২০২০-২১ অর্থবছরে ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির স্বাধীন পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে সোমবার সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, “যারা ঋণ খেলাপি তাদের প্রণোদনা দেয়া উচিত না। আমরা মনে করি। দুর্বল ব্যাংক এবং যেগুলোতে সুশাসনের ঘাটতি রয়েছে, সেসব ব্যাংকের এই ধরনের প্রণোদনা প্যাকেজে অংশগ্রহণের উচিত হবে না। তাহলে অর্থনীতি আরও চাপের মুখে পড়তে পারে।”
তিনি বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষভাগে মহামারীর বড় ধরনের ধাক্কার পর চলতি অর্থবছর শুরু হয়েছে একটি দুর্বল ভিত্তি নিয়ে।
“বিনিয়োগ পরিস্থিতির ক্ষেত্রে ব্যক্তি ও সরকারি বিনিয়োগ- দুটিই আগের অবস্থায় পৌঁছাতে পারিনি। আমাদের অর্থনৈতিক রিকভারিটা ইংরেজি ‘কে’ আকৃতির রিকভারি ইন্ডিকেট করে। এ অবস্থা থেকে টেকসই পুনরুদ্ধারের জন্য আরেক দফার প্রণোদনার দরকার হবে।”
তবে দ্বিতীয় দফায় প্রণোদনা দেওয়ার ক্ষেত্রে মাঝারি ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাতে প্রধান্য দেওয়ার সুপারিশ করেন সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো।
তিনি বলেন, দেশে করোনাভাইরাসের টিকাদান শুরু হয়ে গেছে, টেকসই অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে এটি একটি ইতিবাচক দিক।
“সেক্ষেত্রে কারা ঋণ পেলেন, খেলাপিরা কতটুকু ঋণ পেলেন, কারা কীভাবে এটা পরিশোধ করার চিন্তাভাবনা করছেন, সত্যিকারভাবে যাদের প্রয়োজন, তারা কতটুকু পেলেন- এই তথ্য জানা থাকলে প্রণোদনা দেওয়ার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়া আরও সহজ হত।”
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “যখন প্রণোদনা প্যাকেজ দেওয়া হয়, তখনই কিন্তু আমরা বলেছি প্রণোদনা প্যাকেজ কিন্তু খুবই ব্যাংকনির্ভর হয়েছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে সরাসরি ক্যাশ ট্রান্সফারের মাধ্যমে সহায়তা করা হয়েছে। ব্যাংকগুলো যেন এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আরও দুর্বল হয়ে না আসে, সেদিকে আমাদের খেয়াল করতে হবে।”
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ‘মিশ্র প্রবণতা’ থাকার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকারের ব্যয় কমে গেছে, রপ্তানি নেতিবাচক পর্যায়ে আছে, সরকারের বিনিয়োগও কমে গেছে। এ অবস্থায় অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য স্থানীয় চাহিদাকে চাঙ্গা করার ওপর জোর দিতে হবে।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাণিজ্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি।
২০১৯-২০ অর্থবছরের এই সময়ে দেশে ১৫ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্যের মজুদ থাকলেও এখন ৭ মেট্রিক টন বা তার কিছু বেশি রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “চাল আমদানির দরকার রয়েছে, কেননা চালের ঘাটতি রয়েছে অর্ধেকের মত।... এটা কিন্তু বাজারে নেতিবাচক বার্তা দেয়। এই সুযোগটা নেয় রাইস মিলাররা।”
বাজার স্থিতিশীল রাখতে ১০ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানি করতে হবে বলে মন দেন খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।