে ঢেলে সাজিয়ে এর সঙ্গে শস্য, কৃষক শ্রেণি ও অঞ্চলভিত্তিক এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে কৃষিঋণ বিতরণের পরিসংখ্যান প্রণয়নের উপরও গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
সভায় কৃষকদের প্রাতিষ্ঠানিক কৃষিঋণ সহায়তা কীভাবে বৃদ্ধি করা যায়, সে বিষয়ে সভায় আলোচনা হয়। বিশেষ করে প্রান্তিক কৃষকের কাছে ঋণসুবিধা কীভাব আরও বেশি করে পৌঁছে দেওয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়।
এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) কী ভূমিকা পালন করতে পারে, তা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়।
সভায় কৃষি সচিব মেসবাহুল ইসলাম ছাড়াও কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. নাসিরুজ্জামান, বিএডিসির চেয়ারম্যান (সম্প্রতি সচিব হিসাবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়) সায়েদুল ইসলাম, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) হাসানুজ্জামান কল্লোল, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ, কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, রাজশাহী উন্নয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষিঋণ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনায় প্রকৃত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের ঋণপ্রাপ্তি সহজলভ্য করতে ডিএই, বিএডিসি ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বিভিন্ন কর্মসূচি/প্রকল্পের আওতায় যেসব ‘কৃষক গ্রুপ’ রয়েছে তাদের সাথে ব্যাংকের সংযোগ বৃদ্ধি, মাঠ দিবস উদযাপন ও কৃষক প্রশিক্ষণের মডিউলে ‘কৃষিঋণ’ বিষয়কে অন্তর্ভুক্তকরণ এবং স্থানীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণে আমন্ত্রণ, দেশে কৃষিঋণের প্রকৃত চাহিদা নিরূপণে সমীক্ষা পরিচালনার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
২০০১ সালে মোট ঋণের ৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ ছিল কৃষিঋণ, যা কমে ২০২০-২১ অর্থবছরে ২.৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
সভায় আরও জানানো হয়, কৃষকরা কতটুকু প্রাতিষ্ঠানিক কৃষিঋণ পান সে বিষয়েও ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়।
বিবিএসের হিসাব মতে, ২৬ শতাংশ কৃষক প্রাতিষ্ঠানিক কৃষি ঋণ সুবিধা পান।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক খাদ্যনীতি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ইপ্রি) ২০১৫ সালের হিসেব অনুযায়ী মাত্র ১২ দশমিক ৫ শতাংশ কৃষক প্রাতিষ্ঠানিক কৃষিঋণ সুবিধা পান। এছাড়া আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ১৯ শতাংশ, এনজিও থেকে ৩৬ শতাংশ ও মানি লেন্ডারের কাছ থেকে ১২ শতাংশ ঋণ পেয়ে থাকেন।
কৃষি ব্যাংকগুলো যেসব কৃষকদের ঋণ দেয়, তার মধ্যে মাত্র ৫ দশমিক ২০ শতাংশ রয়েছেন প্রান্তিক কৃষক ও ১৫ শতাংশ বৃহৎ কৃষক।
কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলমান অর্থবছরে জানুয়ারি, ২১ পর্যন্ত মোট কৃষিঋণ ২৬ হাজার ২৯২ কোটি টাকার মধ্যে ১৪ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্রণোদনার মধ্যে এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৫১৪ কোটি টাকা বিতরণ হয়েছে।
সভায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মেসবাহুল ইসলাম বলেন, “কৃষকের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ সুবিধা সহজ করতে পারলে তাদের চাহিদা পূরণ হবে। ফলে কৃষির পুরো সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি করা যাবে। এতে দেশ উপকৃত হবে।”
কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. নাসিরুজ্জামান বলেন, “কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে সারা দেশে পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন কার্যক্রম চলছে, যেটি খুব ভালো উদ্যোগ।
“এই পুষ্টিবাগান স্থাপনে সরকারি সুবিধার বাইরের আগ্রহী কৃষকেরা যাদের কমপক্ষে ১ শতক জমি আছে তাদেরকে কৃষি ব্যাংক থেকে জামানত ছাড়াই ৫ হাজার টাকা করে ঋণ দেওয়া হবে।”
সভায় জানানো হয়, দেশে ক্রমশ কৃষি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০০১ সালে কৃষি ঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ২০ কোটি টাকা, যা বৃদ্ধি পেয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৬ হাজার ২৯২ কোটি টাকা হয়েছে। কিন্তু ব্যাংকগুলোর দেওয়া মোট ঋণের অনুপাতে কৃষি ঋণের পরিমাণ কমেছে।