আধুনিকায়নের মাধ্যমে পাটকল চালু করার দাবি

দেশে শিল্পের প্রসার ও কর্মসংস্থানের কথা ভেবে আধুনিকায়নের মাধ্যমে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো চালু করার দাবি জানিয়েছে পাট-সুতা ও বস্ত্রকল শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Jan 2021, 01:24 PM
Updated : 4 Jan 2021, 01:24 PM

সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে অবিলম্বে পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসার আহ্বান জানানো হয় সংগঠনটির পক্ষ থেকে।

পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ও জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি কামরুল আহসান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “পাট শিল্প নিয়ে পূর্বাপর ভাবনা চিন্তা, গবেষণা, সার্ভে না করে সরকার সমর্থক কতক ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে ও আমলাদের পরামর্শে আকস্মিকভাবে পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”

তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের মহামারীর কারণে বিশ্বব্যাপী পাট ও তুলা জাতীয় পণ্যের ব্যবহার বাড়ছে। ২০২২ সাল থেকে পাট ও তুলা পণ্যের চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। সারা পৃথিবীতে পাটপণ্যের চাহিদা রয়েছে, আর বাংলাদেশ ও ভারত পাট ও পাটপণ্য উৎপাদনকারী প্রধান দুই দেশ।

“ভারতে পাটপণ্যের রপ্তানি ১৬ লাখ মেট্রিক টন থেকে কমে ১১ লাখ মেট্রিক টনে নেমে এসেছে। ভারতের নিজস্ব চাহিদা পূরণ করে রপ্তানি করার সামর্থ নেই। তাই এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে বাংলাদেশকে দ্রুত বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।”

কিন্তু এর বদলে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো বন্ধ করে দিয়ে সরকার ‘আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত’ নিয়েছে বলে মন্তব্য করেন শ্রমিক নেতা কামরুল।

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে গত ১ জুলাই থেকে ‘শতভাগ’ পাওনা বুঝিয়ে দিয়ে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত সব পাটকল বন্ধের ঘোষণা কার্যকর হয়।

সরকারের তরফ থেকে বলা হয়, ধারাবাহিকভাবে লোকসানে থাকা এসব রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের পুঞ্জীভূত দেনা বাড়তে থাকায় বন্ধ করা ছাড়া উপায় ছিল না।

আপাতত বন্ধ রেখে পাটকলগুলো পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় আধুনিকায়ন করে ছয় মাসের মধ্যে নতুন করে চালু করার পরিকল্পনার কথা সে সময় জানানো হয়।   

রাষ্ট্রায়ত্ত ২৬টি পাটকলে ২৪ হাজার ৮৮৬ জন স্থায়ী শ্রমিক ছিলেন, যাদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে অবসরে পাঠানো হয়। শ্রমিকদের শতভাগ পাওনা এককালীন পরিশোধের ব্যবস্থা হয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে।

১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার করিম জুট মিলসের ১ হাজার ৭৫৯ জন শ্রমিকের পাওনা বুঝিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ কার্যক্রম শুরু করে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়।

কামরুল বলেন, “শিল্প ও জাতীয় অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চারের জন্য পাট শিল্পের উৎপাদন বাড়াতে ও রপ্তানির পণ্য তৈরি করতে আগ্রাসী নীতি গ্রহণ প্রয়োজন। এই কাজে ব্যর্থ হওয়ার অর্থ হল দেশের চাহিদা ও রপ্তানির সুযোগ হাতছাড়া করা। এটি হাতছাড়া হলে তা হবে দেশের পাট শিল্পের সাথে জড়িতদের কর্মহীন করা।” 

তার মতে, পাটপণ্য ও সুতা মিলে দেশে ও আন্তর্জাতিক বাজারে ১৫ লাখ মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র নিয়ে বাংলাদেশের এগোনো প্রয়োজন। যার মাধ্যমে নতুন করে দেড় লাখ মানুষের কর্মসংস্থান তৈরির সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে।

তাই পাটকলগুলো আধুনিকায়নের পাশাপাশি ২০১৮ সালে অধিগ্রহণ করা ছয়টি পাটকল ও সাতটি বস্ত্রকল চালু করা এবং রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের পাটকল শ্রমিকদের পাওনা একসাথে পরিশোধ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে।

পাট-সুতা ও বস্ত্রকল শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ও শ্রমিক নেতা সহিদুল্লাহ চৌধুরীসহ পরিষদের নেতাদের মধ্যে আনোয়ার আলী, কিশোর রায়, আসলাম খান সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।