ধানের উন্নত জাত উদ্ভাবনে জোর কৃষিমন্ত্রীর

উৎপাদনশীলতা দ্বিগুণ করতে ধানের আরও উন্নত জাত উদ্ভাবনের জন্য কৃষি বিজ্ঞানী ও গবেষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Jan 2021, 03:16 PM
Updated : 14 Jan 2021, 03:16 PM

তিনি বলেছেন, “আমাদের জনসংখ্যা প্রতিবছর ২২-২৩ লাখ বৃদ্ধি পাচ্ছে; অথচ নানা কারণে চাষের জমি কমছে। এটাই ভবিষ্যতের খাদ্য নিরাপত্তায় মূল চ্যালেঞ্জ। সেজন্য, ২০৩০ সালের মধ্যে উৎপাদনশীলতা দ্বিগুণ করতে হলে আরও উন্নত জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হবে।”

বৃহস্পতিবার গাজীপুরে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) মিলনায়তনে আয়োজিত এক কর্মশালায় এ বিষয়ে কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী।

২০১৯-২০ বছরের গবেষণা পর্যালোচনা নিয়ে ব্রি এ কর্মশালার আয়োজন করে। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহ্সান রাসেল এবং কৃষিসচিব মেসবাহুল ইসলামও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

ব্রি উদ্ভাবিত শতাধিক জাতের ধানের প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী বলেন, এই জাতগুলো থেকে সেরাগুলো নিয়ে সকল সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, যাতে কৃষকদের মধ্যে সেগুলো জনপ্রিয় হয়, কৃষকের কাছে সহজে পৌছানো যায়। 

“একটি পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ জাত না করে বহু পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ জাতের ধান উদ্ভাবন করতে হবে। এছাড়া মোটা চালের চাহিদা দিন দিন কমছে, সেজন্য চিকন চাল এবং কৃষক ও ভোক্তার চাহিদা বিবেচনা করে জাত উদ্ভাবনে এগিয়ে আসতে হবে।”

ফসল উৎপাদনের পরিসংখ্যান তুলে ধরে রাজ্জাক বলেন, “বিবিএস ও কৃষি বিভাগের পরিসংখ্যান মেলে না। কৃষি সম্প্রসারণের পরিসংখ্যানে মাঠ থেকে ফসল উৎপাদনের প্রকৃত তথ্য উঠে আসছে কিনা সেটা যাচাই করা দরকার।” 

মন্ত্রণালয়, ব্রিসহ অন্যান্য সংস্থাকে উৎপাদনের তথ্য যাচাই করার নির্দেশনা দেন মন্ত্রী।

কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো.  শাহজাহান কবীর। গত এক বছরের গবেষণার অগ্রগতির তথ্য তুলে ধরেন ব্রির পরিচালক (গবেষণা) ড. কৃষ্ণ পদ হালদার। 

এছাড়া গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কমলারঞ্জন দাশ, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মো. সায়েদুল ইসলাম, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এম এ সাত্তার মণ্ডল, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ, সাবেক মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক নাজিরুল ইসলাম, আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ইরি) বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. হোমনাথ ভাণ্ডারি, খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) বাংলাদেশ প্রতিনিধি রবার্ট ডি. সিম্পসন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

ব্রির সাফল্য ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা তুলে ধরে মহাপরিচালক শাহজাহান কবীর বলেন, এখন পর্যন্ত ব্রি ১০৫টি উচ্চফলনশীল জাত ও ২৫০টি লাগসই কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। 

বর্তমান সরকারের সময়ে ব্রি ধানের জাত উদ্ভাবনে বড় সাফল্য পেয়েছে; এই সময়ে ৫৪টি জাত ও ২০০ এর বেশি প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয়েছে।

তিনি জানান, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন অভিঘাত সহনশীল জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনেও গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে ব্রি।

এরই মধ্যে উদ্ভাবন করা হয়েছে লবণাক্ততা সহিষ্ণু ১২টি, খরা সহিষ্ণু ৩টি, জলমগ্নতা সহনশীল ৪টি ও ঠান্ডা সহনশীল ৪টি জাত।

জনগণের পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্রির বিজ্ঞানীরা পুষ্টিসমৃদ্ধ নিরাপদ জাত উদ্ভাবনে বিশ্বের সর্বাধুনিক বায়োফর্টিফিকেশন ও জিএম প্রযুক্তি ব্যবহার করছে বলে জানান শাহজাহান কবীর।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে জিঙ্কসমৃদ্ধ ৫টি ও প্রিমিয়াম গুণসম্পন্ন ১১টি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে।

এছাড়া মুজিব শতবর্ষের উপহার হিসাবে হাইজিংক সমৃদ্ধ ব্রিধান ১০০ কারিগরি কমিটির অনুমোদন শেষে জাতীয় বীজ বোর্ডে অনুমোদনের জন্য জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয় অনুষ্ঠানে।